খেজুর গুড় বানাতে রাজশাহীতে ব্যবহার করা হচ্ছে গো-খাদ্যের নামে আসা চিনি। ভেজাল এসব গুড় আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার করা হচ্ছে হাইড্রোজ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভয়ংকর হাইড্রোজ ব্যবহারের ফলে মানবদেহে বাড়ছে ক্যানসার ও কিডনি রোগের ঝুঁকি।
বিভিন্ন উপজেলায় কৃষক থেকে ব্যবসায়ী, যে যার মতো করে গুড় তৈরি করে এসব ভেজাল গুড় বাজারজাত করছে। প্রকাশ্যে এসব ভেজাল গুড় তৈরি হলেও নেই কোনো নজরদারি।
বানেশ্বর উপজেলার একটি গুড় তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, গুড় তৈরির জন্য চুলায় জ্বাল দেওয়া হচ্ছে খেজুরের রস। কিছুটা গরম হলেই তাতে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভারত থেকে গো-খাদ্যের নামে আনা নিম্নমানের টিনজাত চিনি। গুড়ের ঘনত্ব বাড়াতে দেওয়া হচ্ছে ডালডা আর আটা। দেখতে আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার হচ্ছে হাইড্রোজ ও রং।
এক কারিগর জানান, গুড় তৈরি করতে হাইড্রোজ, ডালডার পাশাপাশি চুন, ফিটকিরীও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
শুধু বানেশ্বর নয়, পুঠিয়া, দূর্গাপুর, চারঘাট, বাঘা উপজেলার অনেক কৃষকবাড়ি ও আড়তে চলছে এমন ভেজাল গুড় তৈরির কারবার। নজরদারি না থাকায় ভেজাল গুড় তৈরি-বাজারজাত করতে কোনো সমস্যাই হয় না কারিগর-ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, গৃহস্থ তাদের কাছ থেকে এই গুড় কিনে নিয়ে যায়। অনেক ব্যবসায়ীও এখান থেকে গুড় নিয়ে যায়।
রাজশাহীর নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘গুড় কতটা নিরাপদ, তা জানতে আমরা ১০টি গুড় সংগ্রহ করেছিলাম। তাতে দেখা গেছে, কোনো গুড়ই স্বাস্থ্যসম্মত নয়।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক আজাদ বলেন, ‘গুড়ের মধ্যে ব্যবহার করা হাইড্রোজ সবচেয়ে ভয়ংকর, ক্ষতিকর। হাইড্রোজের ফলে মানবদেহে ক্যানসার ও কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর।’
তবে, ভেজাল গুড়ের কারবারের বিষয়ে তথ্য নেই কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে। কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালুক মোছা. উম্মে ছালমা বলেন, ‘এমন অনিয়ম কৃষক পর্যায়ে নেই বললেই চলে। যারা ব্যবসা করে, তারা এসব করলে করতে পারে। কৃষক যে গুড় তৈরি করছে, সেই গুড় নির্ভেজাল।’
শীত মৌসুমে রাজশাহীতে খেজুর গুড়ের ব্যবসা হয় অন্তত ১৫০ কোটি টাকার। এখন ভেজালের ভিড়ে আসল চেনাই দায় হয়ে পড়েছে।