ক্লাব বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ১০ গোল খাওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে বেনফিকার কাছেও ৬ গোল হজম করেছিল অকল্যান্ড সিটি। অপেশাদারদের নিয়ে গঠিত নিউজিল্যান্ডের ক্লাবটি গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বোকা জুনিয়র্সের কাছেও গোলবন্যায় ভেসে যাবে, এমনটা অনুমিত ছিল।
কিন্তু সে অনুমান পুরোপুরি ভুল প্রমাণ করেছে অকল্যান্ড। গতকাল মঙ্গলবার রাতে আর্জেন্টাইন শীর্ষস্তরের ক্লাবটির সঙ্গে অবিশ্বাস্যভাবে ১-১ গোলে ড্র করেছে প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক, ইন্স্যুরেন্স ব্রোকার, বিক্রয় প্রতিনিধি, গাড়ির রিটেইলার এবং শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গড়া দলটি।
বোকার গোলটি আত্মঘাতী। আর দ্বিতীয়ার্ধে অকল্যান্ডের হয়ে ‘ইতিহাসগড়া’ গোলটি করেন শরীরচর্চা শিক্ষক ক্রিস্টিয়ান গ্রে। আর এ ড্র-তে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনার স্মৃতি বিজড়িত বোকা জুনিয়র্সের।
বোকা জুনিয়র্সের নকআউটে ওঠার সমীকরণ সহজ ছিল না। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বেনফিকার সঙ্গে ড্র (২-২) করার পর বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরেছিল আর্জেন্টাইন ক্লাবটি। শেষ আটে উঠতে একদিকে অকল্যান্ডের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জিততে হতো বোকাকে, সঙ্গে চেয়ে থাকতে হতো বায়ার্ন-বেনফিকা ম্যাচের দিকেও। ওই ম্যাচে বেনফিকার বিপক্ষে বায়ার্ন বড় ব্যবধানে জিতলে শেষ ষোলোতে ওঠার সুযোগ তৈরি হতো বোকা জুনিয়র্সের।
কিন্তু একই সময়ে শুরু হওয়া ম্যাচে গতকাল বেনফিকার কাছে ১-০ ব্যবধানে হেরে বসেছে বায়ার্ন। তাই অকল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলেও কোনো লাভ হতো না বোকার। এরপরও শেষটা জয়ে রাঙাতে পারত। কিন্তু এক শরীরচর্চা শিক্ষকের গোলে হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে বোকাকে।
ম্যাচ সমতায় শেষ হলেও ম্যাচজুড়ে আক্রমণে একক আধিপত্য দেখিয়েছে বোকা জুনিয়র্স। ৭৪ শতাংশ বলের দখল রাখার পাশাপাশি ৪১টি শট নিয়েছিল বোকা, যার ১০টিই ছিল গোলমুখে। অন্যদিকে অকল্যান্ড ৩টি শট নিয়ে ২ গোলমুখে রেখেই একবার সফল হয়েছে!
শুরু থেকে আক্রমণের ঝড় বইয়ে দেওয়া বোকা জুনিয়র্স গোলের দেখা পায় ২৬ মিনিটে। কর্নার থেকে বক্সের ভেতর বল পেয়ে হেড করেছিলেন লওতারো দে লল্লো। আর্জেন্টাইন সেন্টারব্যাকের হেড বারে লেগে ফিরতি বল অকল্যান্ড গোলকিপার নাথান গ্যারোর শরীরে লেগে দিক বদলে আশ্রয় নেয় জালে। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় বোকা।
৪২ মিনিটে একইভাবে দ্বিতীয় গোলের দেখা প্রায় পেয়ে গিয়েছিল মিগুয়েল রোসোর দল। বক্সের বাইরে থেকে কার্লোস পালাসিওসের শট বার ও পোস্টের সংযোগস্থলে লেগে ফিরতি বল গ্যারোর শরীরে লেগে আবার গোললাইনের দিকে যাচ্ছিল। পড়িমরি করে কোনোমতে এ যাত্রায় বোকাকে গোলবঞ্চিত রাখেন অকল্যান্ড গোলকিপার।
দ্বিতীয়ার্ধে কাঙ্ক্ষিত সেই গোলের দেখা পেয়ে যায় অকল্যান্ড। ম্যাচের ৫২ মিনিটে জেরসন লাগোসের কর্নারে হেডে স্কোরলাইন ১-১ করেন ক্রিস্টিয়ান গ্রে।
৫৯ মিনিটে আরেকবার জালে বল জড়িয়েছিল বোকা। কেভিন জেনসেন পাসে মিগুয়েল মেরেন্তিয়েলের শট আশ্রয় নিয়েছিল অকল্যান্ডের জালে। তবে মেরেন্তিয়েলকে পাস দেওয়ার আগে হাতে বল লেগেছিল জেননের। ভিএআর যাচাই করে গোলটি বাতিল করে রেফারি। শেষদিকে বহু চেষ্টা করেও আর গোল আদায় করতে পারেনি বোকা।
বোকা যেখানে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ার হতাশায় ম্লান, সেখানে এক গোল দিয়ে ড্র করতে পারাটাই অকল্যান্ডের কাছে স্বপ্নপূরণের মতো। নিউজিল্যান্ডের ক্লাবটির গোলদাতা গ্রে-র ভাষায়, ‘এখান থেকে অনেক দূরের একটা ছোট শহর থেকে এসেছি আমি। এখানকার পরিবেশ একদমই আলাদা। তাই এটা (গোল) অনেকটা স্বপ্নের মতো।’
অকল্যান্ডের অধিকাংশই নিজের খরচে ক্লাব বিশ্বকাপে খেলছেন। অন্য পেশায় নিজের কাজ ঠিকঠাক করার পরও ফুটবল চালিয়ে গেছেন। এমন একটা দল নিয়ে গ্রুপ পর্বে ১ পয়েন্ট পাওয়াটাকেই বড় অর্জন মনে করছেন অকল্যান্ড কোচ পল পোসা।
অকল্যান্ড কোচের ভাষায়, ‘আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না, আমাদের কেমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমাদের ক্লাবটা ছোট, কিন্তু হৃদয়টা বিশাল। আজ আমরা টুর্নামেন্ট থেকে পরিশ্রমের ন্যায্য পুরস্কার পেয়েছি।’
প্রথম দুই ম্যাচে ১৬ গোল খেলেও শিষ্যদের ওপর বিশ্বাস হারাননি দোসা, সেটা উঠে এসেছে তাঁর কথাতেই, ‘সবসময় ভাবছিলাম, আমাদের একটা গোল করতেই হবে। আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি। প্রথমার্ধে ভাগ্যের কিছুটা সহায়তা পেয়েছি। কিন্তু জানতাম, আমরা গোল পাব।’
গোলদাতা গ্রে জানিয়েছেন, এ টুর্নামেন্টে তাঁর আজকের গোলটি ছিল চার বছরের কঠোর পরিশ্রমের ফসল। গ্রের ভাষায়, ‘এ পথচলাটা কঠিন ছিল। কিছু ম্যাচে আমরা বাজে ফল দেখেছি। কিন্তু আমি দলকে নিয়ে খুশি। আমার মনে হয়, এটা (গোলটা) আমার প্রাপ্য।’