বাংলাদেশের বাজারে ব্যবসা করার অনুমোদন পেয়েছে স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদানকারী আমেরিকান প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) গত ২৯ মার্চ তারিখে এই অনুমোদন দিয়েছে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংককে।
রোববার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর ইস্কাটনে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন স্টারলিংককে দেশের বাজারে ব্যবসা করার অনুমোদন প্রদানের বিষয়টি জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের ৯০ দিনের মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তার পরিপ্রেক্ষিতেই ২৯ মার্চ স্টারলিংককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বাজারে বিদেশী মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, সংক্ষেপে বিডা’র অনুমোদন ও নিবন্ধন পেতে হয়। স্টারলিংক দুটোই পেয়ে গেছে। ফলে বাংলাদেশের বাজারে স্টারলিংকের প্রবেশের পথ আরও প্রশস্থ হলো।
তবে দেশের বাজারে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে হলে আরও একটি লাইসেন্সের প্রয়োজন পড়বে স্টারলিংকের। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) নীতিমালার আওতায় এনজিএসও লাইসেন্স নিতে হবে তাঁদেরকে। উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠানকেই এনজিএসও লাইসেন্স প্রদান করা হয়নি।
বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, নন–জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) লাইসেন্সের জন্য আজই আবেদন করার কথা স্টারলিংকের। এনজিএসও লাইসেন্সটি পেয়ে গেলে দেশের বাজারে বাণিজ্যিকভাবে স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা চালু করতে আইনগত আর কোনো বাধা থাকবে না তাঁদের সামনে।
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বিডা’র আয়োজনে আগামীকাল (৭ এপ্রিল) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন। সম্মেলনের ভেন্যুতেই আগামী ৯ এপ্রিল থেকে স্টারলিংক ইন্টারনেটের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করেই সরাসরি সম্প্রচার করা হবে সম্মেলনের কার্যক্রম। এছাড়া সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরাও স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাবেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর নির্দেশ দেন। এ সম্পর্কিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানায়, প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক সম্প্রচারের ক্ষেত্রে স্টারলিংক তাঁদের বিদেশি স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড গেটওয়ে ব্যবহার করলেও বাংলাদেশে বাণিজ্যিক সেবা প্রদানে প্রতিষ্ঠানটি দেশের এনজিএসও নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় ব্রডব্যান্ড গেটওয়ে (আইআইজি) ব্যবহার করবে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের মধ্যে টেলিফোন বার্তালাপে বাংলাদেশে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়। এরপরই দেশের বাজারে স্টারলিংক ইন্টারনেট চালুর আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নেয় সরকার।
বাংলাদেশে স্টারলিংকের ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হলে দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় সহজেই পৌঁছে দেওয়া যাবে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা। ফলে শহরবাসীর মতো উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীও। এছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ইন্টারনেট-ভিত্তিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম ইলন মাস্কের স্টারলিংক। তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা স্টারলিংক ইন্টারনেট গ্রহণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এর উচ্চ মূল্যকে।
উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে ৭০টিরও বেশি দেশে ৪৬ লাখ ব্যবহারকারী বর্তমানে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করছেন।