গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জায়নবাদ সংক্রান্ত একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন সাবেক ইংলিশ স্ট্রাইকার ও বিবিসির জনপ্রিয় ফুটবল অনুষ্ঠান ‘ম্যাচ অব দ্য ডে’র উপস্থাপক গ্যারি লিনেকার। তাঁর ওই পোস্ট ঘিরে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। এক পর্যায়ে পোস্ট ডিলিট করে ক্ষমা চাইতেও বাধ্য হন।
বিতর্কের জেরে এবার বিবিসি-ই ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লিনেকার। আগামী রোববার লিনেকারের উপস্থাপনায় ‘ম্যাচ অব দ্য ডে’র শেষ পর্ব প্রচারিত হবে। সাবেক ইংলিশ তারকা নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।
৬৪ বছর বয়সী এ ফুটবল বিশ্লেষক এফএ কাপ ও বিশ্বকাপ পর্যন্ত ‘ম্যাচ অব দ্য ডে’র উপস্থাপনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এক ‘বিতর্কিত’ পোস্টের জেরেই সময়ের আগেই সরে যেতে হচ্ছে তাঁকে।
তা লিনেকারের পোস্টে কী এমন ছিল? জায়নবাদ নিয়ে সাবেক ইংলিশ স্ট্রাইকারের পোস্টে ইঁদুরের একটি ইলাস্ট্রেশন ছিল। অতীতে এ ধরনের ছবি ইহুদিবিদ্বেষ হিসেবে ব্যবহৃত হত। লিনেকার ইহুদিদের অপমান করেছেন, এ অভিযোগেই সমালোচনা শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
সোমবার ওই বিতর্কিত ছবি নিয়ে লিনেকার জানান, ইঁদুরের ছবিটা তিনি খেয়াল করেননি। আর ইচ্ছেকৃতভাবে কখনোই তিনি ইহুদিবিদ্বেষী কিছু শেয়ার করতেন না। এ প্রসঙ্গে ক্ষমা চেয়ে সাবেক বার্সা তারকা বলেছেন, ‘আমি স্বীকার করছি আমার ভুল হয়েছে। আর সে জন্য যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য আমি আবারও দুঃখপ্রকাশ করছি। এখন সরে দাঁড়ানোই যথার্থ বলে মনে হচ্ছে।’
বিসিবির কালচার এন্ড মিডিয়া এডিটর কেটি রাজেল জানিয়েছেন, লিনেকার এর আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। তবে এবারের ঘটনাটি সব সীমা অতিক্রম করেছে, ফলে লিনেকারকে আর ধরে রাখা সম্ভব ছিল না বলে জানান তিনি।
বিবিসিরি মহাপরিচালক টিম ডেভি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গ্যারি (লিনেকার) ভুল স্বীকার করেছেন। আমরা একমত হয়েছি, এ মৌসুমের পর তিনি (ম্যাচ অব দ্য ডের) উপস্থাপনা থেকে সরে যাবেন।’
তবে দীর্ঘ সময় ধরে বিবিসির ‘ম্যাচ অব দ্য ডে’ অনুষ্ঠান চালিয়ে নেওয়ার জন্য লিনেকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি ডেভি, ‘দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিসিবির ফুটবল কাভারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর ছিলেন গ্যারি। ফুটবলের প্রতি তাঁর প্যাশন ও জ্ঞান আমাদের ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে নতুন রূপ দিয়েছে। যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বজুড়ে ক্রীড়াপ্রেমীদের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। তাঁর অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
এদিকে বিবিসি ছাড়ার ঘোষণায় লিনেকার বলেছেন, ‘মাঠে কিংবা স্টুডিওতে- ফুটবলকে ঘিরেই আমার জীবন। আমি এ খেলাটিকে ভীষণ ভালোবাসি। একইসঙ্গে বহু বছর ধরে বিসিবির সঙ্গে কাজ করাটাও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যেমনটা আমি আগেও বলেছি, আমি কখনোই জেনেশুনে ইহুদিবিদ্বেষী শেয়ার করতাম না। এটা সবসময়ই আমার মূল্যবোধের পরিপন্থি।’
ওই ঘটনায় আবারও ক্ষমা চেয়েছেন লিনেকার, ‘আমি স্বীকার করছি আমার ভুল হয়েছে। আর সে জন্য যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য আমি আবারও দুঃখপ্রকাশ করছি। এখন সরে দাঁড়ানোই যথার্থ বলে মনে হচ্ছে।’
এই লিখিত বিবৃতিটির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও-ও শেয়ার করেছেন লিনেকার। সেই ভিডিও বার্তাতেও প্রায় একই কথার পুনরাবৃত্তি করে লিনেকার বলেছেন, ‘যদি ওই ইমোজি (ইঁদুরের) খেয়াল করতাম, যেটা ভয়ংকর অর্থ বহন করে, তাহলে আমি কখনোই ওরকম পোস্ট শেয়ার করতাম না। ওটা সত্যিই একটা ভুল ছিল। আমার আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল।’