দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলা বন্ধ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। এ কারণে বৈশ্বিক বা এশিয়া কাপে যে করেই হোক ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ আয়োজনের ব্যবস্থা করে আইসিসি। কারণ, বিজ্ঞাপনের বাজারে এই ম্যাচের মূল্য অনেক। অতীতে বেশ কয়েকবারই দেখা গেছে, শুধু এই ম্যাচের আর্থিক মূল্য টুর্নামেন্টের বাকি সব ম্যাচের সমান বা কাছাকাছি।
আইসিসি তাই এ ম্যাচ নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তায় থাকতে চায় না। নকআউটে দুই দল মুখোমুখি নাও হতে পারে, তাই গ্রুপপর্বেই এ ম্যাচের ব্যবস্থা করে রাখা হচ্ছে ২০১৬ বিশ্বকাপ থেকে। কিন্তু ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকের বেলায় একটু ঝামেলায় পড়ে গেছে আইসিসি।
১২৮ বছর পর অলিম্পিকে ফিরছে ক্রিকেট। নতুন পাঁচটি খেলার একটি হিসেবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নাম ঘোষণা করা হয়েছে ২০২৩ সালে। আর গত বুধবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ছেলে ও মেয়েদের ইভেন্টে ৬টি করে দল অংশ নেবে অলিম্পিকে। কিন্তু সে ছয় দলকে কীভাবে বেছে নেওয়া হবে, সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে জানানো হয়নি।
এই সপ্তাহান্তে জিম্বাবুয়েতে আইসিসির শীর্ষ কর্তারা মিটিং করলেও সেখানে বাছাইপর্ব নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে অলিম্পিকের বাছাই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। কারণ, ছয় দল অংশ নিলেও কার্যত সুযোগ আসলে পাবে পাঁচটি দল। কারণ, আয়োজক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যে একটি জায়গা নেবে, এ ব্যাপারে সবাই প্রায় নিশ্চিত।
আইসিসির কমিটির সদস্য এমন এক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম ইনসাইড স্পোর্টকে বলেছেন, ‘বাছাই কীভাবে করা হবে তা নির্ধারণের জন্য যথেষ্ট সময় আছে। এখনো এটা এত গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। তবে এটা কঠিন হবে কারণ ক্রিকেট অন্য খেলার মতো সরাসরি বাছাইপ্রক্রিয়া মেনে চলে না। যখন সময় হবে সবাই মিলে এ নিয়ে আলোচনায় বসবে।’
এখন পর্যন্ত দল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য যে উপায়গুলো বিবেচনা করা হচ্ছে সেগুলো হলো, একটি নির্দিষ্ট কাট-অফ সময়ের মধ্যে আইসিসি র্যাঙ্কিং, শুধু অলিম্পিকের জন্য বাছাই টুর্নামেন্ট, ২০২৬ বিশ্বকাপে পারফরম্যান্স বিবেচনা ও আমন্ত্রণমূলক।
ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচির মধ্যে আলাদা করে আরেকটি বাছাইপর্ব আয়োজন আদৌ সম্ভব হবে কিনা, এ নিয়ে সন্দেহ আছে। বিশ্বকাপে পারফরম্যান্স বা র্যাঙ্কিং বিবেচনা করলে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলোই এগিয়ে থাকবে। বর্তমানে শীর্ষ চারে আছে এই দলগুলো। এবং গত তিনটি বিশ্বকাপের বিজয়ী, নিউজিল্যান্ড গত তিন বিশ্বকাপের দুটিতে ফাইনাল খেলেছে, অন্যটিতে সেমিফাইনাল।
এদিকে পাকিস্তানকে ছাড়া কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চাইবে না আইসিসি। ভারতও চাইবে অলিম্পিকে ক্রিকেটকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উন্মাদনা কাজে লাগাতে। কিন্তু ২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা পাকিস্তান গত তিনটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টেই হতাশ করেছে। ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজ গ্রুপে সবার শেষে ছিল পাকিস্তান।
আর যুক্তরাষ্ট্রের মাঠেই হওয়া ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সহজতম গ্রুপে থাকার পরও সুপার এইটে যেতে পারেনি পাকিস্তান। ২০ দলের মধ্যে হয়েছে ১১তম। বর্তমান র্যাঙ্কিংয়েও দলটি আছে সাতে। পারফরম্যান্স বিবেচনা ও র্যাঙ্কিং- দুই দিক থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও সাউথ আফ্রিকা এগিয়ে আছে পাকিস্তানের চেয়ে।
২০২৬ সালের মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে যাওয়া বা ২০২৬ ও ২০২৮ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ওঠার মাধ্যমে পাকিস্তান নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করতে পারে। বিসিসিআইয়ের ওই কর্মকর্তা তাই এখনই আশা হারাচ্ছেন না, ‘যেমনটা বলেছি, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বা আলোচনা করা হয়নি। কোনো সন্দেহ নেই, বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। কিন্তু হাতে সময় আছে।’
তবে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে নিঃসন্দেহ হওয়ার একটা উপায় আছে। আর তা হলো অলিম্পিককে আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্টে পরিণত করা। প্রথমদিকে ফুটবল বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকের ফুটবল ইভেন্টে যেভাবে আমন্ত্রণ জানানো হতো দলগুলোকে। সে সময় এত দূরত্বে অর্থ খরচ করে দল পাঠানোর ক্ষেত্রে অনেক দলই আগ্রহ দেখাত না বলে আমন্ত্রণ জানিয়ে ডেকে আনা হতো। বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও পাকিস্তানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এই প্রক্রিয়ার দেখা মিলতেও পারে।