অভিনয়গুণে এপার-ওপার দুই বাংলাতেই জনপ্রিয় জয়া আহসান। কাজ করেছেন বলিউডেও। তাঁকে দেখা গেছে হিন্দি ‘কড়ক সিং’ ছবিতে। দেশ-বিদেশে নামকরা এই বাংলাদেশি অভিনেত্রীর জন্মদিন আজ। বিশেষ দিনটিতে তাঁকে নিয়ে কলম ধরেছেন পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র নির্মাতা অরিন্দম শীল।
২০১৩ সালে অরিন্দমের পরিচালনায় ‘আবর্ত’ সিনেমার মাধ্যমে টলিউডে অভিষেক করেন জয়া। সেখানে প্রথম অভিনয়েই প্রশংসিত হন অভিনেত্রী। এই সুবাদে শ্রেষ্ঠ অভিষিক্ত নারী হিসেবে ভারতের ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
জন্মদিন উপলক্ষে সেই ছবিতে জয়ার যুক্ত হওয়ার গল্প শোনালেন অরিন্দম। পাশাপাশি তিনি এ-ও জানান, তখন ২০১২ সাল। আবর্ত’র শুটিংয়ের শেষ দিন। সেটে বসেই বাবা আবু সাঈদ মাসউদের মৃত্যুর খবর শুনতে পান অভিনেত্রী। আর শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তবে সেই কঠিন পরিস্থিতিতেও সেদিন সিনেমার কথা ভেবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন জয়া।
গল্পটি অরিন্দমের মুখ থেকেই শোনা যাক। ‘বাবা প্রয়াত, চোখে জল! তার পরেও শট দিতে চেয়েছিল জয়া, অভিনেত্রীর জন্মদিনে লিখলেন অরিন্দম’ শিরোনামে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত লেখায় সেই স্মৃতি আওড়ে নির্মাতা লিখেছেন, ‘‘জয়া প্রসঙ্গে একটি ঘটনা না বললেই নয়। ‘আবর্ত’ ছবির শেষ দিনের শুটিং। লোকেশনের ফ্ল্যাটটি আমার বন্ধু হর্ষ নেওটিয়ার। লাঞ্চ ব্রেকের পর কাজ শুরু হবে। হঠাৎ আমার একজন সহকারী এসে বললেন, ‘দাদা, জলদি আসুন। জয়াদি খুব কান্নাকাটি করছেন!’ আমি ছুটে যেতেই দেখলাম, জয়ার দু’চোখ বেয়ে জল পড়ছে। করুণ মুখে বলল, ‘দাদা, বাবা আর নেই!’’’
যোগ করে তিনি বলেন, ‘‘আমি সঙ্গে সঙ্গে ওকে ঢাকা ফিরে যেতে বললাম, কিন্তু জয়া আমাকে যা বলেছিল, আজও আমার স্পষ্ট মনে আছে। ও বলেছিল, ‘দাদা, আজকে শুটিং শেষ করতে না পারলে তো অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি সিনটা করি।’ আমি ওর কথা শুনে হতবাক। কী বলব, বুঝতে পারছি না, কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমি ওকে তা-ও কাজ করতে বারণ করেছিলাম। তৎক্ষণাৎ ওর ঢাকা ফেরার ব্যবস্থা করলাম। হর্ষকে জানাতেই ও বলল, বাড়িটা রাখাই থাকবে।’’
শুধু সেই আবেগঘন মুহূর্তের কথাই নয়; জয়া আহসানের অভিনয়, সিনেমার প্রতি তাঁর একাগ্রতার প্রসঙ্গও তুলে ধরেছেন অরিন্দম। তিনি বললেন, ‘‘জয়া হলো আক্ষরিক অর্থেই ‘ডিরেক্টরস অ্যাক্টর’। মন দিয়ে কাজ করে। কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শুটিং ফ্লোরে থাকলে, তখন বাইরের পৃথিবীতে কী চলছে, সেটি ও ভুলে যায়। তখন অভিনয়, অভিনয় এবং অভিনয়ই ওর শেষ কথা!’’
প্রসঙ্গত, আবর্ত’র পর অরিন্দম শীলের ‘ঈগলের চোখ’ চলচ্চিত্রেও দেখা গেছে জয়া আহসানকে। এটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১৬ সালে।
এদিকে, দেশের মাটিতে সর্বশেষ জয়াকে দেখা যায় কোক স্টুডিও বাংলার ‘তাঁতি’ গানে। এর আগে টলিউডে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর ‘ভূতপরী’ নামের একটি সিনেমা। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে জয়ার ‘কালান্তর’ ও ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ নামের দুটি ছবি। একটি পরিচালনা করেছেন সৌকার্য ঘোষাল, অন্যটি সুমন মুখোপাধ্যায়।