নিখুঁত নির্মাণের জন্য সুনাম রয়েছে নির্মাতা স্ট্যানলি কুবরিকের। তবে ‘আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’র শুটিং চলাকালে হুইলচেয়ারে বারবার উঠবস করানোর পর তাঁর সম্পর্কে অভিনেতা ডেভিড প্রুসের মন্তব্য ছিল—‘‘পরিচালক ঠিক ‘ওয়ান-টেইক কুবরিক’ নন।’’ আবার ‘জোডিয়াক’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে ডেভিড ফিঞ্চার বারবার একই দৃশ্য শুটের কারণে অভিনেতা জ্যাক গিলেনহাল এই কাজটিই নাকি প্রায় হারাতে বসেছিলেন! ফিঞ্চার কিংবা কুবরিক, যাঁরা কিনা পারফেকশনিস্ট হিসেবে পরিচিত, দৃশ্য পুনর্নির্মাণের জন্য তাঁরা বেশ কয়েকবারই খবরের শিরোনাম হয়েছেন।
তবে এই পুনরাবৃত্তিমূলক শুটের ধারণা আরও অনেক আগেই দেখিয়েছেন নির্বাক যুগের কিংবদন্তি চার্লি চ্যাপলিন। ১৯৩১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সিটি লাইটস’র একটি দৃশ্য তিনি শুট করেছিলেন ৩৪২ বার! আজ এই কিংবদন্তির জন্মবার্ষিকীতে জেনে নেওয়া যাক সেই গল্প।
সিটি লাইটস ছবিতে যুগান্তকারী দ্য ট্রাম্পের ভূমিকায় ছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। যেখানে তিনি একজন অন্ধ ফুলওয়ালীর (ভার্জিনিয়া চেরিল) প্রেমে পড়েন, তার চোখের চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসেন। কিন্তু মেয়েটি তাকে অত্যন্ত ধনী ব্যক্তি ভেবে ভুল করে! সিনেমাটি বেশ আবেগপ্রবণ এবং রোমান্টিক কমেডি ঘরানার।
যখন এ সিনেমা নির্মিত হচ্ছিল, হলিউডে তখন ইতিমধ্যেই ‘সিঙ্ক্রোনাইজড সাউন্ড’র ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। অর্থাৎ নির্বাক যুগের সমাপ্তি ঘটছে। সিটি লাইটস’র ঠিক পরেই চ্যাপলিন নির্মাণ করেন ‘মডার্ন টাইমস’। যেখানে চরিত্রদের কথা বলতে এবং গান গাইতে দেখা যায়, যদিও এর বেশিরভাগ জুড়েও ছিল নির্বাক দৃশ্য। পরবর্তী সময়ে ‘দ্য গ্রেটেস্ট ডিক্টেটর’ ছিল সবাক চলচ্চিত্র। অতএব বলা যায়, সিটি লাইটসই চ্যাপলিনের নির্বাক চলচ্চিত্রের শেষ নির্মাণ।
সিটি লাইটসকে একটি বিশেষ সিনেমা হিসেবে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন চ্যাপলিন। সিনেমাটির অন্তর্নিহিত রোমান্সই তাঁকে শতশত দৃশ্যধারণের দিকে চালিত করে। অন্ধ ফুলওয়ালীর সঙ্গে দেখা করার প্রথম দৃশ্যটি ৩৪২ বার শুট করেছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মূকাভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন ছিলেন একাধারে অভিনেতা, নির্মাতা ও সুরকার। ক্যারিয়ারে তিনি ‘দ্য কিড’, ‘আ ওম্যান অব প্যারিস’, ‘দ্য গোল্ড রাশ’, ‘দ্য সার্কাস’, ‘সিটি লাইটস’, ‘মডার্ন টাইমস’, ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’-এর মতো অসংখ্য কালজয়ী সিনেমা উপহার দেন।
সূত্র: কোলাইডার