সেকশন

বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
Independent Television
 

দাম হু হু করে বাড়লেও সোনা কেনায় এগিয়ে এশীয়রা

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৬ পিএম

গত কয়েক বছর ধরে ঘন ঘন বাড়ছে-কমছে সোনার দাম। পরিস্থিতি এমন যে, সকালে বাড়ল তো বিকেলে কমল! তবে এক লাফে যতটা বাড়ে, গড়ে কমে তার চেয়ে কম। এরপরও অনেক দেশেই কমছে না সোনার চাহিদা।

গত ২ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা মাত্রায় উচ্চ শুল্ক ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে থেকেই সোনার বাজার চড়া ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার পর সোনার দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে। গত ১১ এপ্রিল প্রতি ট্রয় আউন্স (৩১ দশমিক ১০৩৫ গ্রাম) ৩ হাজার ২০০ ডলারের বেশি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৭৮৪ টাকা। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) তথ্য অনুযায়ী, ২৩ এপ্রিল ২২ ক্যারেটের সোনার দাম ভরিপ্রতি ১ লাখ ৭২ হাজার ৪৮৬ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড। আর ২১ ক্যারেটের সোনার দাম ভরিপ্রতি ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৯ টাকা। 

ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনিমস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, হু হু করে সোনার দাম বাড়লেও পণ্যটির কদর কমছে না। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সোনা কেনে ভারতের মানুষ। সোনার দামে নিত্যনতুন রেকর্ড মোকাবিলায় দেশটির বিক্রেতারা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। ভারতের নামী অলংকারের ব্র্যান্ড তানিষ্ক পুরোনো সোনার বদলে নতুন নকশার অলংকার বেচার কৌশল নিয়েছে। এই কৌশল বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। মুম্বাইয়ে তানিষ্কের শোরুমের সাম্প্রতিক একটি বিজ্ঞাপনের ভাষা ছিল এমন, ‘স্বপ্ন পূরণের দিনে দামের চিন্তা বাদ দিন, চলছে বিনিময়ের উৎসব’। 

২০২৪ সালে বছরজুড়ে সোনার দাম বেড়েছে। এরপরও ভারতে সোনার চাহিদা স্থিতিশীল ছিল। কোটাক সিকিউরিটিজের ব্রোকার অনিন্দ্য ব্যানার্জির মতে, ‘সোনার দামের ওঠা-নামা নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই। আর লক্ষ্য করার মতো বিষয় হলো, সোনার দামে বড় ধরনের কোনো পতন কিন্তু হচ্ছে না।’

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলে তথ্য অনুযায়ী, দাম বেশি হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয়রা এখনো বিয়েসহ নানা ধরনের উৎসব উপলক্ষে সোনা কেনা অব্যাহত রেখেছে। সোনা বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়ার প্রবণতাও কমেনি। 

গত বছর ভারতের মানুষ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ৫৬০ টন সোনার অলংকার কিনেছেন। চীনের মানুষ কিনেছেন ৫১০ টন। একই বছর ভারতীয়রা সোনার বার কিনেছেন ২৪০ টন। সোনার বার কেনায় চীনারা এগিয়ে, তারা কিনেছে ৩৪৫ টন। থাইল্যান্ডে ২০২৪ সালে সোনার প্রতি চাহিদা ১৭ শতাংশ বেড়ে ৪০ টনে পৌঁছেছে। ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামেও সোনার চাহিদা বেড়েছে। গত বছর সোনার গয়না ও সোনার বারের বৈশ্বিক চাহিদার ৬৪ দশমকি ৫ শতাংশ ছিল এশিয়ায়। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোনা কেনার হিসাব ধরা হয়নি। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ এশিয়াতে থাকলেও ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় এই অঞ্চলের মানুষের মাথাপিছু আয় অনেক কম।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সোনা কেনে ভারতের মানুষ। ছবি: রয়টার্সএশিয়ায় বিয়ে, জন্মদিনসহ নানা ধরনের উৎসব উপলক্ষে মানুষ সোনা কেনে। শুধু ভারতের ১ কোটি বিয়ের বাজারেই বছরে ৩০০-৪০০ টন সোনা বিক্রি হয়। চীনের ক্ষেত্রেও একই কথা। কিন্তু শুধু সংস্কৃতি নয়, এশিয়াতে সোনার চাহিদা বৃদ্ধিতে অর্থনৈতিক বাস্তবতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

আমেরিকার মতো দেশেও সোনা কেনার হিড়িক পড়ে গেছে। ২০২০ সালের মার্চে করোনো মহামারির সময়ের তুলনায় গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে মার্কিনিরা বেশি হারে সোনা কিনছেন। বিশ্বের সব দেশের মানুষ সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ ও মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে ঢাল মনে করে বলা যায়। তবে এশিয়ায় এই বাস্তবতা আরও প্রবল। 

ভারত ও চীনে বিনিয়োগের স্বাধীনতা সূচক খুব একটা আশাব্যাঞ্জক নয়। এসব দেশে পুঁজিকে নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নাগরিকদের বিদেশে বিনিয়োগ করা বেশ কঠিন। ভারতে সম্প্রতি বিনোয়োগ বেড়েছে। কিন্তু তারপরও দেশটির সাধারণ মানুষ পুঁজিবাজারের শেয়ার কেনার চেয়ে সোনা কেনায় বেশি বিনিয়োগ করে। সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতের ৬ শতাংশ পরিবার পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলেও সোনা কেনে প্রায় ১৫ শতাংশ পরিবার।  

চীনে দেশীয় বিনিয়োগ ভারতের চেয়েও কঠিন। কারণ, সবখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ। কোনো কোনো খাতে ব্যক্তি মালিকানার বিনিয়োগ নিষিদ্ধ। দেশটির আবাসন খাত ও পুঁজিবাজারের অবস্থা বেশ নড়বড়ে। এসব কিছুর কারণে দাম বাড়তে থাকলেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে সোনায় বিনিয়োগ বেড়েছে। 

সোনার বার কেনায় চীনারা এগিয়ে। ছবি: রয়টার্সএশিয়ার অনেক দেশ এখনো ব্যাংকে অর্থ রাখার চেয়ে অল্প অল্প সোনা কেনাকে বুদ্ধিমানের কাজ মনে করে। এই অঞ্চলের অনেক দেশেই পেনশন ব্যবস্থা নেই, বা থাকলেও তা অপ্রতুল। ফলে তারা সোনাকে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা মনে করে। এই সব দেশের নারীরা, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, সোনাকে নিজেদের আর্থিক স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দেখে। কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা খারাপ সময়ে নগদ টানাপোড়েন মেটাতে সোনা বিক্রি বা বন্ধক রাখে। ভারতের জমির কাগজপত্র অনেক ক্ষেত্রে জাল হয়ে থাকে, মর্টগেজ ব্যবস্থাও ভালো নয়, তাই বন্ধকের বিনিময়ে অর্থ পাওয়ার জন্য সোনা বেশি জনপ্রিয়।

অর্থনীতিবিদেরা বারবার শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন, সোনায় এত বিনিয়োগ হলে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ কমে যায়। এতে করে জাতীয় অর্থনীতিকে মাশুল গুনতে হয়। আর সোনার মতো দামী পণ্য আমদানির কারণে ভারতের মতো দেশের বাণিজ্য ঘাটতিও বাড়ে। শুধু সোনা আমদানিতেই ২০২৪ অর্থবছরে ভারতের ব্যয় হয়েছে ৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা দেশটির চলতি হিসাবের ঘাটতির দ্বিগুণের কাছাকাছি। 

ভারতসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সরকার চাইলে সোনা কেনা নিরুৎসাহিত করতে পারে। কিন্তু তাতে চোরাচালানসহ অন্যান্য সমস্যা বাড়বে। তবে সরকার আন্তরিক হলে নীতিমালা সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে এশিয়ার মানুষের মধ্যে সোনার প্রতি আকর্ষণ কমতে পারে। এসব রাতারাতি সম্ভব না হলেও এখনই উদ্যোগ নিলে ভবিষ্যতে হয়তো প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যেতে পারে।

তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, বাজুস, বিবিসি, রয়টার্স

দুই দশক আগে বুরাইদাহ শহর ছিল সৌদি আরবের রক্ষণশীলতার প্রতীক। তখন সেখানে ধর্মীয় পুলিশ রাস্তায় টহল দিত, নিশ্চিত করত যেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় দোকানপাট বন্ধ থাকে, নারীরা পুরুষ অভিভাবক ছাড়া ঘর থেকে না...
দক্ষিণ এশিয়ার এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়া পাকিস্তান তার সামরিক বাহিনীর জন্য ৮১ শতাংশ অস্ত্র কেনে চীন থেকে। গত ৫ বছর ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। আর ভারত? ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় অস্ত্রক্রয়কারী দেশ। দেশটি...
জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এই উত্তেজনা সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কাও বাড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ...
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের জনপ্রিয় পর্যটনস্থল পাহেলগামে ঘটে যায় এক মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলা। যেখানে নিহত হন অন্তত ২৬ জন, যাদের মধ্যে ২৫ জন ছিলেন ভারতীয় পর্যটক এবং একজন...
ঘরোয়া ফুটবলে ট্রফিশূন্য এক মৌসুম কাটালো রেয়াল মাদ্রিদ। সে ধাক্কায় এরই মধ্যে বিদায় নেওয়া পাকা হয়েছে কোচ কার্লো আনচেলত্তির। দলবদলের বাজার শুরু হওয়ার আগেই লিভারপুল থেকে ট্রেন্ট আলেক্সাজান্ডার আরনল্ড ও...
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.