জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২-এ আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন অভিনেত্রী রওশন আরা রোজিনা। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে তাঁর হাতে সম্মাননা তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে এই অভিনেত্রী তাঁর নাম বদলে যাওয়ার প্রসঙ্গ অবতারণা করেছেন। বক্তব্যে তিনি বললেন, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২২ প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাঁর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না। ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। এ অনুষ্ঠানে আমি মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। বঙ্গবন্ধু দেশের শিল্প-সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্র বিকাশে এফডিসি প্রতিষ্ঠাসহ অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ফলে আমরা চলচ্চিত্র ও নাট্যকর্মী হবার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আমি রাজবাড়ির গোয়ালন্দের রেনু আজ আপনাদের সবার পরিচিত রোজিনা হতে পেরেছি।’
প্রসঙ্গত, ১৯৭৬ সালে ‘জানোয়ার’ চলচ্চিত্রে প্রথমবার অভিনেত্রী হিসেবে রোজিনাকে দেখতে পেয়েছিলেন দর্শকরা। এরপর এফ কবীর চৌধুরী পরিচালিত ‘রাজমহল’ ছবিতে নায়িকা হিসেবে তাঁর অভিষেক ঘটে। তখন অভিনেত্রীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় রোজিনা। এক সাক্ষাৎকারে রেনু থেকে রোজিনা হয়ে ওঠার গল্প শুনিয়েছিলেন তিনি।
বলেছিলেন, ‘‘‘রাজমহল’ সিনেমায় একক অভিনেত্রী হিসেবে আমার রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে। তখন রেণু নামেই অভিনয় করেছিলাম। পরে ‘মিন্টু আমার নাম’ ছবিতে অভিনয়ের সময়ে মহিউদ্দিন স্যার আমার নাম দিলেন রোজিনা। এর মধ্যে ‘আয়না’ নামে আরেকটি সিনেমা করছিলাম মশিউর সাহেবের। সেখানে আমার নাম দেওয়া হয়েছে শায়লা। তখন আমার কিছু বলার ছিল না। পরে ‘মিন্টু আমার নাম’ সিনেমার পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হলো, আমার নাম রোজিনা। সিনেমার গল্পের চরিত্রের নামও রাখা হল রোজিনা। যেন পপুলার হয়। পরে মহড়া চলল। তারপর থেকে রোজিনা নামেই পরিচিতি পেলাম।’’
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের মেয়ে রোজিনা। ছোটবেলা থেকেই সিনেমার প্রতি প্রবল টান। নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই একসময় মাকে নানা বাড়ি বেড়ানোর কথা বলে পালিয়ে ঢাকায় চলে এসেছিলেন। বাকিটা ইতিহাস। তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিন শ’ ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। শুধু দেশেই নয়; ভারত-শ্রীলঙ্কার চলচ্চিত্রেও দেখা গেছে তাঁকে।
আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তির অনুষ্ঠানে রোজিনা বলেন, ‘আমার এই দীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবনের পথচলায় যাঁরা আমাকে সহযোগিতা করেছেন, আমার প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী-কলাকুশলী, সাংবাদিক, সর্বোপরি আমার দর্শকদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আজ আমি আমার এই পুরস্কার তাঁদের সকলকে উৎসর্গ করছি।’
এ অভিনেত্রীর উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘জানোয়ার’, ‘রাজমহল’, ‘মাটির মানুষ’, ‘চম্পা চামেলী’, ‘আনারকলি’, ‘শাহী দরবার’, ‘সুলতানা ডাকু’, ‘কসাই’ প্রভৃতি।