জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও শেরপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আতিউর রহমান আতিক ও তাঁর স্ত্রী শান্তনা বেগমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। শনিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
জ্ঞাত আয়–বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান থাকায় এ আদেশ দেওয়া হয়।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এই হুইপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৮ সালে তদন্ত শুরু করা হলেও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের বিশেষ তদবিরে সাবেক হুইপ আতিউর রহমান আতিককে দায়মুক্তি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এবার ফেঁসে যাচ্ছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের এ নেতা।
দুদকের পক্ষে উপ–পরিচালক মোজাম্মিল হোসেন নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিষেধাজ্ঞার আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক সংসদ সদস্য আতিউর রহমান আতিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগটির অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পালাতে পারে বলে জানা গেছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন বন্ধ করা প্রয়োজন।
এর আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে অনেকবার অভিযোগ উঠলেও হুইপ আতিকের প্রভাবের কারণে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শুধু আতিউর রহমান আতিক নয় তাঁর স্ত্রী শান্তনা বেগম ও মেয়ে শারমিন রহমান অমির তদবির বাণিজ্য ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল শেরপুরবাসী। কিন্তু তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের সাথে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। যে কারণে তাঁর প্রভাবের কাছে সবাই ছিল অসহায়।
সাবেক এ হুইপের বিরুদ্ধে বিলাসবহুল বাড়ি কেনা, গ্রামের বাড়ি কামারিয়ায় ৩০ একরের বাগানবাড়ি তৈরি, ঢাকার বসুন্ধরা ও বনশ্রীতে দুটি প্লট; ধানমন্ডি ও গুলশানে দুইটি ফ্ল্যাট, নামে-বেনামে শতকোটি টাকা অর্জন, নিয়োগ বাণিজ্য, টিআর, কাবিখা ও স্কুল–কলেজের এমপিও থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে অভিযোগ থাকায় ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল আতিউর রহমান আতিককে তলব করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই বছরের ১৭ এপ্রিল দুদকে হাজির হয় সে। কিন্তু পরবর্তীতে সে অভিযোগ আর আলোর মুখ দেখেনি। উল্টো দেড় মাস পরেই দায়মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। ওইসময় বিশেষ তদবিরে রেহাই পেলেও এবার রেহাই নেই বলে জানান আইন বিশেষজ্ঞরা।
গত বছরের ৪ আগস্টের পর নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের শেরপুর জেলার সভাপতি আতিউর রহমান আতিক, তাঁর স্ত্রী–কন্যাদের আর শেরপুরে দেখা যায়নি। বড় দুই মেয়ে আমেরিকায় রয়েছে। ছোট মেয়ে ও স্ত্রীসহ আতিউর রহমান আতিক রয়েছে আত্মগোপনে।