গত কয়েকদিনে ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেট অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বেড়ে আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে আগামী কয়েকদিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিতে কিছু কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এদিকে শক্তিয়ারখলা এলাকায় দেড় কিলোমিটার সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ আছে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর যান চলাচল।
প্রথম দফার বন্যার রেশ কাটার আগেই আবারও পানি ওঠার শঙ্কায় সুনামগঞ্জের নিচু এলাকার মানুষ। গত দুদিনের ভারী বৃষ্টিতে বেড়েছ সুরমা ও জাদুকাটা নদীর পানি। এতে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের দেড় কিলোমিটার অংশ তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ আছে সরাসরি যান চলাচল। নৌকা দিয়ে চলছে পারাপার। ভোগান্তিতে দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।
বন্যা পূর্ভাবাস ও সতর্কীরকরণ কেন্দ্রে তথ্যমতে জুলাই এর প্রথম সপ্তাহে সিলেট ও মেঘালয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় সুনামগঞ্জে গত দুদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত ও চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণের ফলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীসহ সকল নদী পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোমবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেমি উপরে বইছিলো। এবং সুরমা নদীর ছাতক পয়েন্টে ৩৩ সেমি,জাদুকাটা নদী ৬৫ সেমি উপরে প্রবাহিত হচ্ছিলো।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ৩১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে জেলার সীমান্ত নদী দিয়ে ঢলের পানি আসছে। প্লবিত হতে শুরু করেছে নিন্মাঞ্চল। পর্যটন এলাকা তাহিরপুর- সুনামগঞ্জ সড়কের সড়ক আবারো তলিয়ে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। যাত্রী ও এলাকাবাসীর চলাচলে ব্যবহার করতে হচ্ছে ফেরি নৌকা।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। তাতে সুনামগঞ্জে নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে নিম্নাঞ্চল বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে অবনতি হতে পারে।
এতে করে আবারো বন্যার কবলে পড়েছে সুনামগঞ্জবাসী। দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগ। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের করিম আহমদ বলেন, ‘গত সপ্তাহের বন্যার পানি ওই আমার বাড়ির আঙ্গিনায় আছিলো। আজকে আবার ঘরের কাছাকাছি চলে আসছে। আমরা বড় বেকায়দায় পরে গেছি।’
পাহাড়ি ঢলের ফলে জেলার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের।
পানি বৃদ্ধি ও বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, আগামী ৪৮ ঘন্টা চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এই সময়ে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। তিনি সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে সোমবার ভোর ৬টা থেকে ৩ ঘণ্টায় জেলায় ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসে ফের বন্যার শঙ্কায় নগরবাসী।
মৌলভীবাজারে রোববার রাত থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বাড়ছে নদনদীর পানি। ভারি বৃষ্টির সাথে উজানের ঢলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন দুর্গতরা। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় ২ লাখের বেশি মানুষ এখনও বন্যা কবলিত।