সেকশন

বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২
Independent Television
 

সবাই এত ‘হা হা’ দেয়, তবু দেশে সুখ কম কেন?

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৯ পিএম

কবি বলেছেন, এই দেশটা সুজলা, সুফলা, শস্য–শ্যামলা। যদিও কবি যখন এমন কথা কবিতায় বলেছিলেন, তার তুলনায় বর্তমানে দেশে সবুজ অনেক কমেছে। ঠিক সেইরকম স্নিগ্ধ দৃশ্য আর এ দেশে দেখা যায় না। যদি বলতেই হয় যে, এ দেশে আসলে কোন বিষয়টির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটেছে, তাহলে তালিকার প্রথম দিকেই হয়তো চলে আসবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের ‘হা হা’ রিঅ্যাকশন!

ওপরের কথাটা পড়ে একটু বিরক্তবোধ আপনাদের হতে পারে। হয়তো ভাবতেও পারেন, বিষয়টা কিছুটা খেলো হয়ে গেল! কিন্তু একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন তো, আসলেই কি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ দেশের নেটিজেনরা অতিরিক্ত হারে ‘হা হা’ দিয়ে যাচ্ছে না? খেয়াল করলে দেখবেন, এ ক্ষেত্রে বিষয়টা শুধু অতিরিক্ত নয়, বরং যেন অসুখের পর্যায়ে চলে গেছে। নইলে কি আর, কারও মৃত্যু সংবাদে বা অসুস্থ হওয়ার খবরেও কেউ ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দেয়? অথচ এ দেশের নেটিজেনরা দেয়। এই তো, সম্প্রতি জনপ্রিয় ক্রিকেটার তামিম ইকবালের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সংবাদমাধ্যমের দেওয়া খবরেও বেশ কিছু প্রোফাইল থেকে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দেওয়া দেখার দুর্ভাগ্য হলো। এত ‘সুখী’ মানুষও এ দেশে আছে তাহলে!

স্বাভাবিকভাবেই যাদের বেশি হাসি পায় বা যারা অট্টহাসি দেয়, তাদের মনে সুখের অস্তিত্ব বেশি—এমন অনুমান করা তো দোষের নয়। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাস্তবতা এমন নয়। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৭ দেশের মধ্যে ১৩৪তম। সম্প্রতি প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২৫-এ এমনটি দেখা গেছে। এই গবেষণাটি জরিপ সংস্থা গ্যালাপ ও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সলিউশন নেটওয়ার্কের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়েছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশে সুখের পরিমাণ পুরো দুনিয়ার মধ্যেই আশঙ্কাজনক হারে কম।

এর আগে ২০২৪ সালে একই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৩ দেশের মধ্যে ছিল ১২৯তম। ২০২৩ সালে এই তালিকায় বাংলাদেশ ছিল ১১৮তম। সুতরাং, বাংলাদেশে সুখের পরিমাণ যে ক্রমশ কমছেই, সেটি বলাই যায়। আশপাশের প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনাতেও বাংলাদেশে সুখের অস্তিত্ব বেশ কম। ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২৫ অনুযায়ী, সুখী দেশের তালিকায় প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান ১১৮তম, পাকিস্তানের অবস্থান ১০৯তম, মিয়ানমারের অবস্থান ১২৬তম, শ্রীলঙ্কার অবস্থান ১৩৩তম এবং নেপালের অবস্থান ৯২তম। আর বিশ্বে বাংলাদেশের চেয়ে অসুখী দেশই যে আছে মাত্র ১৩টি।

অবশ্য সুখের এমন বিকট অভাবের মধ্যেই বাংলাদেশের নেটিজেনরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মন খুলে ‘হা হা’ দিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে অবশ্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো কোনো জরিপ করেনি। ভাগ্যিস, করেনি। করলে হয়তো বাংলাদেশ সসম্মানে উপরের দিকেই স্থান পেত। কারণে বা অকারণে ‘হা হা’ দেওয়ার এমন সামর্থ্য যে বিরল!

যদিও এমন অদ্ভুত সামর্থ্য দিয়েও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। দেশের সামগ্রিক সুখ যে বাড়ছে না। আন্তর্জাতিকভাবে ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২৫ নামের সুখী দেশের এই তালিকা তৈরি করার জন্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে জরিপ চালানো হয়। জরিপে যেসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়, তার মধ্যে রয়েছে একজন মানুষের নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্টির মাত্রা (তার নিজের বিবেচনা অনুযায়ী), মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), সামাজিক সুরক্ষা ও সহায়তা পরিস্থিতি, স্বাধীনতা, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, গড় আয়ু, দুর্নীতির মাত্রা ইত্যাদি অনেক কিছু। সুখী দেশের তালিকায় পিছিয়ে পড়ার মানে এই সব কিছুতেই বাংলাদেশ বেশ পিছিয়েই আছে।

ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২৫–এ আরও বেশ কিছু সূচকের কথা বলা হয়েছে। যেমন: সমাজে বিদ্যমান দয়া–মায়ার মাত্রার বিষয়টি আছে। বলা হচ্ছে যে, যেসব দেশে সুখ বেশি, সেসব দেশের সমাজে দয়া–মায়া, সহমর্মিতা, সহানুভূতি প্রভৃতি মানবিক গুণের উপস্থিতিও বেশি। এটি বোঝাতে এই রিপোর্টে আরেকটি বিষয়ও দেখানো হয়েছে। সেটি হলো, কোন দেশে বা অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে খাবার (লাঞ্চ বা ডিনার) ভাগ করে খাওয়ার প্রবণতা আসলে কেমন! অর্থাৎ, কোন দেশের মানুষের প্রতি সপ্তাহে নিজেদের পরিচিত কারও সাথে (পরিবার, বন্ধু–বান্ধব বা অন্যান্য) খাবার ভাগ করে খাওয়ার হার বের করা হয়েছে। আশঙ্কার বিষয় হলো, এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থার তালিকায় সবার নিচে! সাথে সঙ্গী হিসেবে আছে কেবল এস্তোনিয়া। সারা দুনিয়ার মধ্যে শুধু এই দুটি দেশের অধিবাসী মানুষেরই খাবার ভাগাভাগি করার হার সবচেয়ে কম, সপ্তাহে মাত্র ২ দশমিক ৭টি খাবার। অথচ সাব–সাহারা আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার তুলনামূলক কম আয়ের দেশগুলোতেও এই হার এত কম নয়, বরং বেশি।

ভিডিও দেখুন:এর অর্থ হলো, আমাদের দেশে খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়ার মতো হৃদ্যতা মানুষের মধ্যে কম। এর সঙ্গে দয়া–মায়া, সহমর্মিতা, সহানুভূতি প্রভৃতি অনেক কিছুর অভাবকেই চাইলে মেলানো যায়। আর ঠিক এই জায়গাতেই অতিরিক্ত ‘হা হা’ দেওয়ার একটি কার্যকারণ অনুমান করা যায়। খেয়াল করলে দেখা যাবে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ দেশে যারা ‘হা হা’ দেয়, তাদের একটি অংশ আসলে দেয় তামাশা করতে। এই তামাশার প্রকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিকৃতও। স্রেফ অন্যের বিরক্তি উৎপাদন করাও অনেক সময় লক্ষ্য থাকে। আবার আরেকটি অংশ দেয় নিরুপায় হয়ে। কোনো কিছু স্বাধীনভাবে বলা যখন খুবই ‘সহজ ও স্বাভাবিক’(!) বিষয় হয় কোনো দেশে, তখন ‘হা হা’ হয়ে দাঁড়াতে পারে ক্ষোভ প্রকাশের ইমোজিও। আর এভাবেই বাস্তব সমাজের বাজে কাজের প্রভাব আমরা ঢুকিয়ে ফেলছি ভার্চুয়ালেও। এভাবে সামগ্রিক অর্থেই একটি ‘টক্সিক সোসাইটি’ আমরা তৈরি করছি এই বাংলাদেশে, যেখানে কারও বাপ–মা তুলে গালি দেওয়াও ওয়ান–টু’র ব্যাপার! এবং তাতে কেউ প্রতিবাদ করলে আবার কপালে জোটে বাকস্বাধীনতায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ!

কমদামে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের দীর্ঘ লাইন। ফাইল ছবিতো, এমন দেশে হিংসা, অশ্রদ্ধা ও অসংবেদনশীলতার চাষ হবে না, তো হবেটা কি? আর এসবের ভিড়ে কি আর ভালোবাসা বাঁচে? নাকি সহমর্মিতা? ফলে দয়া–মায়া বৃদ্ধিরও কোনো উপায় নেই। এ হেতু আমাদের এই বাংলাদেশে সুখ বৃদ্ধিরও কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলে, মানুষের সুখ বৃদ্ধির ৫০ শতাংশ নির্ভর করে জেনেটিকসের ওপর। ১০ শতাংশ নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির ওপর। আর ৪০ শতাংশ নির্ভর করে ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর। অর্থাৎ, কেউ নিজে আদতেই সুখী হতে চায় কিনা, সুখী থাকতে চায় কিনা—সেটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কার্যকারণ।

হৃদয়হীনতার আসলে ওষুধ হয় না। কে জানে, দেশের সুখের পরিমাণ আরও কমতে কমতে একদিন আমরা সবাই সেই না ফেরার মতো অবস্থাতেই চলে যাই কিনা!

লেখক: উপবার্তা সম্পাদক, ডিজিটাল বিভাগ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন

[এই মতামত লেখকের নিজস্ব। এর সঙ্গে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।]

ফলে কাশ্মীর হামলা যেমন, তেমনি এর জবাব হিসেবে পাকিস্তানে ভারতের হামলাকে বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক দাবাখেলার ছকে বসেই পাঠ করতে হবে। এখানে চীন পাকিস্তানের মিত্র, মিয়ানমারেরও মিত্র। আবার যুক্তরাষ্ট্র ভারতের...
এটি ঠিক যে, ফেক নিউজ ও ফেক ছবি-ভিডিওর বর্তমান যুগে ভুয়া কনটেন্ট চিহ্নিত করা অনেক কঠিন হয়ে গেছে। তাই ধৈর্য্য ধরার কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে আরও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাও অপরিহার্য। আর সাংবাদিকতার...
মাগুরার ৮ বছর বয়সী ছোট্ট শিশু আছিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় যখন সারা দেশে আলোড়ন ওঠে, সাধারণ মানুষ যখন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, তখন আছিয়ার মরে যাওয়ার দিনে সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টা বলে দেন, মামলার বিচার...
বাংলাদেশের সব আছে, নেই শুধু সৎ আর নিষ্ঠাবান নেতৃত্ব। সৎ, দক্ষ আর নিষ্ঠাবান লোকও আছে, কিন্তু আমাদের খুঁজে নিতে হবে। সামনে আমাদের নির্বাচন। বাংলাদেশের মানুষ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এই...
বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারের ফলে কুয়াকাটা সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্র বেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে...
লক্ষ্মীপুরে চন্দ্রগঞ্জের দিঘলীর রমাপুর এলাকায় ১২ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় নুরুল হক নামে এক ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার সকালে রমাপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।...
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.