লোভ–লালসা মানুষের অন্তর্নিহিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। কথায় আছে, ‘সুযোগের অভাবে সৎ’! তাহলে সুযোগ পেলে আসলে কী হয়? সততা হয়তো তখন নির্বাসনে যায়। কিন্তু কতদিনের জন্য? ধরুন, অল্পদিনের জন্যই গেল। চিপায় পড়ে সততাকে আবার নির্বাসন থেকে ফিরিয়েও আনা হলো। তাই বলে কি সেই সততা শতভাগ খাঁটি আর থাকে?
এসব প্রশ্ন উঠে যায় ‘জিম্মি’ দেখার পর। ঈদের কনটেন্ট হিসেবে সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই মুক্তি দিয়েছে এই সিরিজ। গল্প, সংলাপ ও পরিচালনায় ছিলেন আশফাক নিপুণ। ‘মহানগর’ দিয়ে এর আগেই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন নিপুণ। ফলে পরিচালকের নামটিই এই সিরিজ দেখার আগ্রহ জাগানোর জন্য ছিল যথেষ্ট।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বয়ানে ‘জিম্মি’ একটি মিস্ট্রি ড্রামা। প্রথম সিজনে পর্ব মোট ৭টি। এর গল্প নিয়ে হইচই লিখেছে, ‘ব্যক্তিগত জীবনের অশান্তি ও সংসারে টানাটানি নিয়ে জীবন নির্বাহ করতে থাকা নিম্নপদস্থ সরকারী কর্মচারী রুনা লায়লার জীবন ওলট-পালট হয়ে যায় অফিসের স্টোররুমে মোটা অঙ্কের টাকা ভর্তি একটি বাক্স আবিষ্কার করার পর। সে কি লোভের কাছে নতি স্বীকার করবে নাকি অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সত্য প্রকাশ করবে?’
প্রথম পর্বেই রুনার জীবনের টানাটানির সঙ্গে সঙ্গে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের প্রাপ্তিও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে এই টানাটানির চিত্রটা মূলত বিলাসদ্রব্য সংশ্লিষ্ট। মোটা দাগে এ দেশের মধ্যবিত্তের চিরন্তন সংকটও এটি বটে। সেই না পাওয়ার অভাব পূরণ করতেই টাকা ভর্তি বাক্সে হাত গলায় রুনা। লোভ তখন তাকে একেবারে পেয়ে বসেছে। অনেকটা ‘সুযোগের অভাবে সৎ’ শীর্ষক বাক্যটিকে সত্য প্রমাণিত করেই। অবশ্য কথায় তো এও আছে যে, ‘লোভে পাপ, আর পাপে…।’
লোভের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এরপর রুনার জীবনে চলে আসে ভোগান্তি। অন্যের কালো টাকা যখন নিজের ঘরে আসে, তখন টাকার সঙ্গে কালো মেঘও আসে। অসৎ অন্যরাও কি আর ছেড়ে দেবে! সুতরাং শুরু হয় পুরোনো ও নব্য অসততার মধ্যকার দড়ি টানাটানি। হঠাৎ বিনা আয়াসে পাওয়া টাকা খরচে কষ্ট অনুভবও হয় না। তাই রুনার তথাকথিত ফুটানিও বাড়ে। এতে আবার কালো টাকার প্রকৃত মালিকদেরও চোখ টাটায়। শুরু হয় এক জটিল চক্রে রুনার আবর্তন।

এই পুরো গল্প আসলে চলেছে ২০২৪ সালের মধ্য–জুলাই থেকে আগস্টের শুরুর মধ্যে। ফিকশন হলেও ওই সময়কার বাংলাদেশের বাস্তবতাও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা ছিল নির্মাতার। ফলে আন্দোলন, অভ্যুত্থান, পটপরিবর্তন সংক্রান্ত নানা ঘটনাকে প্রতীকীভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেই সঙ্গে কিছু প্রশ্নও ওঠে। যেহেতু একটি কল্পিত গল্পের (এমন বাস্তবতাও যে নেই, সেটিও অস্বীকার করা যাবে না) মধ্যে নিকট অতীতে ঘটে যাওয়া জাতীয় ঘটনার প্রেক্ষাপটকে হাজির করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে দেশের ওই পরিস্থিতিতে কোনো নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারের পক্ষে বিমানে করে প্রমোদভ্রমণ করার মতো পরিস্থিতি ছিল কিনা, সেই সংশয় প্রবলভাবেই ওঠে। হ্যাঁ, একটি দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ফাঁকে–ফোঁকরে অন্য অনেক কিছুই হয়। জীবন তো আর থেমে থাকে না। কিন্তু সেটিরও কিছুটা হলেও অস্বাভাবিক রূপ দৃশ্যমান হয় বটে। এই বিষয়টিরই ঘাটতি ছিল ‘জিম্মি’তে।
এই সিরিজে অভিনয়ে ছিলেন জয়া আহসান, ইরেশ যাকের, শাহরিয়ার নাজিম, প্রান্তর দস্তিদার প্রমুখ। রুনা লায়লা নামের প্রধান চরিত্রে জয়া বিশ্বাসযোগ্য ছিলেন। যেহেতু তাঁর চরিত্রের ব্যাপ্তিও বেশি ছিল, ফলে এই শিল্পীর ৭ পর্বজুড়েই ক্ষুরধার পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা অতীব প্রয়োজন ছিল। সেই পরীক্ষায় জয়া উৎরে গেছেন ভালোভাবেই। এটি প্রত্যাশিতই ছিল। এর বাইরে ইরেশ যাকেরের অভিনয় ছিল মনোমুগ্ধকর। শাহরিয়ার নাজিম জয়ও ছিলেন নিখুঁত। অন্তত অভিনয়ের দিক থেকে ‘জিম্মি’ সিরিজে কখনোই তাল কেটে যায়নি। ভারসাম্য ছিল বেশ।

ক্যামেরার কাজ ও আবহসংগীতেও বেশ সড়গড় ‘জিম্মি’। ৭ পর্বের সিরিজের প্রতিটি পর্বের দৈর্ঘ্য ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই। গল্পের দীর্ঘসূত্রিতার দোষ এতে নেই। অনায়াসেই দেখে ফেলা যায়, ক্লান্তি জাগায় না।
হইচই এই সিরিজকে মিস্ট্রি ড্রামা বললেও, তাতে জোরেশোরেই আপত্তি জানানো যায়। একে বরং স্যাট্রিকাল ড্রামা বললেই যুক্তিযুক্ত হতো। হাস্যরসের আবহেই পুরো সিরিজটি তৈরি। সেক্ষেত্রে ‘জিম্মি’ কীভাবে মিস্ট্রি ড্রামা, সেই বিস্ময়সূচক প্রশ্নটি উঠলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
দেশের জাতীয় পটপরিবর্তনের বাস্তব ঘটনার সাথে ‘জিম্মি’র যবনিকা পতনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ওতেই যে রুনা পেয়ে যায় জিম্মিদশা থেকে মুক্তির চাবি। সেই হঠাৎ পাওয়া সুযোগ কাজেও লাগায় রুনা। ঠিক এই লেখার শুরুর মতো করে, কোণঠাসা অবস্থায় গিয়ে রুনার অনুভব হতে থাকে লোভের করাল গ্রাসে হারিয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা। সততা তখন ফিরে আসার পথ খোঁজে।
‘জিম্মি’ তাই আমাদের চেনা গল্পই বলে। এই চেনাজানায় আশা থাকে, থাকে হতাশাও। সেই সঙ্গে এই প্রশ্নও ওঠে যে, একদা জিম্মি থাকা মানুষেরা আসলে সময়ের পরিক্রমায় কার জিম্মায় যায়? ক্রমান্বয়ে হাত বদলের ব্যবস্থারই কি?
রেটিং: ৩.৯০ / ৫.০০
এসব প্রশ্ন উঠে যায় ‘জিম্মি’ দেখার পর। ঈদের কনটেন্ট হিসেবে সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই মুক্তি দিয়েছে এই সিরিজ। গল্প, সংলাপ ও পরিচালনায় ছিলেন আশফাক নিপুণ। ‘মহানগর’ দিয়ে এর আগেই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন নিপুণ। ফলে পরিচালকের নামটিই এই সিরিজ দেখার আগ্রহ জাগানোর জন্য ছিল যথেষ্ট।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বয়ানে ‘জিম্মি’ একটি মিস্ট্রি ড্রামা। প্রথম সিজনে পর্ব মোট ৭টি। এর গল্প নিয়ে হইচই লিখেছে, ‘ব্যক্তিগত জীবনের অশান্তি ও সংসারে টানাটানি নিয়ে জীবন নির্বাহ করতে থাকা নিম্নপদস্থ সরকারী কর্মচারী রুনা লায়লার জীবন ওলট-পালট হয়ে যায় অফিসের স্টোররুমে মোটা অঙ্কের টাকা ভর্তি একটি বাক্স আবিষ্কার করার পর। সে কি লোভের কাছে নতি স্বীকার করবে নাকি অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সত্য প্রকাশ করবে?’
প্রথম পর্বেই রুনার জীবনের টানাটানির সঙ্গে সঙ্গে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের প্রাপ্তিও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে এই টানাটানির চিত্রটা মূলত বিলাসদ্রব্য সংশ্লিষ্ট। মোটা দাগে এ দেশের মধ্যবিত্তের চিরন্তন সংকটও এটি বটে। সেই না পাওয়ার অভাব পূরণ করতেই টাকা ভর্তি বাক্সে হাত গলায় রুনা। লোভ তখন তাকে একেবারে পেয়ে বসেছে। অনেকটা ‘সুযোগের অভাবে সৎ’ শীর্ষক বাক্যটিকে সত্য প্রমাণিত করেই। অবশ্য কথায় তো এও আছে যে, ‘লোভে পাপ, আর পাপে…।’
লোভের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এরপর রুনার জীবনে চলে আসে ভোগান্তি। অন্যের কালো টাকা যখন নিজের ঘরে আসে, তখন টাকার সঙ্গে কালো মেঘও আসে। অসৎ অন্যরাও কি আর ছেড়ে দেবে! সুতরাং শুরু হয় পুরোনো ও নব্য অসততার মধ্যকার দড়ি টানাটানি। হঠাৎ বিনা আয়াসে পাওয়া টাকা খরচে কষ্ট অনুভবও হয় না। তাই রুনার তথাকথিত ফুটানিও বাড়ে। এতে আবার কালো টাকার প্রকৃত মালিকদেরও চোখ টাটায়। শুরু হয় এক জটিল চক্রে রুনার আবর্তন।

এই পুরো গল্প আসলে চলেছে ২০২৪ সালের মধ্য–জুলাই থেকে আগস্টের শুরুর মধ্যে। ফিকশন হলেও ওই সময়কার বাংলাদেশের বাস্তবতাও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা ছিল নির্মাতার। ফলে আন্দোলন, অভ্যুত্থান, পটপরিবর্তন সংক্রান্ত নানা ঘটনাকে প্রতীকীভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেই সঙ্গে কিছু প্রশ্নও ওঠে। যেহেতু একটি কল্পিত গল্পের (এমন বাস্তবতাও যে নেই, সেটিও অস্বীকার করা যাবে না) মধ্যে নিকট অতীতে ঘটে যাওয়া জাতীয় ঘটনার প্রেক্ষাপটকে হাজির করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে দেশের ওই পরিস্থিতিতে কোনো নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারের পক্ষে বিমানে করে প্রমোদভ্রমণ করার মতো পরিস্থিতি ছিল কিনা, সেই সংশয় প্রবলভাবেই ওঠে। হ্যাঁ, একটি দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ফাঁকে–ফোঁকরে অন্য অনেক কিছুই হয়। জীবন তো আর থেমে থাকে না। কিন্তু সেটিরও কিছুটা হলেও অস্বাভাবিক রূপ দৃশ্যমান হয় বটে। এই বিষয়টিরই ঘাটতি ছিল ‘জিম্মি’তে।

ক্যামেরার কাজ ও আবহসংগীতেও বেশ সড়গড় ‘জিম্মি’। ৭ পর্বের সিরিজের প্রতিটি পর্বের দৈর্ঘ্য ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই। গল্পের দীর্ঘসূত্রিতার দোষ এতে নেই। অনায়াসেই দেখে ফেলা যায়, ক্লান্তি জাগায় না।
হইচই এই সিরিজকে মিস্ট্রি ড্রামা বললেও, তাতে জোরেশোরেই আপত্তি জানানো যায়। একে বরং স্যাট্রিকাল ড্রামা বললেই যুক্তিযুক্ত হতো। হাস্যরসের আবহেই পুরো সিরিজটি তৈরি। সেক্ষেত্রে ‘জিম্মি’ কীভাবে মিস্ট্রি ড্রামা, সেই বিস্ময়সূচক প্রশ্নটি উঠলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
দেশের জাতীয় পটপরিবর্তনের বাস্তব ঘটনার সাথে ‘জিম্মি’র যবনিকা পতনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ওতেই যে রুনা পেয়ে যায় জিম্মিদশা থেকে মুক্তির চাবি। সেই হঠাৎ পাওয়া সুযোগ কাজেও লাগায় রুনা। ঠিক এই লেখার শুরুর মতো করে, কোণঠাসা অবস্থায় গিয়ে রুনার অনুভব হতে থাকে লোভের করাল গ্রাসে হারিয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা। সততা তখন ফিরে আসার পথ খোঁজে।
‘জিম্মি’র শেষ সংলাপ হলো—‘যদি থাকে নসিবে, এমনি এমনি আসিবে’! সেই সঙ্গে থাকে রুনার তৃপ্ত মুখভঙ্গি। সততার তখন আবার ‘বাই বাই’ দশা। কারণ কালোর জগত থেকে কেউ কেউ নির্বাসিত হলেও, নতুনের আগমন যে থেমে থাকে না। সেই ‘নতুন’ কি তবে রুনাই হবে? কারণ কতিপয়ের কাছে যে কারণে জিম্মি হয়েছিল রুনা, সেই কারণ সৃষ্টিকারী কর্তাটিকে যে ছাড়তে চায় না সে। সোনার পাথরবাটি পেলে কে আর ছাড়ে, বলুন? তবে হ্যাঁ, নসিবের ঘাড়ে অজুহাত চাপিয়ে মানসিক দায়মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা তো করাই যায়!
‘জিম্মি’ তাই আমাদের চেনা গল্পই বলে। এই চেনাজানায় আশা থাকে, থাকে হতাশাও। সেই সঙ্গে এই প্রশ্নও ওঠে যে, একদা জিম্মি থাকা মানুষেরা আসলে সময়ের পরিক্রমায় কার জিম্মায় যায়? ক্রমান্বয়ে হাত বদলের ব্যবস্থারই কি?
রেটিং: ৩.৯০ / ৫.০০
পরিচালক: আশফাক নিপুণ
অভিনয়শিল্পী: জয়া আহসান, ইরেশ যাকের, শাহরিয়ার নাজিম জয়, রাফিউল কাদের রুবেল, প্রান্ত দস্তিদার, মাহমুদ আলম, অশোক ব্যাপারী, আরফান মেধা শিবলু প্রমুখ
ধরন: হাস্যরস-রহস্য
ভাষা: বাংলা
মুক্তি: ২৮ মার্চ ২০২৫/হইচই
অভিনয়শিল্পী: জয়া আহসান, ইরেশ যাকের, শাহরিয়ার নাজিম জয়, রাফিউল কাদের রুবেল, প্রান্ত দস্তিদার, মাহমুদ আলম, অশোক ব্যাপারী, আরফান মেধা শিবলু প্রমুখ
ধরন: হাস্যরস-রহস্য
ভাষা: বাংলা
মুক্তি: ২৮ মার্চ ২০২৫/হইচই