ভারতের লোকসভা নির্বাচনের উত্তাপে অনেকটা চাপা পড়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি। নির্বাচন আফ্রিকার ওই দেশটিতেও হয়েছে। অনেকটা ভারতের মতোই কোনো দলই সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ভারতে নরেন্দ্র মোদিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএর শরিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হয়েছে। সেখানে একটা রফা হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সরকার গঠন করেছে এনডিএ এবং টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। গত ২৯ মে হওয়া নির্বাচনে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও কোনো দল সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কিন্তু ভারতের মতো সেখানে সরকার গঠন করা যায়নি এখনো। নানা বিকল্প নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে এখনো আলোচনা চলছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় না। দেশটির পার্লামেন্টের মোট ৪০০ আসনের নির্বাচিত সদস্যদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। তবে এই ৪০০ আসনের পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচন প্রক্রিয়াটি অন্য দেশগুলোর মতো নয়। এটি হয় ভোটের শতাংশ হার অনুযায়ী।
একটু ব্যাখ্যা করা যাক। এবারের নির্বাচনে দেশটির ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) পেয়েছে ৪০ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। ফলে আইনসভায় তারা ১৬১টি আসন পাবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন ২০১টি ভোট। ফলে দলটির পক্ষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রয়োজনীয় ভোট নিজ দলের পার্লামেন্ট সদস্যদের কাছ থেকে জোগাড় করা সম্ভব নয়। এ জন্য তাদের অন্য দলগুলোর সদস্যদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (ডিএ)। তারা পেয়েছে ২১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে থাকা এমকেপির ভাগে আছে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। এ দুই দল পার্লামেন্টে যথাক্রমে ৮৭ ও ৫৮টি করে আসন পাচ্ছে। ফলে এদের যেকোনো একটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে সিরিল রামফোসার দল এএনসি–কে।
এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রামফোসা এক আগ্রহোদ্দীপক ডাক দিয়েছেন। সেই ডাকটি হলো—জাতীয় সরকারের। অর্থাৎ, সবগুলো দলকে নিয়েই তিনি সরকার গঠনের দিকে এগোতে চান। এখন পর্যন্ত সেই আলোচনায় কোনো ফল আসেনি। চেষ্টা চলছে।
প্রশ্ন হলো—কেন রামফোসা জাতীয় সরকার গঠনের পথে হাঁটছেন, যেখানে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে সাথে নিলেই সরকার গঠন সহজ হয়। তিনি নিজেই এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, ‘আসন্ন প্রশাসনের প্রকৃতি ও গঠন যেমনই হোক, তাকে চলমান বদলকে টেকসই করতে হবে। গতিপথে যেকোনো পরিবর্তন এত দিনের ইতিবাচক সব বদলের ধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং আমাদের পূর্বতন দশায় ফিরিয়ে নেবে।’
‘ইতিবাচক বদল’ বা যে অভিধার কথাই বলা হোক না কেন, মূল বিষয়টি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতি। রামফোসা ঠিক এ জায়গাটিতেই জোর দিচ্ছেন। তাঁর মতে, জ্বালানি সরবরাহ, বন্দর ও রেল খাতকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে যেভাবে ঢেলে সাজানো হচ্ছে, তাতে আগামী ১০ বছরে ৩ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি পেতে পারে দেশটির অর্থনীতি। এ ক্ষেত্রে এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাটা জাতীয় স্বার্থের জন্যই জরুরি।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতির পরিস্থিতি গত এক দশক ধরেই বাজে বলতে হবে। গত এক দশকে দেশটির অর্থনীতি ১ শতাংশেরও কম হারে প্রবৃদ্ধি পেয়েছে।
এই পরিস্থিতিতেই এএনসির নেতা হিসেবে রামফোসা চাইছেন, অন্য দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে এমন এক সরকার গঠন করতে, যাতে আসন্ন প্রশাসনের একটা স্থিতিশীলতা থাকে। এ ক্ষেত্রে অন্য রাজনীতি থাকতে পারে বা আছে। কিন্তু প্রবণতাটি গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৪ সালের পর অনেকটা একচেটিয়াভাবে দেশের শাসনভার পরিচালনা করা দলটি বিপাকে পড়লেও সবাইকে সাথে নেওয়ার চেষ্টা করতে ভুলছে না।
এই চেষ্টার জন্য রামফোসা সময় পাচ্ছেন আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আইনসভার সদস্যদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মুশকিল এমকেপি নিয়ে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার নেতৃত্বাধীন দলটি জানিয়ে দিয়েছে, তারা এএনসির সাথে কোনো জোটবদ্ধ সরকারে যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত দলটির নেতা হিসেবে রামফোসা রয়েছেন। আবার বামধারার ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটারস দলের আপত্তি ডিএ নিয়ে। তারা জানিয়েছে, ডিএ সরকারে থাকলে, তারা এর অংশ হবে না। তবে ডিএ ও এএনসির মধ্যে এক ধরনের সমঝোতা হয়েছে। উভয় দলই দেশটির অর্থনীতি পুনর্গঠনের ওপর জোর দিচ্ছে।
রামফোসার প্রস্তাব করা জাতীয় সরকার আসলে কী? সাধারণ বিবেচনায় জাতীয় সরকার বলতে এমন এক প্রশাসনকে বোঝায়, যেখানে কোনো দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের অংশীদারত্ব থাকে। এ ক্ষেত্রে এমনকি দুই বিপরীত মেরুর রাজনৈতিক দলও এক টেবিলে বসে। সাধারণ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো পরিস্থিতিতে বা জরুরি পরিস্থিতিতে এ ধরনের সরকার গঠন করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে এ ধরনের সরকার গঠনের অর্থ হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ সব দলের মধ্যে মন্ত্রণালয় ভাগ করে দেওয়া। এর ফলে আইনসভায় বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধিতা কম হয়।
জাতীয় সরকারে কারা থাকবে—সবাই, নাকি কেউ কেউ? সাধারণত নির্বাচনে ১০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পাওয়া দলগুলো মিলেই এ ধরনের সরকার গঠন করা হয়। তবে এএনসি এখন পর্যন্ত যা বলছে, তাতে এই সীমা আরও শিথিল করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আলোচনায় আসছে—এএনসি, ডিএ, এমকেপি, ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটারস (ইএফএফ), ইনকাথা ফ্রিডম পার্টি (আইএফপি)। শেষের দুটি দল ভোট পেয়েছে যথাক্রমে ৯ ও ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। ইএফএফ বামপন্থী, আর আইএফপি রক্ষণশীল। এ ছাড়া ২ শতাংশ ভোট পেয়ে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা প্যাট্রিয়টিক অ্যালায়েন্সও আলোচনায় আছে।
প্রশ্ন হচ্ছে—এ ধরনের সরকারের অভিজ্ঞতা কী? বর্ণবাদের বিলোপের পর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম সরকারটিই ছিল জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে গড়া, যার নেতৃত্বে ছিলেন কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। এর স্থায়িত্ব ছিল ৩ বছর। ওই সরকারে এএনসি ছাড়াও ছিল আইএফপি ও ন্যাশনাল পার্টি। ফলে এ ধরনের একটি সরকার গঠন ও তা তিন বছর স্থায়ী হওয়ার অভিজ্ঞতা দক্ষিণ আফ্রিকার আছে।
শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা কেন, আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায়ও এ ধরনের সরকার ছিল। ২০০৭ সালে দেশটিতে বিতর্কিত নির্বাচনের পর সমঝোতার রাস্তা হিসেবে বিরোধী পক্ষকে আস্থায় নিতে প্রধানমন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী, উপরাষ্ট্রপতির মতো পদ সৃষ্টি করতে হয়েছিল। সংকট সামাল দেওয়া গিয়েছিল ওই তরিকায়। একই ধরনের উদাহরণ আছে আফগানিস্তানে। ২০১৪ সালে দুই বিরোধী পক্ষ সমঝোতায় এসেছিল আশরাফ ঘানিকে প্রেসিডেন্ট ও আবদুল্লাহ আবদুল্লাহকে আফগানিস্তানের প্রধান নির্বাহী করে। ক্ষমতা ভাগাভাগির এই চুক্তির স্থায়িত্ব ছিল ২০১৯ সাল পর্যন্ত। এমনটা ইতালিতে করোনাকালে হয়েছে ২০২১ সালে, লেবাননে হয়েছে ২০১৯ সালে। হয়েছে মিয়ানমারেও।
ফলে একেবারে নতুন নয় ধারণাটি। তবে এ ধারার প্রশাসনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি হলো ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো। শুধু চুক্তিতে পৌঁছালেই হয় না, এ ধরনের সরকারকে প্রতিনিয়ত এই চুক্তি টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট থাকা লাগে। এ ক্ষেত্রে তুলনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল ও তার নেতাদেরই এগিয়ে আসতে হয়। রামফোসা প্রস্তাব উত্থাপন করে এবং নানা পক্ষের আলোচনা শুনে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিরোধী পক্ষগুলো বিভিন্ন প্রস্তাব তুলছে। এই প্রস্তাবগুলোকে আমলে নিয়ে তাকে অর্থবহ একটা পরিণতি দেওয়ার দায়টাও কিন্তু এএনসিরই। কারণ, দল হিসেবে তারাই বর্ণবাদোত্তর দক্ষিণ আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি সময় নেতৃত্ব দিয়েছে এবং এবারও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও ভোটের হারে অন্যদের চেয়ে ঢের এগিয়ে। ফলে ছাড় দেওয়া ও একটি স্থিতিশীল সরকার গঠনের দায় সবচেয়ে বেশি তাদেরই। নেতা হিসেবে রামফোসা এ ক্ষেত্রে সফল হন কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় না। দেশটির পার্লামেন্টের মোট ৪০০ আসনের নির্বাচিত সদস্যদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। তবে এই ৪০০ আসনের পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচন প্রক্রিয়াটি অন্য দেশগুলোর মতো নয়। এটি হয় ভোটের শতাংশ হার অনুযায়ী।
একটু ব্যাখ্যা করা যাক। এবারের নির্বাচনে দেশটির ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) পেয়েছে ৪০ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। ফলে আইনসভায় তারা ১৬১টি আসন পাবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন ২০১টি ভোট। ফলে দলটির পক্ষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রয়োজনীয় ভোট নিজ দলের পার্লামেন্ট সদস্যদের কাছ থেকে জোগাড় করা সম্ভব নয়। এ জন্য তাদের অন্য দলগুলোর সদস্যদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (ডিএ)। তারা পেয়েছে ২১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে থাকা এমকেপির ভাগে আছে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। এ দুই দল পার্লামেন্টে যথাক্রমে ৮৭ ও ৫৮টি করে আসন পাচ্ছে। ফলে এদের যেকোনো একটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে সিরিল রামফোসার দল এএনসি–কে।

প্রশ্ন হলো—কেন রামফোসা জাতীয় সরকার গঠনের পথে হাঁটছেন, যেখানে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে সাথে নিলেই সরকার গঠন সহজ হয়। তিনি নিজেই এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, ‘আসন্ন প্রশাসনের প্রকৃতি ও গঠন যেমনই হোক, তাকে চলমান বদলকে টেকসই করতে হবে। গতিপথে যেকোনো পরিবর্তন এত দিনের ইতিবাচক সব বদলের ধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং আমাদের পূর্বতন দশায় ফিরিয়ে নেবে।’
‘ইতিবাচক বদল’ বা যে অভিধার কথাই বলা হোক না কেন, মূল বিষয়টি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতি। রামফোসা ঠিক এ জায়গাটিতেই জোর দিচ্ছেন। তাঁর মতে, জ্বালানি সরবরাহ, বন্দর ও রেল খাতকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে যেভাবে ঢেলে সাজানো হচ্ছে, তাতে আগামী ১০ বছরে ৩ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি পেতে পারে দেশটির অর্থনীতি। এ ক্ষেত্রে এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাটা জাতীয় স্বার্থের জন্যই জরুরি।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতির পরিস্থিতি গত এক দশক ধরেই বাজে বলতে হবে। গত এক দশকে দেশটির অর্থনীতি ১ শতাংশেরও কম হারে প্রবৃদ্ধি পেয়েছে।
এই পরিস্থিতিতেই এএনসির নেতা হিসেবে রামফোসা চাইছেন, অন্য দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে এমন এক সরকার গঠন করতে, যাতে আসন্ন প্রশাসনের একটা স্থিতিশীলতা থাকে। এ ক্ষেত্রে অন্য রাজনীতি থাকতে পারে বা আছে। কিন্তু প্রবণতাটি গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৪ সালের পর অনেকটা একচেটিয়াভাবে দেশের শাসনভার পরিচালনা করা দলটি বিপাকে পড়লেও সবাইকে সাথে নেওয়ার চেষ্টা করতে ভুলছে না।
এই চেষ্টার জন্য রামফোসা সময় পাচ্ছেন আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আইনসভার সদস্যদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মুশকিল এমকেপি নিয়ে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার নেতৃত্বাধীন দলটি জানিয়ে দিয়েছে, তারা এএনসির সাথে কোনো জোটবদ্ধ সরকারে যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত দলটির নেতা হিসেবে রামফোসা রয়েছেন। আবার বামধারার ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটারস দলের আপত্তি ডিএ নিয়ে। তারা জানিয়েছে, ডিএ সরকারে থাকলে, তারা এর অংশ হবে না। তবে ডিএ ও এএনসির মধ্যে এক ধরনের সমঝোতা হয়েছে। উভয় দলই দেশটির অর্থনীতি পুনর্গঠনের ওপর জোর দিচ্ছে।
রামফোসার প্রস্তাব করা জাতীয় সরকার আসলে কী? সাধারণ বিবেচনায় জাতীয় সরকার বলতে এমন এক প্রশাসনকে বোঝায়, যেখানে কোনো দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের অংশীদারত্ব থাকে। এ ক্ষেত্রে এমনকি দুই বিপরীত মেরুর রাজনৈতিক দলও এক টেবিলে বসে। সাধারণ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো পরিস্থিতিতে বা জরুরি পরিস্থিতিতে এ ধরনের সরকার গঠন করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে এ ধরনের সরকার গঠনের অর্থ হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ সব দলের মধ্যে মন্ত্রণালয় ভাগ করে দেওয়া। এর ফলে আইনসভায় বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধিতা কম হয়।
জাতীয় সরকারে কারা থাকবে—সবাই, নাকি কেউ কেউ? সাধারণত নির্বাচনে ১০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পাওয়া দলগুলো মিলেই এ ধরনের সরকার গঠন করা হয়। তবে এএনসি এখন পর্যন্ত যা বলছে, তাতে এই সীমা আরও শিথিল করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আলোচনায় আসছে—এএনসি, ডিএ, এমকেপি, ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটারস (ইএফএফ), ইনকাথা ফ্রিডম পার্টি (আইএফপি)। শেষের দুটি দল ভোট পেয়েছে যথাক্রমে ৯ ও ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। ইএফএফ বামপন্থী, আর আইএফপি রক্ষণশীল। এ ছাড়া ২ শতাংশ ভোট পেয়ে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা প্যাট্রিয়টিক অ্যালায়েন্সও আলোচনায় আছে।

শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা কেন, আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায়ও এ ধরনের সরকার ছিল। ২০০৭ সালে দেশটিতে বিতর্কিত নির্বাচনের পর সমঝোতার রাস্তা হিসেবে বিরোধী পক্ষকে আস্থায় নিতে প্রধানমন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী, উপরাষ্ট্রপতির মতো পদ সৃষ্টি করতে হয়েছিল। সংকট সামাল দেওয়া গিয়েছিল ওই তরিকায়। একই ধরনের উদাহরণ আছে আফগানিস্তানে। ২০১৪ সালে দুই বিরোধী পক্ষ সমঝোতায় এসেছিল আশরাফ ঘানিকে প্রেসিডেন্ট ও আবদুল্লাহ আবদুল্লাহকে আফগানিস্তানের প্রধান নির্বাহী করে। ক্ষমতা ভাগাভাগির এই চুক্তির স্থায়িত্ব ছিল ২০১৯ সাল পর্যন্ত। এমনটা ইতালিতে করোনাকালে হয়েছে ২০২১ সালে, লেবাননে হয়েছে ২০১৯ সালে। হয়েছে মিয়ানমারেও।
ফলে একেবারে নতুন নয় ধারণাটি। তবে এ ধারার প্রশাসনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি হলো ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো। শুধু চুক্তিতে পৌঁছালেই হয় না, এ ধরনের সরকারকে প্রতিনিয়ত এই চুক্তি টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট থাকা লাগে। এ ক্ষেত্রে তুলনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল ও তার নেতাদেরই এগিয়ে আসতে হয়। রামফোসা প্রস্তাব উত্থাপন করে এবং নানা পক্ষের আলোচনা শুনে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিরোধী পক্ষগুলো বিভিন্ন প্রস্তাব তুলছে। এই প্রস্তাবগুলোকে আমলে নিয়ে তাকে অর্থবহ একটা পরিণতি দেওয়ার দায়টাও কিন্তু এএনসিরই। কারণ, দল হিসেবে তারাই বর্ণবাদোত্তর দক্ষিণ আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি সময় নেতৃত্ব দিয়েছে এবং এবারও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও ভোটের হারে অন্যদের চেয়ে ঢের এগিয়ে। ফলে ছাড় দেওয়া ও একটি স্থিতিশীল সরকার গঠনের দায় সবচেয়ে বেশি তাদেরই। নেতা হিসেবে রামফোসা এ ক্ষেত্রে সফল হন কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।