ঘড়ির কাঁটা যখন ৯০ মিনিট ছুঁয়েছে, ম্যাচে তখন পর্যন্ত গোল হয়েছে তিনটি। একেবারে সাধারণ একটা ম্যাচই বলা যাচ্ছিল তখন পর্যন্ত। কিন্তু এরপর যা হলো, তার জন্য কেউই সম্ভবত প্রস্তুত ছিল না!
যোগ করা সময়েই দুই দল গোল করল আরও তিনটি, এর মধ্যে যোগ করা সময়ের নবম ও শেষ মিনিটে আত্মঘাতী গোলে ম্যাচে সমতা! অতিরিক্ত সময়ে গড়াল ম্যাচ। এবং সেখানেও কী হলো? আরও পাঁচ গোল!
অস্ত্রযুদ্ধে দুই পক্ষের মুহুর্মুহু গুলি বিনিময়ের কথা তো অনেকই শুনেছেন। কাল উয়েফা অনূর্ধ্ব-১৯ ইউরোর সেমিফাইনালে জার্মানি আর স্পেনের মধ্যে ৯০ মিনিটের পর যা হলো, সেটাকে বলা যায় মুহুর্মুহু গোল-বিনিময়! রেয়াল বেতিসের পাবলো গার্সিয়া স্পেনের হয়ে করেছেন চার গোল, হফেনহাইমের মাক্স মোয়েরস্টাট জার্মানির জার্সিতে করেছেন হ্যাটট্রিক। শেষ পর্যন্ত ৬-৫ ব্যবধানে জিতে ফাইনালে উঠেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেন। আগামী বৃহস্পতিবার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ অন্য সেমিফাইনালে রোমানিয়াকে ৩-১ গোলে হারানো নেদারল্যান্ডস।
২৮ মিনিটে মোয়েরস্টাটের গোলে প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল জার্মানিই, স্পেন ৬১ মিনিটে সমতায় ফেরে গার্সিয়ার গোলে। এর ফাঁকে স্পেনের আন্তোনিও করদেইরোর পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন জার্মান গোলকিপার। এরপর ৭৮ মিনিটে সাঈদ এল-গালার গোলে যখন এগিয়ে যায় জার্মানি, মনে হচ্ছিল, স্পেনের শিরোপা ধরে রাখার মিশন বুঝি এখানেই শেষ হচ্ছে।
তবে প্রতিপক্ষ জার্মানির তো আবার অনেক ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত জিততে না পারার রেকর্ড এবারের টুর্নামেন্টেই আছে! গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫-১ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ৫-৫ ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে হওয়া জার্মান যুবারা কালও যোগ করা সময়ে খেয়ে গেল দুই গোল! দুটিই গার্সিয়ার, ৯১ মিনিটে একটি, ৯৫ মিনিটে আরেকটি। তাঁর হ্যাটট্রিক হলো, স্পেন এগিয়ে গেল ৩-২ ব্যবধানে। মনে হচ্ছিল, জার্মানিই বাড়ি যাচ্ছে।
এরপর? দেখা মিলল অদ্ভুতুড়ে এক দৃশ্যের! নাটকের চূড়ান্ত!
যোগ করা সময়ের নবম মিনিটে মাঝমাঠে স্পেন অর্ধে ফ্রি-কিক পায় জার্মানি। লম্বা ক্রস গেল স্পেন বক্সে, স্পেন গোলকিপার এগিয়ে ডি বক্সের মাঝে গিয়েও বল ধরতে পারলেন না, বল গেল তাঁর মাথার ওপর দিয়ে। পড়ল পোস্টের একটু সামনে স্পেনেরই ডিফেন্ডার আন্দ্রেস কুয়েঙ্কার পায়ে। কিন্তু ক্লিয়ার করতে গিয়ে কীভাবে যেন বলটা নিজেদের জালেই ঢুকিয়ে দিলেন কুয়েঙ্কা! ম্যাচে ৩-৩ সমতা! অতিরিক্ত সময়ে গড়াল ম্যাচ!
সেখানেও আবার উত্থান-পতন। তোমা মার্কেস ৯৭ মিনিটে স্পেনকে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে দিলেন, এরপর মোয়েরস্টাট ১০৪ থেকে ১০৭ – এই চার মিনিটে দুবার গোল করে নিজের হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি জার্মানিকে এগিয়ে দিলেন ফাইনালের পথে। জার্মানি ৫:৪ স্পেন। কিন্তু তখনো গোল-বিনিময়ে স্পেনের জবাব বাকি!
ইয়ান ভিরজিলি ১১৩ মিনিটে স্পেনকে আবার সমতায় ফেরালেন। তখনো ৭ মিনিট বাকি বলে ম্যাচের শেষ মুহূর্তের নাটকের সম্ভাবনা ছিল। সম্ভাবনা বাস্তব হয়ে দেখা দিল ১১৯ মিনিটে। গোল! স্পেন! গোলদাতা? আগেই হ্যাটট্রিক পূরণ করে রাখা পাবলো গার্সিয়া। জার্মানির এবার আর জবাব দেওয়া হলো না।
টুর্নামেন্টে দুটি ম্যাচে ৫টি করে গোল করার পরও একটিতে ড্র আর একটিতে হার – নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় গলদ নিয়েই বাড়ি ফিরল জার্মানি। টুর্নামেন্টে ১২ গোল করার বিপরীতে তারা গোল খেয়েছে ১৫টি। অন্যদিকে ফাইনালে উঠে যাওয়া স্পেন ১৫ গোল করল, বিপরীতে কাল এক ম্যাচেই গোল খেল আগের সব ম্যাচ মিলিয়ে খাওয়া গোলের পাঁচ গুণ।