ঘরের মাঠে প্রথম লেগে ৪-০ গোলে জেতায় সেমিফাইনালের টিকিট নিয়ে অনেকটা নির্ভার ছিল বার্সেলোনা। মাঠের খেলাতেও এর প্রভাব পড়ে। আর সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঘরের মাঠ সিগনাল ইদুনা পার্কে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের ফিরতি লেগে মরণ কামড় দেয় বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। বার্সার বিপক্ষে টানা আক্রমণ আর আধিপত্য দেখিয়েছে সেহু গিহাসির দারুণ এক হ্যাটট্রিকে ৩-১ ব্যবধানের জয়ও তুলে নেয় জার্মান ক্লাবটি।
চলতি বছর সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে।উন টানা ২৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর প্রথমবার হার দেখল বার্সা। তবে হারলেও দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৩ ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছে বার্সেলোনা। তাতে ৬ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠল কাতালান ক্লাবটি।
এর আগে ২০১৮-১৯ মৌসুমে শেষবার চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল খেলেছে বার্সা। মাঝের ছয় বছর সেমিফাইনাল তো দূরের কথা, চ্যাম্পিয়নস লিগে একের পর এক ব্যর্থতায় বার্সা যেন টুর্নামেন্টটাতে ট্রলের বিষয়ই হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গত মৌসুমে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে, তার আগের দুই মৌসুমে বাদ পড়ে গ্রুপ পর্বেই, এর আগের মৌসুমে শেষ ষোলোয়। আর ২০১৯-২০ মৌসুমে তো কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্নের কাছে সেই ৮-২ গোলের হার নিয়েই বাদ পড়েছে! সেদিক থেকে আবার শেষ চারে যাওয়া মানে যেন বার্সার দেখিয়ে দেওয়া, তারাও গোনায় ধরার মতো দল!
গতকাল স্বাগতিক দর্শকদের সামনে ডর্টমুন্ড কতটা উজ্জ্বীবিত ছিল, সেটা পরিসংখ্যানেও স্পষ্ট। ম্যাচে বল দখলে সামান্য পিছিয়ে থাকলেও আক্রমণে একক আধিপত্য দেখিয়েছে জার্মান ক্লাবটি। ম্যাচে ১৮ শট নিয়ে ১১টিই বার্সার গোলমুখে রেখেছিল ডর্টমুন্ড, অন্যদিকে লেভানদফস্কি-লামিন ইয়ামালরা ৭টি শট নিলেও লক্ষ্যে ছিল ২টি। এরপরও প্রথম লেগের বড় ব্যবধানের জয়ই বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছে ফ্লিকের দলকে।
ম্যাচ শুরুর ৬ মিনিটের মধ্যেই তিনবার বার্সার রক্ষণ কাঁপিয়ে দিয়েছে ডর্টমুন্ড। এর একটু পরে ৯ম মিনিটে বক্সের ভেতর পাসকাল গ্রসকে ফাউল করে বসেন বার্সা গোলকিপার ভয়চেক সেজনি। অনেকটা ‘উপহার’ হিসেবে পাওয়া পেনাল্টি কাজে লাগাতে ভুল করেননি গেহাসি। দারুণ এক চিপে বোকা বানান সেজনিকে। ম্যাচে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ডর্টমুন্ড। প্রথমার্ধের বাকি সময়ও আক্রমণের ধার বজায় রাখলেও আর কোনো গোল করতে পারেনি জার্মান ক্লাবটি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দারুণ দুটি সেভে বার্সাকে রক্ষা করেন সেজনি। তবে বেশিক্ষণ গোলমুখ অক্ষত রাখতে পারেননি। ৪৯তম মিনিটে হেড থেকে দ্বিতীয় গোল পেয়ে যান গেহাসি। ম্যাচে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলেও দুই লেগ মিলিয়ে তখনও ৪-২ ব্যবধানে পিছিয়ে ডর্টমুন্ড।
প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন ধীরে ধীরে রঙিন হতে থাকে ডর্টমুন্ড সমর্থকদের। তবে সে স্বপ্নে একটু পরেই পানি ঢালে আত্মঘাতী গোল। ৫৪ মিনিটে ফেরমিন লোপেসের ক্রস বিপদমুক্ত করতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল জড়ান ডর্টমুন্ড ডিফেন্ডার রামি বেনসেবাইনি। দুই লেগ মিলিয়ে ব্যবধান আবারও বেড়ে ৫-২ হয়ে যায়। কার্যত ডর্টমুন্ডের সেমির আশাও সেখানেই ধুলিচাপা পড়ে। ম্যাচের ৭৫ মিনিটে গেহাসির গোলটা শুধু সে ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছে।
ম্যাচে খুব বেশি ভালো পারফরর্ম না করতে পারলেও টানা ৬ বছর পর আবারও সেমিফাইনাল খেলবে বার্সেলোনা। অনেকদিন পর বার্সার এমন বাজে পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন গেলে আপাতত ম্যাচের ফলের দিকে নজর দিতে বলেছেন ফ্লিক। বার্সা কোচের ভাষায়, ‘আমার মনে হয়, এখানকার সবাই চলতি মৌসুমে বার্সেলোনার পারফরম্যান্সের কথা জানে এবং প্রশংসা করে। আজ (মঙ্গলবার) আমরা সেরা খেলাটা খেলতে পারিনি। সেদিক বিবেচনায় এমন প্রশ্নের কারণ আমি বুঝি। কিন্তু তারপরও মনে হয়, আমাদের খুশি হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
ম্যাচ হারের পর ড্রেসিংরুমের অবস্থা কেমন ছিল, সেটা জানাতে ফ্লিক বলেছেন, ‘ড্রেসিংরুমের পরিবেশ খুব একটা ভালো ছিল না। এরপর আমি যখন বললাম, “ছেলেরা, আমরা সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছি।” তখন একটু প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। এটাই বোঝাচ্ছে, ওরা (খেলোয়াড়রা) নিজেদের কাছে কেমন প্রত্যাশা রাখে। ওরা প্রত্যেকটা ম্যাচ জিততে চায়। আজ তারা একটু হতাশ। কিন্তু আমার বিশ্বাস, সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দ সে হতাশাকে মুছে দেবে।’