বাংলাদেশ জাতীয় দল জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টেস্ট সিরিজ খেলছে, প্রথম টেস্টে হারের পর সমালোচিতও হয়েছে। আগামীকাল চট্টগ্রামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। তবে গত কিছুদিনে বাংলাদেশের জাতীয় দল ছাপিয়েও বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটই যত খবরের শিরোনামে। দুর্ভাগ্যবশত, সেটা বিতর্কের কারণেই।
বিতর্কের কেন্দ্রে তাওহীদ হৃদয়। তামিম ইকবাল অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) তাঁর বদলে মোহামেডানের অধিনায়কত্ব করতে থাকা হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো, কমানো এবং আবার বাড়ানোর পর সেটি শেষ পর্যন্ত পরের বছরে নিয়ে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক আর হাসাহাসি তো কম হয়নি!
এই নাটকের সর্বশেষ কিস্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে আজ, গতকাল ডিপিএলে আরেক দফা আম্পায়ারের সঙ্গে অসদাচরণের কারণে ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ একটি ডিমেরিট পয়েন্ট জুটেছে হৃদয়ের কপালে। এই ডিমেরিট পয়েন্ট নিয়ে তাঁর মোট ডিমেরিট পয়েন্ট হলো ৮টি। যার অর্থ, চারটি ম্যাচে নিষিদ্ধ হচ্ছেন তিনি। বিসিবি আজ বিবৃতি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানিয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞা এখন থেকেই কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বিসিবি। তার মানে, ডিপিএলে শেষ ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে খেলতে পারছেন না হৃদয়।
এই আবাহনীর বিপক্ষেই গত ১৯ এপ্রিল দুই আম্পায়ারের সঙ্গে অসদাচরণের দায়ে হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা থেকে যত নাটকের শুরু। সেদিন তাৎক্ষণিকভাবে হৃদয়কে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করেন ম্যাচ রেফারি, কিন্তু এরপর সংবাদ সম্মেলনে হৃদয় ‘ঘটনা বেশিদূর গড়ালে আমি মুখ খুলব’ হুমকি দেওয়ার পর তাঁর নিষেধাজ্ঞা বাড়ে আরেক ম্যাচ। হৃদয়ের হুমকি নিয়ে সমালোচনা হলেও এ পর্যন্ত বিসিবির দিক থেকে সব ঠিকঠাকই ছিল।
ঝামেলা সব শুরু হলো দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এক ম্যাচ কাটানোর পরই হৃদয়কে আবার মাঠে নামতে দেওয়ায়। এরপর হৃদয় গতকালের আগে দুটি ম্যাচও খেলেছেন!
নিষেধাজ্ঞা কমানোর চিঠিটা সিসিডিএমের টেকনিক্যাল কমিটির কাছ থেকে এলে সমস্যা হতো না। মোহামেডান সিসিডিএমে নিষেধাজ্ঞা কমানোর আপিল করার পর সিসিডিএম সেটা টেকনিক্যাল কমিটির কাছে পাঠায়, টেকনিক্যাল কমিটি আপিল খারিজ করে দেয়। কিন্তু এরপর টেকনিক্যাল কমিটিকে ডিঙিয়ে নিষেধাজ্ঞা কমানোর সিদ্ধান্ত আসে আম্পায়ার্স কমিটির পক্ষ থেকে। নিয়ম-কানুনের কিছুই মানা হয়নি সেখানে।
যা নিয়ে পরে সংবাদমাধ্যমে জানা যায়, মোহামেডানের চাপে এবং চার-পাঁচজন বোর্ড পরিচালকের অনানুষ্ঠানিক সভায়ই সিদ্ধান্ত হয় হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা কমানোর, যা কার্যকর করা হয়েছে আম্পায়ার্স কমিটিকে দিয়ে।
এর জেরে টেকনিক্যাল কমিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান সাবেক ক্রিকেটার ও বিসিবির ম্যাচ রেফারি এনামুল হক মনি। আর ১৯ এপ্রিল আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে দায়িত্ব পালন করা আম্পায়ার – যিনি আইসিসির এলিট প্যানেলেও একমাত্র বাংলাদেশি আম্পায়ার – শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত বিসিবিতে জানিয়ে দেন, তিনি আর ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করতে চান না। এরপর চারিদিকে সমালোচনার জেরে বিসিবি নতুন সিদ্ধান্ত দেয়। টেকনিক্যাল কমিটি গঠিত হয় বোর্ড পরিচালক নাজমূল আবেদিন ফাহিমকে প্রধান করে, যিনি দায়িত্ব নেওয়ার দিনেই সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেন, হৃদয়ের বাকি এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা আবার কার্যকর হবে। কিন্তু সেটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা মেমো বিসিবির দিক থেকে আসেনি।
এর মধ্যে গত পরশু তামিম ইকবালের নেতৃত্বে একদল ক্রিকেটার বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বিপিএল-ডিপিএলে ফিক্সিং ইস্যুতে তদন্তে থাকা ক্রিকেটারদের নাম ফাঁস করে দেওয়াসহ ক্রিকেটারদের অপমান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে গুরুত্ব পেয়েছে হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা আবার কার্যকর করার ইস্যুও। তামিমের প্রশ্নের মুখে বিসিবি সেদিন সন্ধ্যায় বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেয়, হৃদয়ের বাকি থাকা এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা আবার কার্যকর হবে, তবে সেটা আগামী বছরের ডিপিএলে!
অদ্ভুত সিদ্ধান্তটা নিয়ে আরেক দফায় ট্রল আর সমালোচনার শিকার হয় বিসিবি। এর মধ্যে গতকাল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে মোহামেডানের ম্যাচে আবারও সংবাদের শিরোনামে এলেন হৃদয়!
ম্যাচে ক্যাচ আউট হয়েছেন তিনি, কিন্তু তাঁকে আউট দেওয়ার পর ক্রিজে দাঁড়িয়ে থেকে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতি অসন্তোষ জানান হৃদয়। মাঠের দুই আম্পায়ার হৃদয়ের বিরুদ্ধে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতি বিরক্তি প্রকাশের অভিযোগ আনেন। হৃদয় যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং শুনানির দাবি করেন বলে জানাচ্ছে বিসিবির বিবৃতি। কিন্তু এ নিয়ে শুনানিতে তাঁকে জানানো হলেও হৃদয় আসেননি।
এর জেরে ডিপিএলের আচরণবিধির ৫.২.৬ ধারা ভাঙার দায়ে হৃদয়কে ম্যাচ রেফারি আখতার আহমেদ ১০ হাজার জরিমানার পাশাপাশি একটি ডিমেরিট পয়েন্ট দিয়েছেন। হৃদয়ের নামের পাশে আগে থেকেই ৭টি ডিমেরিট পয়েন্ট থাকায় তাঁর মোট ডিমেরিট পয়েন্ট হয়েছে ৮টি। আর ৮ ডিমেরিট পয়েন্টের মানে, বিসিবি আয়োজিত ৪টি ম্যাচে তাঁকে নিষিদ্ধ থাকতে হচ্ছে।