সেকশন

বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২
Independent Television
 

তেল নিয়ে তুঘলকি আর কত!

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:১৬ পিএম

দিন তিনেক আগের কথা। কিছু সদাই কিনতে বাসার কাছেই রাস্তার মোড়ের মুদির দোকানে যেতে হয়েছিল। বাসা থেকে বলে দেওয়া হয়েছিল, অন্যান্য সদাইয়ের সঙ্গে সয়াবিন তেলের কথাও। কিন্তু দোকানিকে সেই বস্তুটির বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেই মিলল সাফ জবাব। কানে ঢুকল—‘সয়াবিন তেলের স’ও নাই’!

দেশের বাজারে সয়াবিন তেল নিয়ে তুঘলকি কারবার বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। মাঝে একটা বিরতি পড়েছিল। তবে এবার একেবারে প্রচণ্ড ধারাবাহিক। দোকানে তেলের খোঁজে যাওয়ার আগে এক প্রতিবেশী জানিয়েছিলেন, তিনি নাকি পুরো এলাকা ঘুরেও সয়াবিন তেলের ১ লিটারের কোনো বোতলের দেখা পাননি। শেষে প্রায় ৫০ টাকা রিকশাভাড়া দিয়ে এলাকার বাইরের এক বাজার থেকে দুটো বোতল পেয়েছেন। তবে সেই দুটো বোতল আবার আলাদা আলাদা দোকান থেকে কিনতে হয়েছে এবং তাতে পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে ঘুরতেও হয়েছে ঢের।

আরও পড়ুন:

এমন অভিজ্ঞতা শোনার পরও নিজের খোঁজ করতে যাওয়া। কারণ রান্নায় সয়াবিন তেল লাগে। এ দেশের একেবারে সাধারণ পরিবারেও পেটে খাবার দিতে হলে এই বস্তুটি কিনতে হয়। একেবারেই রোজকার দ্রব্য এই সয়াবিন তেল। কিন্তু সেটি কিনতে গিয়েই এবার একেবারে নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে দেশের মানুষকে। অন্যদের অভিজ্ঞতা শুনে সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে গিয়ে এলাকার তিনটি দোকান ঘুরেও একটি সোনালি রঙের বোতলও যখন মিলল না, তখন মনে হতে থাকল–তবে কি এ দেশে সয়াবিন তেল সোনার হরিণ হয়ে যাচ্ছে?

সংবাদমাধ্যমের সাম্প্রতিক খবরে আজ শুক্রবার জানা গেছে, রাজধানীর বাজারগুলোয় সয়াবিন তেলের সংকট কাটেনি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট এখনও না কাটায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। ময়দা-আটাসহ পণ্য না কিনলে সয়াবিন তেল দিচ্ছে না কোম্পানির প্রতিনিধিরা, এমন অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বাইরে বরিশাল, খুলনা, সিলেট, যশোর, চাঁদপুর, হিলি প্রভৃতি এলাকাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কৃত্রিম সংকটের কারণে চাইলেই দোকানে মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। লিটার প্রতি ১৭৫ টাকা হলেও অনেক জায়গায় খোলা সয়াবিন তেলই বিক্রি হচ্ছে এর চেয়ে বেশি দামে। যেমন, খুলনার বাজারে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটারে বিক্রি হচ্ছে দুই শ টাকায়। আর কয়েক দোকান ঘুরলেও মিলছে না বোতালজাত তেল। আর যেসব দোকানে মিলছে সেখানেও কিনতে হচ্ছে অন্য কোম্পানির পণ্য। দোকানিদের অভিযোগ, বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তেলের সঙ্গে একই কোম্পানির চাল-আটা-ডাল ও মসলা না নিলে মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। এই অবস্থা চলতে থাকলে রমজানে সংকট আরও বাড়ার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

আরও পড়ুন:

এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, সয়াবিন তেল নিয়ে এ দেশের বাজারে আসলে যাচ্ছেতাই হচ্ছে। ক্রেতা ও ভোক্তাদের যেমন অনেক ক্ষেত্রে বেশি টাকা অন্যায্যভাবে খরচ করতে হচ্ছে, তেমনি খুঁজতে গিয়ে ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের খবরেই জানা যাচ্ছে যে, অনেক জায়গায় সয়াবিন তেল কিনতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে অন্য পণ্য কেনার শর্ত মেনে নিতে হচ্ছে। ফলে ভোক্তাদের গলায় একপ্রকারের ছুরি ঠেকিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে বললে অত্যুক্তি হয় না। অথচ এমন কোনো নিয়ম কিন্তু কোনো বাজারব্যবস্থায় থাকতে পারে না।

এর আগেও সয়াবিন তেল এমন নাকানিচুবানি এ দেশের মানুষ খেয়েছে। আগের সরকারের আমলেই একবার ঈদের সময় একেবারে ভোজবাজির মতো বাজার থেকে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল সয়াবিন তেল। তখন আবার এই পণ্য ফিরে এসেছিল সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কিছু দাবি মেনে নেওয়ার পর। অর্থাৎ, সয়াবিন তেল নিয়ে শুধু দেশের মানুষ নয়, বরং দেশের সরকারকেও নাকানিচুবানি খাওয়ানো হয়েছে আগেও। তার অর্থ হলো, এই পণ্যটি নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি চক্র বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এটি আগেও যেমন সক্রিয় ছিল, সরকারের পরিবর্তনের পরও তেমনি আছে।   

অথচ একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হওয়ার পরও সরকারি নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠানগুলো যেন কিছু দেখেও দেখছে না, শুনেও শুনছে না। সরকারেরই কর্তব্য, যে কোনো অসাধু চক্রকে পরাভূত করা এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করে জনগণকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেওয়া। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জাতীয় সকল ব্যক্তিরাই কেন জানি কেবলই ‘নীতিবাক্য’ শুনিয়েই দায় সারছেন! তারা বলছেন যে, এমনটা হওয়া উচিত নয়। কিন্তু পরিস্থিতির সুনিয়ন্ত্রণ আর মিলছে না। তাহলে আর লাভটা কী!

বিপদে আছে কেবল সাধারণ জনতা। তারা কেবলই এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরছে এক বোতল সয়াবিন তেলের জন্য। জনতার সময় ও অর্থক্ষয় হচ্ছে, হচ্ছে ভোগান্তিও। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়টি হলো, মাথা পেতে নিতে হচ্ছে এক ধরনের অপমান। যখন আপনাকে এক বোতল সয়াবিন তেল পেতে বাধ্য হয়ে অন্যান্য পণ্যও কিনতে হবে, তখন আপনি এক ধরনের অসহায় আত্মসমর্পণের অনুভূতি পাবেন। এটি আদতে রাহাজানির মতো একটি অপরাধের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে তা মেনে নেওয়ার মতো বিষয়। সাধারণ মানুষের টাকা আসলে সুপরিকল্পিতভাবে ছিনতাই করছে একটি চক্র। অথচ, তার বিচারের বদলে মিলছে না ন্যূনতম প্রতিরোধ বা প্রতিকারও।

সবশেষে তাই নীতিনির্ধারকদের কাছে প্রশ্ন একটাই। দেশের বাজারে সয়াবিন তেল নিয়ে তুঘলকি চলবে আর কত দিন? সঠিক উত্তরটি পেলে সাধারণ জনতার অংশ হিসেবে অপমান ও ভোগান্তি সহ্য করার সময়সীমা সম্পর্কে অবগত থাকা যেত আর কি! মানসিক প্রস্তুতিরও তো একটা ব্যাপার আছে!

লেখক: উপবার্তা সম্পাদক, ডিজিটাল বিভাগ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন

[এই মতামত লেখকের নিজস্ব। এর সঙ্গে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।]

ঢাকা শহরে প্রতিদিন উৎপন্ন প্রায় ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্যের মাত্র ৩৭ শতাংশ পুনর্ব্যবহার হয় বলে ওয়েস্ট কনসার্ন‑এর ২০২০ সালের গবেষণায় জানা যায়। বাকি অংশ জমা হয় ল্যান্ডফিলে, নদী-নালায় ফেলা হয়, কিংবা...
ক’দিন আগের কথা। সপ্তাহের অফিস খোলা কর্মদিবস। স্বাভাবিকভাবেই রাস্তায় চাপ আছে মানুষের, যানেরও। তবে সকাল ১০টার পর সেই চাপ একটু হলেও কমে আসে। তেমনই এক সময়ে রাজধানীর একটি ব্যস্ততম রাস্তা পার হতে হচ্ছিল।...
প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি শপথ নিয়েই আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহি মনোভাব দেখিয়েছেন। তবে তার প্রকাশ ভঙ্গি বেশ নরম। অন্টারিও প্রদেশের প্রিমিয়ার বলেছেন, আমেরিকা মাথানত না করা পর্যন্ত তারা যুদ্ধ চালিয়ে...
রমজান মাস চলছে, ৭ দিন পারও হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে চলে আসছে ঈদের প্রস্তুতি। প্রতি ঈদেই রাজধানী ঢাকা প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়ে। আর এমন শহরে স্বাভাবিকভাবেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ থাকেই। এটা...
বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারের ফলে কুয়াকাটা সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্র বেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে...
লক্ষ্মীপুরে চন্দ্রগঞ্জের দিঘলীর রমাপুর এলাকায় ১২ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় নুরুল হক নামে এক ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার সকালে রমাপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।...
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.