বিভিন্ন ত্রুটির কারণে আজ মঙ্গলবার একদিনেই বাতিল হয়েছে ভারতীয় এয়ারলাইনস এয়ার ইন্ডিয়ার অন্তত ৫টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। আর সব ফ্লাইটেই উড়োজাহাজ হচ্ছে বোয়িংয়ের ড্রিমলাইনার। এর আগে গতকাল জানা যায়, বিভিন্ন কারণে ৩৬ ঘণ্টায় ভারতগামী তিনটি ফ্লাইট ভারতে অবতরণ করতে পারেনি। এসব ফ্লাইট ফিরে গেছে জার্মানি, হংকং ও যুক্তরাজ্যে। উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটি ও বোমা হামলার হুমকির জেরে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল এসব ফ্লাইটের কর্তৃপক্ষ। সেগুলোও ছিল ড্রিমলাইনারের।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, আজ মঙ্গলবার বাতিল হওয়া ৫টি ফ্লাইটের মধ্যে রয়েছে দিল্লি থেকে প্যারিসগামী এআই ১৪৩। ফ্লাইটের আগে সাধারণ পর্যবেক্ষণের সময় ত্রুটি ধরা পড়ায় বাতিল হয় এটি। এ নিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। এ ছাড়া আগামীকাল বুধবার প্যারিস থেকে ঢাকা আসা ফ্লাইট এআই ১৪২ বাতিল করেছে তারা।
এর আগে সানফ্রান্সিসকো থেকে মুম্বাইয়ে আসা এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট কলকাতায় এসে অবতরণ করলেও আর মুম্বাই আসেনি। কারণ হিসেবে জানানো হয়, এতে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়েছে। এ কারণে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বিমানবন্দরে থেমে যেতে হয়, নামিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের।
বাতিল হওয়া বাকি ফ্লাইটগুলো হলো দিল্লি-দুবাই (এআই ৯১৫), দিল্লি-ভিয়েনা (এআই ১৫৩), আহমেদাবাদ-লন্ডন (এআই ১৫৯) ও লন্ডন-অমৃতসার (এআই ১৭০)। এ সবগুলো ফ্লাইটেই বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ব্যবহার করার কথা ছিল।
উল্লেখ্য, বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সম্প্রতি ভারতে বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছে। কারণ গত সপ্তাহে আহমেদাবাদে একটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় এই মডেলের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। ওই দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যে ২৪১ জনই নিহত হন। মোট ২৭৪ জন প্রাণ হারান। বিমানটি লন্ডনের গ্যাটউইক এয়ারপোর্টে যাচ্ছিল।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান বলছে, যদিও সম্প্রতি বোয়িংয়ের তৈরি ৭৮৭ উড়োজাহাজগুলোর ইঞ্জিনের নানা সমস্যার কারণে অনেক এয়ারলাইনসই এই মডেলটি দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রেখেছে অথবা ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়েছে, কিন্তু তারপরেও এগুলোর নিরাপত্তা পরিসংখ্যান বেশ ভালো।
গত বছর লাতাম এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ মধ্য আকাশে থাকার সময় কিছু সমস্যা তৈরি হওয়ার পর ড্রিমলাইনারের নিরাপত্তা নিয়ে তদন্ত শুরু করে মার্কিন কর্তৃপক্ষ ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)।
ওয়াশিংটনে এ সংক্রান্ত এক শুনানিতে একজন হুইসেল ব্লোয়ার বিশ্বব্যাপী বোয়িংয়ের ৭৮৭ মডেলের সবগুলো উড়োজাহাজকে গ্রাউন্ডেড করার পরামর্শ দেন। সে সময় বোয়িং সাবেক এই প্রকৌশলীর বক্তব্য খারিজ করে জানায়, উড়োজাহাজগুলোর নিরাপত্তার বিষয়ে তারা আত্মবিশ্বাসী।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রধান প্রধান এয়ারলাইনসগুলো তাদের বহরে ড্রিমলাইনার রেখেছে। এ সংখ্যা ১ হাজার ১০০টিরও বেশি। মডেলটি অন্যান্য উড়োজাহাজের থেকে অনেক বেশি জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং এতে শব্দও কম।
এর আগে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে বোয়িংয়ের ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের দুটি উড়োজাহাজ ইন্দোনেশিয়া এবং ইথিওপিয়ায় বিধ্বস্ত হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে বোয়িং। দুই দুর্ঘটনায় মোট ৩৪৬ জনের প্রাণহানি হয়। এরপর এই মডেলের উড়োজাহাজগুলো প্রায় ১ বছরের জন্য বসিয়ে রাখতে হয় বোয়িংকে। পরে নতুন করে আবারও পাখা মেলার অনুমতি পায় ৭৩৭ ম্যাক্স।
ভারতীয় অ্যাভিয়েশনের নিরাপত্তা ইতিহাস বেশ বর্ণিল। কিন্তু এয়ারলাইনস শিল্পের বিকাশ এবং যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশটির আকাশপথের নিরাপত্তায় বেশ উন্নতি হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে এয়ার ইন্ডিয়া ড্রিমলাইনার ব্যবহার করছে। বর্তমানে এর বহরে আছে এই মডেলের ৩০টি উড়োজাহাজ। সম্প্রতি যে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হলো এটি এয়ার ইন্ডিয়ার বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাধারণত উড়োজাহাজের দুর্ঘটনাগুলো ওঠা ও নামার সময়েই বেশি হয়। ফ্লাইটর্যাডারের তথ্য বলছে, দুর্ঘটনায় পড়া উড়োজাহাজটি ৬২৫ ফিট পর্যন্ত উঠেছিল। এর আগে ২০২০ সালের আগস্টে এয়ার ইন্ডিয়া সবশেষ দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। সেই বার এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭–৮০০ মডেলের উড়োজাহাজ খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে কালিকুট বিমানবন্দরে নামার সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে যায়।