ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পাহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের ওপর হামলায় নিহত বেড়ে অন্তত ২০ জন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে পর্যটকদের টার্গেট করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় একদল ‘সন্ত্রাসী’। এতে অনেকে আহত হয়েছেন। এরই মধ্যে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার স্থানীয় শাখা দ্য রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।
তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে ২৬ জন নিহতের তথ্য জানানো হয়। আরেক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, ২০ জনের বেশি মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে, ঘটনার পরপরই ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কাশ্মীরে যেতে বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি সৌদি আরব থেকে ফোনে এই নির্দেশ দেন। এরই মধ্যে অমিত শাহ শ্রীনগরের উদ্দেশে রওনাও হয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, হামলার স্থান থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রক্ত এবং কয়েকজন নারী যন্ত্রণায় কাঁদছেন। স্থানীয়রা তাদের সাহায্যের জন্য ছুটে আসছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা খুব কাছ থেকে পর্যটকদের ওপর গুলি চালায়, যার ফলে অনেকে আহত হয়।
বৈসরন পাহেলগাম পাহাড়ি স্টেশন থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং কেবল পায়ে হেঁটে অথবা ঘোড়ার গাড়িতে করেই সেখানে পৌঁছানো যায়। হামলার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী এলাকাটি ঘিরে ফেলে।
জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা এক প্রতিক্রিয়ায় মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে লিখেছেন, ‘পাহেলগামে ভর্তিদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আহত একজন পর্যটককে অনন্তনাগে জিএমসিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। আমি সকল আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’
জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রধান মেহবুবা মুফতি এই হামলার নিন্দা করে বলেন, ‘পাহেলগামে পর্যটকদের ওপর কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই, যেখানে মর্মান্তিকভাবে একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এই ধরনের সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য এবং এর নিন্দা করা উচিত।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে কাশ্মীর পর্যটকদের স্বাগত জানিয়ে আসছে। এই বিরল ঘটনাটিকে তাদেরকে গভীরভাবে উদ্বেগজনক করে তুলেছে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা এবং সম্ভাব্য নিরাপত্তা ত্রুটি পরীক্ষা করার জন্য একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত প্রয়োজন। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ভবিষ্যতের আক্রমণ প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য সমবেদনা।’
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বেশ কয়েক জন পর্যটক ট্রেকিং করছিলেন। সেই সময় তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়। পর্যটকদের ভিড়ে মিশে ছিল হামলাকারীরা। এই ঘটনার পরই সেনা এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, আহতদের মধ্যে তিনজন স্থানীয় এবং তিনজন রাজস্থানের।
জম্মু ওকাশ্মীরের আকর্ষণীয় পর্যটনস্থলগুলোর মধ্যে বেশ জনপ্রিয় পাহেলগাম। প্রতি বছর সেখানে প্রচুর পর্যটক বেড়াতে আসেন। পুলিশ বলছে, এক দল পর্যটক ট্রেকিং করছিলেন। সেই দলটিকেই নিশানা করে হামলাকারীরা। তবে তারা সংখ্যায় কত জন ছিল, তা জানা যায়নি। আগামী জুলাইয়ে অমরনাথ যাত্রা শুরু হচ্ছে। পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পুরোদস্তুর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। তার আগেই পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে।