মুক্ত গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সুরক্ষা একে অপরের পরিপূরক। মুক্ত সাংবাদিকতা ছাড়া যেমন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা অসম্ভব, ঠিক তেমনি সুরক্ষিত মানবাধিকার ছাড়া স্বাধীন সাংবাদিকতা চিন্তা করা যায় না। তাই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার লড়াই একই সূত্রে গাঁথা।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ সব কথা তুলে ধরা হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিত–এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর।
সভায় ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আজকে উত্থাপিত মূল প্রবন্ধের শুরুতে গাজার যুদ্ধে নিহতের যে সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। তা কিন্তু গণমাধ্যম থেকে পাওয়া সংবাদের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। তাই আমাদের যেকোনো সংবাদের জন্য গণমাধ্যমের ওপর নির্ভর করতে হয়। এ দেশে পুলিশও অনেক সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজ করে। তবে সবাই এ কাজ করে না। পুলিশ পরিচয়ে কাউকে তুলে নিয়ে গেলে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পিবিআই, সিআইডিসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে কাজ করি। পুলিশ সদস্যরা শাস্তির আওতায় এসেছে, এমন ঘটনাও আছে।’
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সৈয়দ বোরহান কবীর বলেন, ‘১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। এই সার্বজনীন ঘোষণাপত্রে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ৩০টি ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৯ ধারায় বলা হয়েছে— ‘‘প্রত্যেক মানুষের মতামত পোষণ এবং মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। অবাধে মতামত পোষণ এবং রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে যেকোনো মাধ্যমের মারফত ভাব এবং তথ্য জ্ঞাপন, গ্রহণ এবং সন্ধানের স্বাধীনতা এ অধিকারে অন্তর্ভুক্ত।” কাজেই প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী একই সঙ্গে একজন মানবাধিকার রক্ষকও বটে। পাশাপাশি নিপীড়িত প্রত্যেক সাংবাদিক একজন মানবাধিকার যোদ্ধা।’
সভায় বক্তরা জানান, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ২৮২টি অভিযোগ পেয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এ সব অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৩০টি অভিযোগ, চলমান রয়েছে ১২৯টি আর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ২৩টি। এ ছাড়া ভুয়া মানবাধিকার সংগঠন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের নাম নিয়ে অনেক ভুয়া সংগঠন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করার নামে প্রতারণা করছে। সারা বিশ্ব আজ মানবাধিকার সংকটে। মানবতার ঘাতকরাই আজ বিশ্বে ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছে। মানবাধিকার সুরক্ষায় গণমাধ্যম একটি বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশ্বে যে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি যত খারাপ, সেই দেশে গণমাধ্যম তত শৃঙ্খলিত। যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতা বেশি, সেখানে গণমাধ্যম তত সংকুচিত। মানবাধিকার পরিস্থিতে একটি দেশ যত নাজুক, সেই দেশে গণমাধ্যম ততটাই ঝুঁকিতে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সচিব সেবাষ্টিন রেমা। জাতীয় মানবাধিকার বিষয়ক উপস্থাপনা তুলে ধরেন কমিশনের পরিচালক কাজী আরফান আশিক। সম্মানিত অতিথি হিসেবে রাখেন ইউএনডিপি (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি) বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য সেলিম রেজা।