টানাবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে টাঙ্গাইলের সবগুলো নদীর পানি বেড়েছে। এর মধ্যে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি ৬ সেন্টিমিটার ও ঝিনাই নদীর পানি ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যায় জেলার চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার, ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলার অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর পানি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূঞাপুর, গোপালপুর, কালিহাতী ও সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া ভূঞাপুর, কালিহাতী ও সদর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় নদীভাঙনে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। লোকালয়ে পানি ওঠায় সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। জেলার অন্তত পাঁচটি বাজারে পানি ওঠায় ব্যবসায়ীরা বেকায়দায়। কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুর-বেরীপটল সড়কের কুবুদ্ধির মোড় এলাকায় পাকা সড়ক ভেঙে পানি ঢুকছে। দুর্গাপুরের রামদেবপুর উত্তরপাড়া হালিম মন্ডলের বাড়ি থেকে দক্ষিণপাড়া সোলেমান সিকদারের বাড়ি পর্যন্ত কাঁচা সড়কের চার স্থানে ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া, কাতুলী ও মাহমুদনগর এলাকায় যমুনা নদীর পানি ঢুকে পড়েছে।
বন্যাকবলিত বাজারগুলোর ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘শুক্রবার সকাল থেকে বাজারগুলোর কোনো কোনো অংশে পানি ঢুকে পড়েছে। পরে বাজারগুলোর একাধিক সড়কে পানি ঢুকে পড়ে। নদীর পানি দ্রুতগতিতে বেড়ে যাওয়ায় জেলার নতুন নতুন গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। প্রবল স্রোতে নদীর পানি এসব এলাকার বাড়িঘর ও ফসলি জমিতে প্রবেশ করছে। ফলে ওইসব এলাকার লোকজন বিপাকে পড়েছেন। পানি বাড়ার ফলে জেলার ভূঞাপুর, কালিহাতী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।’
টাঙ্গাইল পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে যমুনা, ঝিনাই, ধলেশ্বরীসহ জেলার সবকটি নদীর পানি বেড়েছে। আরও কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।’
পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন আরও বলেন, ‘নদী ভাঙন এলাকায় আপৎকালীন (জরুরি) পরিষেবা হিসেবে জিওব্যাগ ডাম্পিং করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেখানেই ভাঙন দেখা দিচ্ছে সেখানেই আপৎকালীন পরিষেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, ‘উজানের পানি নেমে আসায় ভাটিতে ধীরে ধীরে পানি বাড়ছে।
ভূঞাপুরের অর্জুণা ইউনিয়নের কিছু ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী নিকরাইল ও গাবসারা ইউনিয়নেও পানি ঢুকে পড়তে পারে। ক্রমাগত পানি বাড়তে থাকলে আরও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।’