পারকিনসন্স সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ১১ এপ্রিল বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস পালিত হয়। একজন বিখ্যাত ইংরেজ সার্জন, জেমস পারকিনসন্স, ১৮১৭ সালে শেকিং পালসির উপর একটি প্রবন্ধ লিখেন এবং প্রকাশ করেন। তিনি বয়স্কদের মধ্যে প্রচলিত একটি মোটর নিউরন ডিসঅর্ডার চিহ্নিত করেছিলেন। তাঁর সম্মানে, এই রোগটির নামকরণ করা হয়েছিল পারকিনসন্স রোগ।
১৯৯৭ সালে, যুক্তরাজ্যের পারকিনসন্স ডিজিজ সোসাইটি জেমস পারকিনসন্স–এর জন্মদিন, ১১ এপ্রিলকে বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস হিসেবে মনোনীত করে। পরবর্তীকালে, ১৯৯৭ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পারকিনসন্স রোগের উপর ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে। তারপর থেকে, পারকিনসন্স রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং রোগীদের আরও ভাল সেবা করার জন্য প্রতি বছর ১১ এপ্রিল বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস পালন করা হয়ে আসছে।
বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস বেশ কয়েকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ:
১. জনসাধারণকে পারকিনসন্স রোগের লক্ষণ, কারণ, এ রোগ সম্পর্কে জানানো, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতন করা।
২. রোগী এবং রোগীর সহায়তায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের প্রতি সংহতি প্রদর্শন, সহায়তা, উৎসাহ প্রদান করা।
৩. সরকার, সংস্থা এবং ব্যক্তিদের পার্কিনসনস রোগের উন্নত চিকিৎসা এবং শেষ পর্যন্ত পারকিনসন্স রোগের নিরাময়ের জন্য গবেষণা এবং উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করা।
৪. পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন, একত্রিত করে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা যাতে একে অপরের কাছ থেকে রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার এর ব্যাপারে শেখার সুযোগ পায়।
৫. বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা পেশায় নিয়োজিতদের মধ্যে সহযোগিতাকে উৎসাহিত করা।
৬. এই দিনটি উদ্যাপন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা আমাদের মনোযোগ, যত্ন এবং সমর্থন পাওয়ার যোগ্য।
৭. বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবন উন্নত করতে এবং রোগমুক্ত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বর্তমানে পারকিনসন্স রোগের কোনো প্রতিকার নেই, তাই পারকিনসন্সের সঙ্গে বেঁচে থাকা চ্যালেঞ্জিং। বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ কোটি মানুষ পারকিনসন্স রোগে ভুগছেন। ওষুধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন বা অস্ত্রোপচারের মতো চিকিৎসার মাধ্যমে লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। পারকিনসন্স প্রতিটি ব্যক্তির উপর ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে পার্কিনসন জিনগত এবং পরিবেশগত কারণের সংমিশ্রণের কারণে হয়। পারকিনসন্স রোগে অতি নড়াচড়া এবং অবশ হওয়া উভয় লক্ষণই অন্তর্ভুক্ত।
অনেকেই নানারকম স্নায়ুর রোগে ভোগেন বা আক্রান্ত হন ৷ তার মধ্যে একটি হল পারকিনসন্স৷ একটু সচেতন হলেই এই রোগ আগাম অনুমান করা যায় ৷
পারকিনসন্স রোগ আসলে কী?
পারকিনসন্স রোগ একটি নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ। পারকিনসন্স রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল পেশি নিয়ন্ত্রণহীনতা, যা বিশ্রামের সময়ে মাথা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাঁপতে থাকে, মন্থরতা, পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া এবং শরীরের ভারসাম্যহীনতা। লক্ষণগুলি খারাপ হওয়ার সাথে সাথে কথা বলা, হাঁটা এবং সাধারণ কাজগুলি সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই রোগের লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে বোঝা যায়। কখনও কখনও শুধু এক হাতে হালকা কাঁপুনি দিয়ে শুরু হয়। আবার কখনো শরীরের কোনো একটা অংশ স্টিভ বা শিথিল হয়ে যেতে পারে।
কাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
সাধারণত মধ্যবয়স্ক বা বয়স্কদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । রোগে আক্রান্ত হওয়ার গড় বয়স ধরা যেতে পারে প্রায় ৬০ বছর। নারীদের তুলনায় পুরুষরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন। একই পরিবারে একাধিক সদস্য এই রোগে আক্রান্ত হলে ঝুঁকি আরও বেশি থাকে। কোনো রকম কীটনাশক (pesticides) ও আগাছানাশক (herbicides) সংস্পর্শে এলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। মস্তিষ্কে আঘাত লাগলেও পারকিনসনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে ৷
আপনি বা আপনার কাছের কেউ এই রোগে আক্রান্ত তা কীভাবে বুঝবেন?
আচমকাই দেখলেন হাতের আঙুল হালকা কাঁপতে শুরু করেছে। ঠিক মতো পেন বা কোনো জিনিস ধরতে পারছেন না। বা দেখছেন আপনার কোনো প্রিয়জনের হাত চালানোর গতি ধীর হয়ে গিয়েছে। এমন লক্ষণ যদি দেখেন দেরি করবেন না। স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
পারকিনসন্স রোগ প্রতিরোধ করতে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন?
প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর এবং ভারসাম্যপূর্ণ খাবার গ্রহণ করা ৷ গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কফি এবং গ্রিন টি নিয়মিত পান করলে পারকিনসন্স রোগের ঝুঁকি কমে যায়। অ্যারোবিক এক্সারসাইজ ৷ হাঁটা, সাঁতার কাটা এবং যোগাসন পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে ৷ মানসিক অনুশীলন, ধাঁধার সমাধানসহ বই পড়ার অভ্যাস করতে পারেন ৷
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, পরিচালক, বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হসপিটাল, চট্টগ্রাম