কোপেনহেগেনে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন, ডেনমার্কের উদ্যোগে বাংলাদেশ ও বাঙালির ঐতিহ্যবাহী প্রাণের উৎসব বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশি প্রবাসীরা কর্ম ক্লান্তি ভুলে মেতে ওঠে প্রাণের উচ্ছ্বাসে। সবাই ডেনমার্কের দূরদূরান্তের বিভিন্ন শহর থেকে একত্রিত হয় কোপেনহেগেনের অদূরবর্তী আলবাসলুন্ডে।
বছর ঘুরে বাঙালির কর্মমুখর জীবনে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বৈশাখ নিয়ে আসে নতুন উদ্দীপনা, উৎসব ও প্রাণ চাঞ্চল্য। এই বৈশাখ মাস ঘিরে বাংলাদেশের শহর-নগর, গ্রাম-গ্রামান্তরে উৎসবপ্রিয় বাঙালিরা নানা আয়োজনে মেতে ওঠে। কোথাও বলী খেলা, গরুর লড়াই, মাছের মেলা– কোথাও পিঠা উৎসব বা পুতুল নাচ কিংবা গানের আসর। স্বদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূর প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও বুকের ভেতর লালন করে সেই ফেলে আসা স্বদেশী সংস্কৃতির। তাই, শিকড়ের সন্ধানে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে বসে সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা।
আয়োজনে ছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির নানা ধরনের পিঠা-পুলি, খেলাধুলা ও গানের আসর। সবাই প্রাণভরে উপভোগ করে আম ভর্তা, পাটিসাপটা, ফুচকা, লাড্ডু, দই বড়া, নকশি পিঠা, চমচম, সন্দেশ, রসগোল্লা, ভাপা পিঠা, খাজা, ডাবের পুডিং, চিংড়ি বড়া, ঝালমুড়ি, চটপটি, আনারস মাখাসহ নানা রকমের জিভে জল আনা দেশীয় সংস্কৃতির খাবার।
খাবারের পাশাপাশি চলে বয়সভেদে নানান ধরনের খেলাধুলার প্রতিযোগিতা। তবে, উপস্থিত সবার দৃষ্টি আকর্ষিত হয় শিশু-কিশোরদের দেশীয় সাজের ফ্যাশন শো। যাতে প্রবাসে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি শিশুরা শাড়ি, গহনা, আলতা, নুপুর, গামছা, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি পরে দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি তাদের ভালোবাসার আবেগ প্রকাশ করে। যাতে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি স্থানীয় ডেনিশরা আগ্রহভরে অংশ নিয়ে বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও ক্রীড়াশৈলীর সাথে পরিচিত হয়।
পাশাপাশি বৈশাখী মঞ্চে চলতে থাকে নানান সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও বাংলাগানের পরিবেশন। শুরুতে মঞ্চে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দীন তালুকদার সুমন। সঞ্চালনায় ছিলেন সংবাদকর্মী শহীদুল ইসলাম টিপু।
স্বাগত বক্তব্যর পর অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হয় ১৯৮৬ সাল থেকে ডেনমার্ক প্রবাসী বরিশাল নিবাসী মাহবুব হককে। যিনি দীর্ঘ দিন ধরে ডেনমার্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়নে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক অবদান রাখেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন ছাড়াও ডেনমার্কের রাজনৈতিক দল রেডিক্যাল ভেনেস্ট্রা পার্টি থেকে একাধিকবার স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার প্রমাণ রাখেন।
সন্মাননা প্রদানের পর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ এবং র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন, অ্যাসোসিয়েসনের সভাপতি, ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দীন তালুকদার সুমন, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমিনুল ইসলাম, রফিকুল হক প্রমুখ।
পুরস্কার বিতরণের পর মঞ্চে জমে গানের আসর। এ আসরে বাংলাদেশের লোক সংস্কৃতির নানা জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন ডেনমার্ক ও ইউরোপ মাতানো জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী অনুরাধা ও ওমর ফারুক। গিটারে ছিলেন বিশিষ্ট গিটারিস্ট সেলিম, অক্টোপ্যাড বাজান নেপাল ও সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন শুভ সাব্বির। শিল্পীদের মন মাতানো গানে হল ভর্তি দর্শকরা নেচে-গেয়ে সারাটি সময় অতিবাহিত করেন।
পরে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত গভীর হলে মেলায় অংশ নেওয়া সকল প্রবাসী ও অতিথিদের ধন্যবাদ এবং মেলার সমাপ্তি জানান সভাপতি ওমর ফারুক। তিনি সবাইকে কমিউনিটির মধ্যে সংস্কৃতির বিকাশ ও পারিবারিকভাবে সবাই দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা বাড়ানোর গুরুত্বারোপ করেন। মেলায় সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও তদারকিতে ছিলেন তৌহিদুর রশিদ রিয়াদ, কৃষি বিশেষজ্ঞ বদিউজ্জামান শেখ মামুন, তানভীর রাজু, মিডিয়াকর্মী মাঈনুদ্দিন, অনিক, সরওয়ার সানীল প্রমুখ নেতারা।