দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তির এক মাস পর লক্ষ্মীপুরে গ্রামের বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরেছেন ‘এমভি আব্দুল্লাহ’ জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান। তিনি বলেন, ‘জিম্মি দশা থেকে বেঁচে আসব কখনও ভাবিনি’। মঙ্গলবার রাতে বাড়ি ফিরে এসব কথা বলেন এই নাবিক।
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে 'এমভি আব্দুল্লাহ' নামক জাহাজের ২৩ নাবিক জিম্মি হওয়ার পর অবশেষে এক মাস আগে মুক্তি পেলেও গতকাল দেশে ফিরেছেন জাহাজের নাবিকরা।
এসব নাবিকের একজন হলেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার রাখালিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান। রাতেই বাড়ি ফিরেছেন তিনি। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সুস্থভাবে তার বাড়ি ফেরার ঘটনায় এখন মহা-খুশি পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী।
বাড়ি ফিরে অপহরণ ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন নাবিক আইয়ুব খান। তিনি জানান, ১২ মার্চ হঠাৎ জাহাজে আক্রমণ করে দস্যুরা (প্রথমে ১৩ জন ও পরে আরো বাড়ে দস্যুর সংখ্যা)। এসময় সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। এরপর জাহাজের মালিকপক্ষের কাছে মুক্তিপণ দাবী করে। সবার কাছ থেকে মুঠোঢোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। এসময় একরুমে সবাইকে জিম্মি রেখে নোংরা পরিবেশে নির্যাতন করতো দস্যুরা। পুরো সময় ভয় উৎকন্ঠায় ছিলাম।
আইয়ুব আরও জানান, পরে মুক্তিপণ নিয়ে ১৪ এপ্রিল রাত ১২ টা ৮ মিনেটে আমাদের ছেড়ে দেয় তারা। ওইদিন মোটা অংকের মুক্তিপণ দেয়ার পর জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাই। এসময় নৌ বাহিনীর স্কটে হাই রিস্ক এরিয়া পার করে দেয়। পরে দুবাই হয়ে দেশে ফিরেন।
এদিকে সন্তানকে ফিরে ফেয়ে মহা-খুশি তার মা হুমায়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘খানাপিনা ছেড়ে কান্নাকাটিতে ছিলাম, আল্লাহর কাছে শুধু একটাই চাওয়া ছিল আমার বাবাকে সুস্থভাবে আমার কোলে ফিরিয়ে দেন। এখন খুব খুশি লাগছে।’
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে কয়লাবোঝাই এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করে সোমালি জলদস্যুরা। এ সময় জাহাজটিতে থাকা ২৩ বাংলাদেশি নাবিককেও জিম্মি করা হয়। নাবিকদের উদ্ধারে নানা চেষ্টা করা হয়। চলে কূটনৈতিক তৎপরতাও। কিন্তু অগ্রগতি আসতে সময় লাগছিল।
জাহাজটির জিম্মি নাবিকদের ঈদও কাটে বন্দী দশায়। তবে তাঁদের ঈদের দিন ভালো খাবার দেওয়া হয় বলে খবর পাওয়া গিয়েছিল।
গত ১৩ এপ্রিল দিবাগত মধ্যরাতে ২৩ নাবিকসহ সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্তি পায় এমভি আবদুল্লাহ। পরের দিন দুপুরে মুক্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান।