রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রীন কোজি কটেজে আগুনের ঘটনায় নিহতের মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যায়ের দুই শিক্ষার্থীও আছেন। এরা হলেন নাহিয়ান আমিন ও লামিশা ইসলাম।
বৃহস্পতিবার রাতে লাগা ভয়াবহ এ আগুনে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৪৬। ফায়ার সার্ভিসের ১৩ ইউনিটের চেষ্টায় দুই ঘন্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুড়ে গেছে বাণিজ্যিক ভবনটি। ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা।
জানা গেছে, নিহত লামিশা বুয়েটের মেকানিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী। তাঁর বাবা পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি নাসিরুল ইসলাম শামিম।
আর নাহিয়ান একই ব্যাচের ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী। তাঁর গ্রামের বাড়ি বরিশাল।
বৃহস্পতিবার রাতেই নাহিয়ানের মৃত্যুর খবর জানিয়ে নটরডেম কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়।
নাহিয়ানের মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টের মাধ্যমে তাঁর বন্ধু জুনায়েদ বলেন, 'নাহিয়ান একবার আমাকে বলেছিল, এখানে থাকলে একদিন হয় রোড এক্সিডেন্টে মারা যাব, না হলে আগুনে পুড়ে। এত দ্রুত নাহিয়ানের কথা সত্যি হয়ে যাবে কল্পনাও করতে পারিনি।'
নাহিয়ানের আরেক বন্ধু তৌসিফ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, বরিশাল জিলা স্কুলের সাবেক ছাত্র নাহিয়ানের সঙ্গে আগামীতে অনেক আড্ডা ও গেট টুগেদারের পরিকল্পনা ছিল তাদের। সব কিছু অকল্পনীয়ভাবে এক নিমিষে শেষ হয়ে গেল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেঁটে দেখা যায়, মৃত্যুর ১৯ ঘণ্টা আগেও ফেসবুকে ২৯ ফেব্রুয়ারি লিপ ইয়ায়ের দিনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে নাহিয়ান লিখেছিল, 'হয়তো চার বছর পর আবার ২৯ ফেব্রুয়ারির এমন একটা দিনের দিকে ফিরে তাকাব।'
নাহিয়ানের দেওয়া শেষ পোস্টটির স্ক্রিনশট ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে রাতে আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছিলেন, ‘আমাদের একজন সহকর্মীর মেয়ে মারা গেছেন।’
পরে জানা যায়, সেই মেয়েটিই নিহত লামিশা ইসলাম।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায় ভবনটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। ৯টা ৫৬ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট কাজ শুরু করে। একে একে যোগ দেয় ১৩টি ইউনিট।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। মূহুর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে।
প্রথম দুই ঘণ্টা কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে রাত ১২টার পর থেকে আহত ব্যক্তিদের ভবন থেকে বের করে আনা হয়।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, পুরো ভবনে অসংখ্য গ্যাস সিলিন্ডার মজুত ছিল। এমনকি সিঁড়িতেও মজুত ছিল সিলিন্ডার। ফলে ভবনটিতে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তা দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে।
ভবনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ভবনটিতে কাচ্চি ভাই, পিৎজা ইন, স্ট্রিট ওভেন, খানাসসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়া ইলিয়েন, ক্লোজেস্ট ক্লাউডসহ বেশকিছু জনপ্রিয় পোশাকের দোকানও রয়েছে।
ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস।