সন্তান স্কুল থেকে ফিরেছে, দরজা খুলে ঘরে ঢুকেছে মাত্র। আপনি বললেন, ‘আজ ক্লাস কেমন হলো?’ কিংবা ‘কুইজ কেমন দিয়েছ? অথবা ‘হোমওয়ার্ক ঠিকমতো হয়েছে কিনা’ এসব প্রশ্ন আমরা প্রতিদিনই করি, একেবারে স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, এই প্রশ্নগুলো ওদের মনের ওপর প্রভাব ফেলছে কিনা?
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্যারেন্টিং বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘স্কুল থেকে সন্তান বাড়ি ফিরলেই একগাদা প্রশ্ন করবেন না। এগুলো তাকে আরও চাপ অনুভব করায়। বরং হালকা কথা দিয়ে আলাপ শুরু করা উচিত।’ সন্তানদের প্রথমেই জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে কেমন মজা করেছ?’ বা ‘কার টিফিন আজকে বেশি মজা ছিল?’
এই প্রশ্নের মধ্যে কোনো প্রতিযোগিতা নেই। ক্লাসে ভালো করা বা খারাপ করা নিয়ে কোনো পারফরম্যান্সের চাপ নেই। বরং এতে রয়েছে একটুখানি যত্ন আর মনোযোগ। এমন প্রশ্ন শুনে সন্তানরাও স্বস্তি পায়। ভাবে, মা-বাবা শুধু রেজাল্ট বা নাম্বার দেখেন না, আমাকেও দেখেন। আমার মনের কথাও বুঝতে চান।
বর্তমানে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বেড়েছে অনেক। স্কুল, কোচিং, পরীক্ষা, প্রতিযোগিতা, সবকিছুর ভার যেন ওদের কাঁধেই। তার ওপর বাবা-মার চাপ, সবচেয়ে ভালো হতে হবে, নাম্বারে পেছনে থাকা যাবে না। এসব মিলিয়ে তারা প্রায়ই মানসিক চাপে ভোগে। এই চাপ কিন্তু অনেক সময়ই আসে পরিবারের ভিতর থেকেই, অজান্তে।
এই বিশেষজ্ঞ বলছেন, সন্তান যদি বুঝতে পারে, তার ব্যর্থতা হলেও মা-বাবা পাশে থাকবেন। তখনই সে নিজের ভয়-দুশ্চিন্তার কথাও খোলাখুলি বলতে পারবে। জানাবে পরীক্ষায় খারাপ হয়েছে, মন খারাপ। তখনই গড়ে উঠবে পারস্পরিক বিশ্বাস। সন্তান জানবে, মা-বাবা শুধু সফল সন্তান নয়, একজন মানুষ হিসেবেও তাকে ভালোবাসেন।
আমাদের দেশের পরিবারগুলোর একাডেমিক সাফল্যের পেছনে দৌড়টা যেন একটু বেশিই। বাবা-মা নিজেরাও চাপে থাকেন, সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে। কিন্তু একটু ভালোবাসা, একটু বোঝাপড়া, সময়মতো বলা ছোট্ট এক প্রশ্ন, সবকিছু বদলে দিতে পারে।
তাই আজ থেকে একটু বদলে ফেলুন অভ্যাস। স্কুল থেকে ফিরে আসা সন্তানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করুন, ‘আজ টিফিনে কী খেয়েছিলে?’ হয়তো সেদিন দুপুরে তার পছন্দের খাবার ছিল না। হয়তো ছিল নতুন কোনো গল্প। কিন্তু আপনি শুনতে চাচ্ছেন, এটুকুই ওর কাছে বড় স্বস্তির। সন্তানের পাশে থাকুন, প্রশ্ন দিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়ে।
তথ্যসূত্র: টাইমস নাউ