ভালোবাসা মানেই তো নিরাপত্তা, সম্মান আর মানসিক প্রশান্তি। কিন্তু কেউ কেউ আছেন, যাদের সম্পর্ক মানেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা। তারা বারবার এমন মানুষদের ভালোবেসে ফেলেন, যারা ভালোবাসা তো দূরের কথা, সম্পর্কের ভেতর ঢুকিয়ে দেন সন্দেহ, দমন-পীড়ন আর মানসিক অশান্তি। প্রশ্ন ওঠে, কেন?
মনোবিদ ও সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ রুচি রুহ বলছেন, ‘এভাবে প্রশ্ন তোলাটা যেন ভুক্তভোগীকেই দোষারোপ করার মতো। এটা বলার সময় আমাদের মনে রাখা দরকার, কেউই টক্সিক আচরণের যোগ্য নন। কিন্তু কিছু অভ্যন্তরীণ অভ্যাস ও মানসিক গঠন একজন মানুষকে এই ধরণের সম্পর্কে পড়ার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।’
গল্পটা শুরু হয় শৈশব থেকে
যারা এমন পরিবারে বড় হয়েছে, যেখানে ভালোবাসার তেমন একটা গুরুত্ব নেই। আর সম্পর্কগুলোও ছিল অস্থির আর আবেগ ছিল অনির্দেশ্য। তাদের কাছে এই অস্বস্তিকর পরিবেশটাই হয়ে ওঠে ‘চেনা’। ফলে বড় হয়ে তারা এমন সঙ্গীর দিকেই আকৃষ্ট হন, যাদের আচরণে সেই অস্থিরতাটাই ফিরে আসে।
ভয়ভরা টান, ভুল বোঝা ভালোবাসা
অনেকে আছেন, যারা সহজেই ‘ইনটেনসিটি’ বা সম্পর্কের জটিল আবেগকে ভালোবাসা বলে ভুল করেন। বিশেষ করে যাদের অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল ‘আনজিয়াস’ ধরনের। তাদের মনে হয়, যদি কাউকে বেশি ভালোবাসা দেওয়া যায়, তাহলেই সে বদলে যাবে। এই চেষ্টায় তারা সহ্য করে ফেলেন অপমান, উপেক্ষা, এমনকি মানসিক নির্যাতনও।
অতিরিক্ত সহানুভূতির ফাঁদ
খুব বেশি সহানুভূতিশীল মানুষ প্রায়ই ভাবেন, ‘ও তো কষ্টে আছে, ওর পাশে থাকা দরকার।’ এই সহানুভূতি থেকেই তারা সঙ্গীর খারাপ আচরণকে ‘অসুস্থতা’ হিসেবে মেনে নেন। তাদের বিশ্বাস, ভালোবাসা দিলেই মানুষ বদলায়। কিন্তু বাস্তবে, বদলটা আসে তখনই, যখন মানুষ নিজে সেটা চায়।
নিজেকে কম মনে করা
যাদের আত্মমূল্যবোধ কম, তারা প্রায়ই মনে করেন, ‘আমি হয়তো এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য না।’ এই বিশ্বাস থেকে তারা নিজেদের দাবি প্রকাশ করতে ভয় পান। আর সীমানাও টানতে পারেন না। টক্সিক সঙ্গী সেই দুর্বলতাকেই কাজে লাগান।
প্রতিবারই একই গল্পের পেছনে দৌড়
মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘রিপিটিশন কমপালশন’। মানে, কেউ যদি শৈশবে অবহেলা, অপমান কিংবা উপেক্ষা পেয়ে থাকেন। তাহলে বড় হয়ে সেই একই ধরনের মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার চেষ্টা করেন। ভাবেন, এবার যদি সেই অপূর্ণ গল্পটা শেষ করা যায়! কিন্তু বাস্তবে, সেই পুরোনো ক্ষতই আবার নতুন করে রক্তাক্ত হয়।
নিজেকে দোষারোপ না করে বরং বুঝে নিন, আপনার মানসিক চাহিদা কী। কোন সম্পর্ক আপনাকে ভালো রাখে। আর কোথায় আপনাকে শুধু কষ্টই দিচ্ছে। সেখান থেকেই বদলটা শুরু হোক। ভালোবাসা মানেই তো শান্তি। সেটা খুঁজে নিতে দেরি হতে পারে, কিন্তু সেটা কখনোই অসম্ভব নয়।