শুরুতে প্রথম সিজনের রিক্যাপ। এতে বেশ সুবিধাই হয়েছে দর্শকদের। কষ্ট করে আর মাথা খাটাতে হয়নি। রিক্যাপের পরপরই নতুন গল্পে ঢুকে যাওয়া গুলির মতো। এই পুরো রূপান্তর প্রক্রিয়াটি ছিল মসৃণ। ঠিক যেমন সাবলীলতা পাওয়া গেছে সিজন টু‑এর সবগুলো পর্বেই। তবে কি এবারের ঈদের সেরা সিরিজ অ্যালেন স্বপনের দ্বিতীয় কিস্তি?
চাঁদ রাতে মুক্তি পেয়েছে ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন: সিজন টু’। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি’তে মুক্তি পাওয়া এই সিরিজটি এবারের ঈদের বিনোদনে অন্যতম আকর্ষণ ছিল। এর আগের সিজন মুক্তি পেয়েছিল ২০২৩ সালের এপ্রিলে। সেই হিসাবে পাক্কা দুই বছরের বিরতিতে এল সিজন টু। এবং এক কথায়, অ্যালেন স্বপন ফিরেছে সেরা রূপেই।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উপযোগী হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন: সিজন টু’। সিজন ওয়ানও তেমনটাই ছিল। পরিচালনায় আছেন শিহাব শাহীন। ক্রাইম, থ্রিলার ঘরানার এই সিরিজের এবারের গল্প নিয়ে চরকি লিখেছে, ‘স্বপন তার ছদ্মপরিচয় টিকিয়ে রাখতে হত্যা ও প্রতারণার পথে এগিয়ে যেতে থাকে। ৪০০ কোটি কালোটাকা সাদা করার চেষ্টায় স্বপনের সঙ্গে পরিচয় হয় আর্ট গ্যালারির সুন্দরী কিউরেটর দিশার। অবৈধ টাকা আর ক্ষমতা খাটিয়ে ব্যাংক দখলের মিশনে নামে স্বপন। অন্যদিকে স্বপনের চোরাবালিতে আরও তলিয়ে যেতে থাকে শায়লা।’
এতটুকু জেনে বোঝাই যায় যে, অ্যালেন স্বপনের কেরদানি এবার আরও বিস্তারিত দেখা যাবে। এগিয়েছেও সেভাবে। প্রথম পর্বেই দর্শকদের গল্পের সাথে জড়িয়ে ফেলার মুনশিয়ানা পরিলক্ষিত হয়েছে। এরপর আসলে ৭টি পর্বই তরতর করে এগিয়েছে। চিত্রনাট্যে খাদ নেই একেবারেই। বেশ জমাট। অপ্রয়োজনীয় দৃশ্য এবং এর মাধ্যমে গল্প টেনে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও নেই। বরং দর্শকেরা অ্যালেন স্বপনের জীবনের যাত্রার সঙ্গী হতে পারবেন সহজেই। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই সিরিজ দেখা আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
সিজন টু’তে অভিনয় করেছেন নাসির উদ্দিন খান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, জেফার রহমান, আইমন শিমলা, ইন্তেখাব দিনার, সুমন আনোয়ার প্রমুখ। নাসির উদ্দিন খান কোন চরিত্রে অভিনয় করেছেন, সেটি নিশ্চয়ই আর বলে দিতে হয় না। মূলত এই অভিনেতার অসাধারণ নৈপুণ্যেই অ্যালেন স্বপন একটি জনপ্রিয় চরিত্র হয়ে উঠেছে। চরিত্রের জনপ্রিয়তা ধরে রাখা একটি বিশাল চাপ। দর্শকদের এক্ষেত্রে নতুন কিছু উপহার দিতেই হয়। আবার প্রত্যাশাও মেটাতে হয়। এই দুটি কাজই পর্দায় দারুণভাবে করে দেখিয়েছেন নাসির উদ্দিন খান।
অ্যালেন স্বপন রূপে তাঁর শরীরী ভাষা, সংলাপ বলা–সবই ছিল অসাধারণ। আসলে সিজন টু দিয়ে অ্যালেন স্বপনের চরিত্রটিকে একেবারেই প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন নাসির। চরিত্রটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে। মনে রাখতে হবে যে, অ্যালেন স্বপন একটি পূর্ণ মাত্রার খলচরিত্র। সে এতটাই খারাপ যে, স্বার্থের জন্য নিজের ছেলের জীবনও বাজি রাখতে পারে। অর্থাৎ, তার মধ্যে যে নৈতিকতা বা অনৈতিকতার বোধ আছে, সেটি সমাজের প্রচলিত মানের ঠিক উল্টো। সেটি একদমই নিজস্ব স্বার্থের ছাঁচে তৈরি। এমন একটি চরিত্রকে সাধারণ দর্শকের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলাটা খুবই কঠিন। অথচ সেই কঠিন কাজটি অবলীলায় করে দেখিয়েছেন নাসির উদ্দিন খান। এর জন্য এই শক্তিশালী অভিনেতাকে টুপি খোলা অভিবাদন জানানোই উচিত। এক কথায়, একাই পুরো সিরিজের ভরকেন্দ্র হয়ে ছিলেন নাসির।
এর বাইরে শায়লা চরিত্রে রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, গ্যাংস্টার হিসেবে সুমন আনোয়ার ছিলেন আগের মতোই। কোনো অভিযোগ করার সুযোগ তাঁরা দেননি। তবে দিশা হিসেবে জেফার রহমানের অভিনয় চমকে দেওয়ার মতো। গায়িকা হিসেবে পরিচিত জেফার এর আগেও কিছু চরিত্রে অভিনয় করেছেন বটে। তবে অ্যালেন স্বপনের দিশা হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে জেফার ছিলেন খুবই সাবলীল। পর্দায় নাসির উদ্দিন খানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। ফলে চরিত্রের রসায়ন ছিল দেখার মতো।
‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন: সিজন টু’ চোখের জন্য ছিল আরামদায়ক। রেগুলার শটের পাশাপাশি কিছু ড্রোন শটও ছিল এবং সেগুলো দেখতে সত্যিই ভালো লেগেছে। এ ছাড়া আবহ সংগীতও ছিল উপযুক্ত।
‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’‑এর সিজন ওয়ানের তুলনায় সিজন টু অনেক বেশি ত্রুটিমুক্ত, সলিড। সিজন ওয়ানে বেশ কিছু জায়গায় হোঁচট খেতে হয়েছিল। তবে পথের খানাখন্দ এড়িয়ে, অপ্রয়োজনীয় ইট‑পাথর সরিয়ে এবারের অ্যালেন স্বপন অনবদ্য। ঈদের রিলিজ হিসেবে মানানসই। আবার সিজন টু‑এর শেষে এসে নতুন সিজনের ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে এমনভাবে যে, অপেক্ষার প্রহর গোণার বিষয়টি মনে গেঁথে যাচ্ছে সানন্দে।
সাধারণত আমাদের দেশের ওয়েব সিরিজগুলোর সিজন টু’তে সফল হওয়ার হার কম। সেদিক থেকে ব্যতিক্রমী উদাহরণ তৈরি করেছে ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন: সিজন টু’। সিজন ওয়ান ওয়াজ গুড, সিজন টু ইজ মাচ মাচ বেটার। সেটা এতটাই যে, তৃতীয় সিজনের আগমনী ঘোষণা আসার আগ পর্যন্ত অ্যালেন স্বপনের একটি সংলাপ ধার করে বলে দেওয়াই যায়–‘মিস করব কিন্তু!’