ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছে নির্মাতা-অভিনেতা শরাফ আহমেদ জীবন পরিচালিত সিনেমা ‘চক্কর ৩০২’। এটি নির্মিত হয়েছে একটি গোয়েন্দা গল্পের ওপর ভিত্তি করে।
সদ্য কৈশোর পেরোনো তিনজনের একটি বন্ধুমহল—সাদমান, রায়হান ও লিমা। দিনরাত একসঙ্গেই তাদের চলাফেরা। সাদমান আর রায়হানের বন্ধুত্ব ছোটবেলা থেকেই। সময়ের আবর্তে তিনজনই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। এভাবেই চলছিল সব। কিন্তু হঠাৎ একদিন সাদমান খুন হয়। এই ঘটনায় অপর দুই বন্ধু রায়হান ও লিমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা টিম।
এদিকে, রায়হানের বাবা বিখ্যাত অভিনেতা, সুপারস্টার হাসান চৌধুরী। পুলিশ এমন এক তারকার ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে, তাও আবার খুনের মামলায়! বাস্তবজীবনে এমনটা হলে যেমন দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে যেত, পর্দাতেও ঠিক তেমনটাই দেখা যায়। অন্যদিকে, সাদমান কীভাবে খুন হলো? এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত? কেন তারা সাদমানকে খুন করল? এসব রহস্য তদন্ত করতে নেমে ভয়ঙ্কর এক চক্রের খোঁজ পায় গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইনসপেক্টর মঈনুল, যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম।
চলতে থাকে সাদমান খুনের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা। ইনসপেক্টর মঈনুলের সহকারীর ভূমিকায় থাকে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা সজীব। বলতে গেলে তারা দুজন ছায়াসঙ্গী! একে অপরের বিশ্বস্ত। পর্দায় সজীবের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শাশ্বত দত্ত।
একপর্যায়ে সজীবও খুনের শিকার হয়, যা ইনসপেক্টর মঈনুলকে একদিকে একাকী, অন্যদিকে আরও আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলে। সজীবের খুন হওয়ার ঘটনায় বিষাদ ছুঁয়ে যায় দর্শকের মনেও। এদিকে, সাদমান হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে আরও মরিয়া হয়ে উঠে মঈনুল। কেঁচো খুড়তে যেন সাপ বেরিয়ে আসছে!
গোয়েন্দা গল্পটি বেশ নিপুণভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন নির্মাতা শরাফ আহমেদ জীবন। নিখাদ এক সিনেমা, শেষটাও চমৎকার! যদিও দর্শকের মনে শেষ পর্যন্ত এই প্রশ্ন থেকেই যেতে পারে যে, পরবর্তীতে কি চক্কর-এর সিক্যুয়েল আসবে? ইনসপেক্টর মঈনুল যে চক্করে পড়েছেন, সেটার কি সমাপ্তি হবে?
পর্দায় আন্ডারওয়ার্ল্ড সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য ‘গন্ডার বাবু’। এই চরিত্রে নির্মাতা-অভিনেতা সুমন আনোয়ারের পারফরম্যান্স দর্শকের মনে গেঁথে থাকবে।
এর আগে মোশাররফ করিমকে বড় ক্যানভাসে গোয়েন্দা পুলিশের ভূমিকায় দেখা গেছে নির্মাতা আশফাক নিপুণের ওয়েব সিরিজ ‘মহানগর’-এ। কিন্তু চক্কর-এ ইনসপেক্টর মঈনুল চরিত্রটি এর থেকে ভিন্ন এবং বিপরীতমুখী। বরাবরের মতো এতেও দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন তিনি।
এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের শিকার সাদমানের মায়ের ভূমিকায় রয়েছেন মৌসুমী নাগ। অন্যদিকে, অভিযুক্ত রায়হানের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিন জাহান। মায়ের ভূমিকায় এই দুই অভিনেত্রীই সহজাত অভিনয় করেছেন। অন্যান্য ভূমিকায় ইন্তেখাব দিনার, রিকিতা নন্দিনী শিমু, রওনক হাসান, সারা আলম, আরিয়ান সরোয়ার, ফারজানা বুশরাসহ সবাই ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত।
প্রথমদিকে সিনেমাটির সাদামাটা শুরু হলেও, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দর্শকের মনে বেশ ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করতে থাকে। সিনেমাটোগ্রাফির কারিকুরি চোখে পড়ে। আবহসংগীতও দর্শকের মনে প্রলেপ তৈরি করে।
এ ছাড়া সিনেমাটির সংলাপ রচনার ক্ষেত্রে শরাফ আহমেদ জীবনের মুনশিয়ানা তারিফ করার মতো। বিশেষ করে ‘বাদাম খাইলে বুদ্ধি বাড়ে না, বুদ্ধি বাড়ে উষ্ঠা খাইলে’ সংলাপটি তো যাঁরা দেখেছেন, সবার মুখে মুখে! এ ছাড়া এই ছবিতে কাজল দেওয়ানের গাওয়া ‘কাউয়ায় কমলা খাইতে জানে না’ গানটি ইতিমধ্যে ভাইরাল।
সব মিলিয়ে, ২ ঘণ্টা ২২ মিনিটের চক্কর দেখলে মনেই হয় না যে, এটি সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমা কিংবা শরাফ আহমেদ জীবন পরিচালিত প্রথম সিনেমা! শক্তিশালী একটি গল্পকে পর্দায় সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছেন নির্মাতা।