সুস্থ দাঁত মানুষের হাসির সৌন্দর্যের আকর্ষণীয়তা বৃদ্ধি করে। সুন্দর হাসি দিয়ে মন জয় করা যায়। কিন্তু অযত্ন ও অবহেলার কারণে আমাদের অনেকের সেই আশা পূরণ হয় না। হাসি দিলেও সে হাসি সুন্দর হয় না। আর সুন্দর হাসি না হওয়ার কয়েকটি কারণের মধ্যে হলো ঠিকমতো দাঁত পরিষ্কার না করা বা ঠিক সময় স্কেলিং না করা।
স্কেলিং কী?
প্রতিদিন আমরা অনেক কিছুই খেয়ে থাকি, কিন্তু খাওয়ার পর দাঁত পরিষ্কার করতে ভুলে যাই। এর ফলে দাঁতের গোড়ায় মাড়ির উপর যে সাদা/হলদেটে পদার্থ/পরত (Dental Plaque) জমে, সেটিই শক্ত হয়ে দাঁতের পাথর (calculus) তৈরি হয়। আর যে চিকিৎসার মাধ্যমে চিকিৎসকগণ এই হলদে পাথর অপসারণ করেন তারই নাম স্কেলিং।
স্কেলিং দাঁত পরিষ্কার করার চিকিৎসা, দাঁত সাদা করার নয়। দাঁতের চিকিৎসকগণ Untrasonic scaler নামক মেশিনের সাহায্যে vibration-এর মাধ্যমে স্কেলিং করে থাকেন। যথাযথ কৌশল জেনে এবং অনুসরণ করে স্কেলিং করলে দাঁতের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
কখন স্কেলিং করাবেন
যদি কারোর দাঁতে পাথর জমে তবেই স্কেলিং করিয়ে নিতে হবে। অনেকের বছরের পর বছর কোন সমস্যা হয় না আবার অনেকের ৪-৬ মাসের মধ্যে মুখে Plaque জমে, Calculus জমে যায়। অনেকের দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়ে, দাঁত ব্রাশ করার পরেও মুখে দুর্গন্ধ হয়, মাড়িতে সব সময় শিরশির ও ব্যথা করে। এসব ক্ষেত্রে আপনার ডেন্টিস্টের পরামর্শ মেনে স্কেলিং করানো উচিত হবে।
স্কেলিং–এর সুবিধা
দাঁতের গোড়ায় পাথর বা ময়লা জমে দাঁত ও দাঁতের মাড়ির ইনফেকশন হয় সেটা সেরে উঠার জন্যে স্কেলিং জরুরি। মুখে দুর্গন্ধ, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, দাঁত নড়া এসব সমস্যাগুলো স্কেলিং করলে অনেকটা দুর হয়ে যায়। তাই স্কেলিং করাটা জরুরি।
কারা স্কেলিং করাবেন?
স্কেলিং করার প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করে একজন মানুষের লালার উপর। করো লালা ভারী তো কারো লালা পাতলা। ভারী লালা যাদের তাদের স্কেলিং করাটা বেশি প্রয়োজন কারণ তাদের মুখে washout কম হয়।
এছাড়া
১. যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে।
২. যাদের হজমে অসুবিধা হয়।
৩. যাদের শক্ত খাবার খাবার অভ্যাস কম।
৪. যাদের নরম ও মিষ্টি খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেশি তাদের স্কেলিং করার প্রয়োজন পরে।
এছাড়া যাদের সিস্টেমিক রোগ, DM, CKD ছাড়া ও বিভিন্ন জটিল রোগ আছে তাদের বিশের যত্ন প্রয়োজন পড়ে।
স্কেলিং কতদিন পর পর করবেন?
সাধারণত ৬ মাসে একবার স্কেলিং করা প্রয়োজন। কারো কারো ক্ষেত্রে বছরে একবার করার প্রয়োজন হয়। তবে বুদ্ধিমানের কাজ হলো ৬ মাস পর পর ডেন্টিস্টের কাছে যেয়ে দাঁতের চেকাপ করানো।
খাদ্যাভ্যাস, দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস, কোনো নেশা করেন কি না - তার উপর নির্ভর করে কতদিন অন্তর অন্তর স্কেলিং করতে হবে। স্কেলিং মাড়ির যেকোনো রকম সমস্যা থেকেও মুখকে রক্ষা করে। দাঁতের সুস্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার জন্য স্কেলিং করার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: ডেন্টাল সার্জন , সিকদার ডেন্টাল কেয়ার, মিরপুর