ম্যাচ শেষ হতেই সান মারিনোর ফুটবলারদের উচ্ছ্বাস দেখে কে। রাইনপার্ক স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উপস্থিত গুটিকয়েক নিজেদের সমর্থকের সঙ্গে বাঁধভাঙা উদযাপনে মেতে ওঠেন দলটির ফুটবলাররা। অবশ্য সান মারিনো গতকাল সোমবার যে ইতিহাস লিখেছে, তাতে এ উদযাপন মোটেও বেশি কিছু মনে হচ্ছে না।
উয়েফা নেশনস লিগের তলানির ধাপ ‘ডি’ লিগের গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে লিখটেনস্টাইনকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে সান মারিনো। আর দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচ জিতল ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের তলানির (২১০) দলটি (বাংলাদেশের বর্তমান র্যাঙ্কিং ১৮৫)। সেখানেই শেষ নয়, প্রথমবারের মতো নেশনস লিগের ‘ডি’ স্তর থেকে প্রমোশন পেয়ে ‘সি’ স্তরেও উঠেছে তারা।
আয়তনে বিশ্বের পঞ্চম ক্ষুদ্রতম (৬১ বর্গ কিলোমিটার) দেশটির ফুটবলীয় ইতিহাস দিকে তাকালে এ ইতিহাসের মাহাত্ম্য আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে। ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে নাম লেখানো সান মারিনোকে প্রথম জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ৬৫ ম্যাচ। ২০০৪ সালের এপ্রিলে লিখনেটস্টাইনকে ১-০ গোলে হারিয়ে জয়খরা কাটায় চারদিকে ইতালি বেষ্টিত ৩৫ হাজার জনসংখ্যার দেশটি।
অনেক কষ্টে না হয় একটা জয় এল। পরের জয়টার জন্য উপকথার চন্ডীদাশের অপেক্ষাকেও হার মানিয়েছে সান মারিনো। রজকিনীর জন্য বরশি হাতে চন্ডীদাশ ১২ বছর অপেক্ষা করেছিলেন, কখন মাছে ঠোকর দেবে। আর প্রথম জয়ের পর দ্বিতীয় জয় দেখতে সান মারিনোকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০ বছর ৮ মাস ৪ দিন, ম্যাচের হিসেবে ১৪১!
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর নেশনস লিগের ম্যাচে লিখটেনস্টাইনকে হারিয়ে দেশটির ফুটবল ইতিহাসে দ্বিতীয় ও প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে প্রথম জয় পায় সান মারিনো। এর মাত্র ২ মাস ১৩ দিন আর মাত্র ৫ ম্যাচের অপেক্ষার পরই তৃতীয় জয় তুলে নিল ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলের দেশটি। ২১১ ম্যাচ খেলা সান মারিনোর পরিসংখ্যান এখন ১৯৮ হার, ১০ ড্র ও ৩ জয়। মজার বিষয়, সান মারিনো তিনটি জয়ই পেয়েছে লিখটেনস্টাইনের বিপক্ষে।
গতকাল রাইনপার্ক স্টেডিয়ামে ১১৫৭ দর্শকের সামনে প্রথমে অবশ্য লিড নিয়েছিল লিখটেনস্টাইন। ৪০ মিনিটে করা অ্যারন সেলের গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ২০০তম দলটি। তবে ম্যাচে ফিরতে বেশি সময় নেয়নি সান মারিনো। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই স্কোরলাইন ১-১ করেন লরেনসো লাসারি। এরপর ৬৬ মিনিটে নানির পেনাল্টি গোল ও ১০ মিনিট পর আলেসান্দ্রো গলিনুচির গোলে শেষ পর্যন্ত ৩-১ ব্যবধানের জয় পায় সান মারিনো।
তাতে কয়েকটি প্রথমের সাক্ষী হয়ে ইতিহাসের পাতায় ওঠে ম্যাচটি। এক ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ৩ গোল, পিছিয়ে পড়ে ঘুরে দাঁড়ানো জয়, এক বছরে একাধিক জয়, কিংবা প্রতিপক্ষের মাঠে জয়- সবগুলোই প্রথম অভিজ্ঞতা ছিল সান মারিনোর।
এ সাফল্যে আরও একটি ‘প্রথম’ যোগ হয়েছে দলটির নামের পাশে। নেশনস লিগে ‘ডি’ স্তরে গ্রুপ-১ এ ৪ ম্যাচে ২ জয় আর ১ ড্রতে ৭ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে থাকায় দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নেশনস লিগের ‘সি’ স্তরে উন্নীত হয়েছে সান মারিনো। একই গ্রুপে সমান ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে জিব্রাল্টার, আর তৃতীয় স্থানে থাকা লিখটেনস্টাইনের পয়েন্ট ৪।