পিরোজপুরের নাজিরপুরে অবৈধভাবে একটি মাদরাসার সরকারি বই বিক্রির সময়ে স্থানীয়দের হাতে দেড় টন বই, পরীক্ষার খাতা, পাচঁটি টিউওবয়েলের মাথাসহ স্থানীয় একটি ব্রিজের এঙ্গেল ধরা পড়েছে। বিক্রি হওয়া বইসহ মালামাল জব্দ করে স্থানীয়রা।
শুক্রবার দুপুরে মাদরাসা মাঠে স্থানীয় জনতার সামনে জব্দকৃত বইসহ মালামাল পুলিশ হেফজাতে রাখা হয়। এসব বই উপজেলার দেউেলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়নের বিল ডুমুরিয়া নেছারিয়া সিনিয়র (আলিম) বালিকা মাদরাসার।
জানা যায়, মাদরাসাটির অধ্যক্ষ মো. একে এম ফজলুল হক অবৈধভাবে বইসহ মালামাল বিক্রির জন্য চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নুরুল হককে বলেন। অধ্যক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী দপ্তরি নুরুল হক স্থানীয় এক ভাঙাড়ি ক্রেতা মামুনের কাছে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মাদরাসার ১৫শত কেজি বই বিক্রি করে দেন। তার সঙ্গে টিওবয়েলের মাথা ও ব্রিজের এঙ্গেলও বিক্রি করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই পুরাতন বইয়ের সঙ্গে ২৫ সালের নতুন বইও আছে। পুরাতন বইয়ের মধ্যে ২১, ২২, ২৩, ২৪ সালের বইয়ের ব্যান্ডিল এখনো খোলা হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ চাহিদার চেয়েও বেশি বই সংগ্রহ থাকলেও ওই অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের কোনো বই দিতেন না।
রাতে বই বিক্রি করতে দেখা নান্না মিয়া বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে সুপারের কথা বলে বই বিক্রি করেছেন মাদরাসার দপ্তরি নুরুল হক।’
মোমেন ইসলাম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে বরিশাল থেকে বাড়িতে আসি। দেখি একটি ট্রালারে বই রাখা, উপরেও আছে। কিছুক্ষণ পরে দেখি ট্রলারটি ছেড়ে গেছে। দপ্তরিকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, কিছু বই বিক্রি করেছি ১৫ টাকা কেজি দরে।’
মাদরাসার দপ্তরি নুরুল হক বলেন, ‘প্রিন্সিপাল হুজুর দরদাম করেছেন। আমাকে বলেছে মাইপা দিতে। দুটি চাবি রুমের একটা শরীফ ও আর একটা অফিস সহকারীর কাছে। শরিফ ভাই আসতে দেরি হওয়ায় আমি মাদরাসার চাবি এনে বই বের করে দিই। বই, খাতা, সাদা কাগজ ও লোহা পঁচিশ হাজার তিনশত টাকায় বিক্রি করি।’
মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. একে এম ফজলুল হক বলেন, ‘বইগুলো পুরাতন। কিছু বই বন্যার পানিতে ভেজা আছে, ছাত্রীদের ফেরত দেওয়া। আমাদের পরীক্ষার খাতাও আছে। এগুলো বিক্রির জন্য বলেছি। এ বছরের অল্প কয়ডা বই পেয়েছি। এগুলো সব প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে। তারপর কী হইছে আমি বলতে পারি না। পরে থাকা টিওবয়েল বিক্রির জন্য বলেছি। ২০২৫ সালের অল্প কয়ডা বই পাইছি, এটা বিক্রির ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। ইউএনও স্যার ও ম্যাধমিক অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি যে, স্যার আমি অনুমতি ছাড়া বই বিক্রি করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দেন।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে আমার কাছে খবরটা পৌঁছে। অধ্যক্ষকে ফোনকলে প্রশ্ন করলে বলেছেন, পুরান খাতাপত্র, একটা কলের মাথা আর কয়টা পুরান বই বিক্রি করছেন। তিনি সরকারি কোনো বই বিক্রি করতে পারেন না। অতিরিক্ত বই থাকলে সেটা উপজেলায় জমা দেওয়ার নিয়ম। বিক্রি করতে চাইলে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে বিক্রি করতে হবে। বিক্রির সকল টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। না দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বই ক্রেতা মামুন বলেন, ‘আমাকে প্রিন্সিপাল হুজুর ফোনকল দিয়ে বলেছেন, কিছু পুরান বই আছে। ১২-১৪ কেজি মাল হবে। পাচঁটি কল কিনছি ৫০ টাকা কেজি ধরে। মোট দাম হয়েছে ২৫ হাজার ৩শত টাকা।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুপ রতন সিংহ বলেন, ‘বিনা অনুমতিতে পাঠ্যপুস্তকসহ কিছু মালামাল বিক্রির অভিযোগ এসেছে। অভিযোগটা তদন্ত করার জন্য থানা পুলিশকে বলেছি। থানা পুলিশ সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’
নাজিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহমুদ আল ফরিদ ভূইয়া বলেন, এ বিষয়ে বৈঠাকাটা তদন্তকেন্দ্রের অফিসার গেছে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’