সেকশন

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২
Independent Television
 

মিয়ানমার এখন কোথায় দাঁড়িয়ে

আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ পিএম

গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী নোবেল জয়ী অং সান সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে জান্তা বাহিনী। অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে একে একে রাজনৈতিক নেতাসহ নানা মতের মানুষকে বন্দী করে তারা। সামরিক জান্তার বিপক্ষে রাজপথে আন্দোলন শুরু হয় তখনই। কঠোর হয় আইন‑শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। এরই মধ্যে গৃহযুদ্ধের তিন বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে অভ্যন্তরীণ একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী। আর বিবদমান এসব গোষ্ঠীকে একাধিক আন্তর্জাতিক শক্তি সহায়তা দিচ্ছে বলেও আলোচনা রয়েছে। বিশেষত জান্তার বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির উল্লেখযোগ্য কিছু বিজয়ের নেপথ্যে দেশটির বহিঃশক্তি যুক্ত বলে নানা আলোচনা ও বিশ্লেষণ রয়েছে। সব মিলিয়ে মিয়ানমার পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে, যার ঢেউ বাংলাদেশেও এসে লাগছে।

ওই সময় থেকে বিরোধীদের ওপর ব্যাপক দমন‑পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে সামরিক সরকার। তবে বিদ্রোহীরাও ক্রমেই বেশ শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে। সামরিক বাহিনীর ঘাঁটি দখলসহ বেশ কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। এরই মধ্যে তিন বছরেরও বেশি সময় সময় পার হয়েছে।

চলতি বছরের শেষে এসে দেখা যাচ্ছে, দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো বড় ধরনের সামরিক সাফল্য পেয়েছে। জান্তাবাহিনী বিদ্রোহীদের কাছ থেকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে মূলত সীমান্ত এলাকাগুলোতে। যেমন, রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে এখন। বাংলাদেশের অপর পাশে প্রায় পৌনে তিন শ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই তাদের দখলে। মংডু শহর দখলে রেখেছে আরাকানা আর্মি। তবে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে।

জান্তার সহিংসতা ও দমন‑পীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়া গণতন্ত্রপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং দীর্ঘ সময় ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র বিদ্রোহীরা এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট জান্তাকে হটিয়ে দিয়ে পূর্ব মিয়ানমারের এক বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছে।

বিদ্রোহী গোষ্ঠী চিন ব্রাদারহুডের যোদ্ধারা। ছবি: ইরাবতীর সৌজন্যেআন্তর্জাতিক সংবাদমাদ্যমগুলো জানিয়েছে, গত ১২ মাসে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সেনাবাহিনী। মিয়ানমারের এক‑চতুর্থাংশের কম অঞ্চল বর্তমানে তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।

চলতি বছর দেশের বিভিন্ন জায়গায় জান্তাবিরোধী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ জোরালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন তাদের শক্তি আরও বাড়িয়েছে। দেশটির তিনটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত, তারা এ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

বিবিসি বলছে, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে বহু শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে সংঘাত এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, কীভাবে মিয়ানমারে আবার শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে, তার কোনো সুস্পষ্ট নিশানা দেখা যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠছে, মিয়ানমারের সামরিক সরকার কি ভেঙে পড়ার হুমকিতে?

এরই মধ্যে মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের হাতে জান্তা বাহিনীর যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ। প্রধান কিছু শহরও দখলে নিয়েছেন বিদ্রোহীরা। এ নিয়ে মিয়ানমারের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দেশটির অভ্যন্তরে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্য। ছবি: এক্সচলতি বছরের মাঝামাঝি মিয়ানমারের সামরিক জান্তার প্রধান একটি আঞ্চলিক সামরিক সদরদপ্তর দখলের দাবি করে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ)। সু চিকে হটিয়ে ক্ষমতায় বসা জান্তার জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করা হয়। দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ১৩টি জান্তা সামরিক আঞ্চলিক কমান্ডের মধ্যে একটি হলো এই ঘাঁটি। এখান থেকেই চীনের সীমান্তের নিকটবর্তী এলাকাগুলোসহ উত্তর শান রাজ্যজুড়ে সামরিক অভিযান চালানো হয়।

এর আগেও মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর (এফএও) বিদ্রোহীদের কাছে বেশ কয়েকটি ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। দেশব্যাপী বিভিন্ন এলাকায় জান্তাদের লক্ষ্য করে তাদের হামলা অব্যাহত আছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে রাখাইন রাজ্যে চলমান যুদ্ধের মধ্যে মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ‑ঘেঁষা মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে যায় বলে এক প্রতিবেদেন জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ইরাবতী।

আরাকান আর্মি বলেছে, তারা আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) থেকে সরকার এবং সহযোগী রোহিঙ্গা মিলিশিয়াদের ওপর আক্রমণ করছে।

টহল দিচ্ছে মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীতআন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অনেক সেনা হয় বাহিনী ছেড়েছে, না হয় আত্মসমর্পণ করেছে। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পরও অনেক সেনা সদস্য বাহিনী ছেড়েছিলেন। দেশজুড়ে কয়েক ডজন শহর সেনা বিরোধীদের হাতে চলে গেছে।

পাশ্ববর্তী দেশ চীন চায়, আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ বন্ধ হোক, যার কারণে নিশ্চিতভাবে সেনাবাহিনী তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে। তবে বিরোধীরা দাবি করছে, সেনাবাহিনীকে সংস্কার করতে হবে এবং রাজনীতি থেকে সরে যেতে হবে।

এ অবস্থায় গত মাসে জাতিসংঘ সতর্ক করে–রাখাইনে দুর্ভিক্ষ হতে পারে। কারণ, অনেক মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। আর সেনাবাহিনীর অবরোধের কারণে খাবারসহ জরুরি সরঞ্জাম অঞ্চলটিতে ঢুকতে পারছে না। জাতিসংঘও কোনো সহায়তা নিয়ে যেতে পারছে না।

এদিকে, মিয়ানমারের সংকট নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। দেশটির অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের মধ্যে জটিল সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে ভারত, চীন, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, লাওস ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।

ফাইল ছবিপ্রতিবেদন বলছে, এই মুহূর্তে রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ অংশ বিদ্রোহী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। রাখাইন থেকে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। সংকট বাড়ছে বাংলাদেশেরও। গত বছরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর কথা থাকলেও এ প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি এখনও।

মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী প্রায়ই বিদ্রোহীদের হাতে সামরিক ঘাঁটি দখল হওয়ার খবর দেয়। সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বেশ কিছু ঘাঁটি দখল করেছে বিদ্রোহীরা। একটি ঘাঁটি থেকে সেনাদের পালিয়ে যাওয়ারও খবর দেওয়া হয় এতে।

বন্দী করার পর থেকেই নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে অং সান সু চির বিরুদ্ধে। কয়েক মামলায় তাঁর সাজাও হয়েছে এরই মধ্যে। বন্ধ করা হয়েছে এই নেত্রীর রাজনীতিতে ফেরার পথ। তবে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে দায়িত্ব নেওয়া সেনাবাহিনীও আছে বিপাকে। প্রতিরোধের মুখে পড়া সামরিক জান্তা দেশকে এভাবে ঠিক কত দূর টেনে নিয়ে যেতে পারবে, সে প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিন ধরে চলা সংঘর্ষ শেষে যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় স্বস্তি ফিরে পেয়েছে বিশ্ব। মধ্যপ্রাচ্যের এই দ্বন্দ্ব ক্রমশ বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছিল, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র...
গত বিশ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের সঙ্গে জর্জ ডব্লিউ বুশ নামটা জড়ানো ছিল। এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চেষ্টা করছেন যেন এই যুদ্ধের সঙ্গে তাঁর নামও জড়ায়। ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস ইরানের বিরুদ্ধে...
ইরানে ইসরায়েলের একতরফা হামলার আট দিনের মাথায় এই সংঘাতে যোগ দিল আমেরিকা। আমেরিকার বি-টু বোমারু বিমান থেকে ইরানে একাধিক পারমাণবিক স্থাপনার হামলা চালানো হয়। এর পাল্টা কোনো ব্যবস্থা এখনো ইরান নিতে...
নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ
গত দুই দশক ধরে আমেরিকা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে দীর্ঘ অগ্রযাত্রার গতি ধীর করার জন্য নিষেধাজ্ঞা, অন্তর্ঘাত, সাইবার হামলা এবং কূটনৈতিক আলোচনা–সবকিছুই ব্যবহার করেছে। কিন্তু গত রোববার ইরানের...
তারেক রহমানের বিরোধিতাকারীরা গণতন্ত্রের শত্রু বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিশ্বব্যাপী এআই প্রযুক্তির উচ্চ চাহিদার শক্তিতে রেকর্ড মুনাফার মুখ দেখেছে তাইওয়ান সেমিকনডাকটর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি), যাদের গ্রাহক তালিকায় আছে অ্যাপল, এনভিডিয়া, এএমডি, কোয়ালকমের মতো...
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজনৈতিক সমাবেশে হামলা ও সংঘর্ষে ৪ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। একইসঙ্গে সংগঠনটি...
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.