হলিউডে প্রতিবছর গড়ে হাজারের উপর সিনেমা মুক্তি পায়। এর মধ্যে কোনো কোনো সিনেমা বিশ্বজুড়ে অকল্পনীয় সাড়া ফেলে, আবার কিছু সিনেমা থেকে যায় একেবারেই আলোচনার বাইরে। চলতি বছরও এর ব্যতিক্রম নয়।
ইতিমধ্যেই (২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) বিশ্ব সিনেমাকে ‘লিলো অ্যান্ড স্টিচ’ ও ‘সাইনার্স’র মতো দুটি ব্লকবাস্টার উপহার দিয়েছে হলিউড। যদিও বিগ বাজেটের ‘মিশন: ইম্পসিবল—দ্য ফাইনাল রেকনিং’, ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ ও ‘এলিও’র মতো সিনেমাগুলো আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে চলেছে।
সুখবর হলো—চলতি অর্ধবার্ষিকে নানা ধরনের চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে হলিউডে। যেখানে ব্যাপক দর্শক টানতে পারে এমন সম্ভাবনার চলচ্চিত্র ‘আ মাইনক্রাফট মুভি’ ছিল, তেমনই বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত ছবি ‘হাউ টু ট্রেইন ইওর ড্রাগন’ এবং বয়স্কদের জন্য সমালোচক মহলে প্রশংসিত সিনেমা ‘দ্য ফিনিশিয়ান স্কিম’ও ছিল। ফলস্বরূপ প্রচুর দর্শক পেয়েছে থিয়েটার, বেড়েছে টিকিট বিক্রি।
মার্কিন চলচ্চিত্র বিশ্লেষণ সংস্থা কমস্কোরের মতে, ২০২৪ সালের চেয়ে এ বছর আমেরিকায় টিকিট বিক্রি ১৮ শতাংশ বেশি। কিন্তু চলচ্চিত্র ব্যবসা এখনও করোনা মহামারির পূর্ব রূপ ফিরে পায়নি। বক্স অফিসে ২০১৯ সালের তুলনায় ২৬ শতাংশ ব্যবসা কমেছে।
তবে চলতি বছর এখনও মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ‘সুপারম্যান’, ‘উইকড: ফর গুড’, ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’র মতো সিনেমাগুলো। হলিউডে এই বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমাগুলো এখনও অনেক আশার আলো জ্বেলে রেখেছে।
জেনে নেওয়া যাক এই ছয় মাসে (জুন পর্যন্ত) হলিউডে মুক্তি পাওয়া কিছু সিনেমার হালচাল—
লিলো অ্যান্ড স্টিচ
বক্স অফিস: ৯১০ মিলিয়ন ডলার
বাজেট: ১০০ মিলিয়ন ডলার
২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া একই শিরোনামের অ্যানিমেটেড কমেডির লাইভ-অ্যাকশন রিমেক লিলো অ্যান্ড স্টিচ চলতি বছরের প্রথম বিলিয়ন ডলারের ব্লকবাস্টার হওয়ার পথে। অভিনয় করেছেন সিডনি এলিজেবেথ আগুডং, বিলি ম্যাগনাসেন, হান্না ওয়াডিংহাম প্রমুখ। পরিচালনায় ডিন ফ্লেইশার ক্যাম্প।
সাইনার্স
বক্স অফিস: ৩৬৩.৮ মিলিয়ন ডলার
বাজেট: ৯০ মিলিয়ন ডলার
পরিচালক রায়ান কুগলার প্রমাণ করেছেন যে দর্শকরা অনন্য কিছু নিয়ে উত্তেজিত হতে পারেন। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার ব্রাদার্সের মুখেও এই কথা এতই জোরদার ছিল যে, সাইনার্স দ্বিতীয় সপ্তাহান্তে তার প্রথম সপ্তাহের মতোই প্রায় সমান আয় করছে। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন মাইকেল বি জর্ডান, মাইলস ক্যাটন, সল উইলিয়ামস প্রমুখ।
আ মাইনক্রাফট মুভি
বক্স অফিস: ৯৫৪.৫ মিলিয়ন ডলার
বাজেট: ১৫০ মিলিয়ন ডলার
ভিডিও গেম অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটি পর্দায় আনতে এক দশকেরও বেশি সময় লেগেছে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের। হ্যাঁ, অপেক্ষার অবশ্য মূল্য ছিল। পারিবারিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ গল্পের এই সিনেমায় জেসন মোমোয়া ও জ্যাক ব্ল্যাকের মতো তারকাদের উপস্থিতি দর্শকের জন্য বাড়তি পাওনা। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন জ্যারেড হেস।
ফাইনাল ডেস্টিনেশন ব্লাডলাইনস
বক্স অফিস: ২৮০ মিলিয়ন ডলার
বাজেট: ৫০ মিলিয়ন
১৪ বছর বিরতির পর ‘ফাইনাল ডেস্টিনেশন ব্লাডলাইনস’ আনুষ্ঠানিকভাবে দীর্ঘস্থায়ী এই ভৌতিক ফ্র্যাঞ্চাইজিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। সিনেমাটি এই সিরিজের সর্বোচ্চ আয়কারী। অভিনয় করেছেন টিও ব্রিওনেস, রিচার্ড হারমন, ওয়েন প্যাট্রিক জয়নার, আনা লোর প্রমুখ। যৌথভাবে পরিচালনায় জ্যাক লিপোভস্কি ও অ্যাডাম স্টেইন।
ম্যাটেরিয়ালিস্টস
বক্স অফিস: ৩১.৪ মিলিয়ন ডলার
বাজেট: ২০ মিলিয়ন ডলার
প্রথম ছবি ‘পাস্ট লাইভস’র পর ‘ম্যাটেরিয়ালিস্টস’ নির্মাণ করেন পরিচালক সেলিন সং। সিনেমাটি ডাকোটা জনসন, পেড্রো প্যাসক্যাল ও ক্রিস ইভান্সের মতো গ্ল্যামারাস তারকাদের নিয়ে একটি ত্রিভুজ প্রেমের গল্প।
স্নো হোয়াইট
বক্স অফিস: ২০৫ মিলিয়ন ডলার
বাজেট: ২৫০ মিলিয়ন ডলার
পুরনো প্রেক্ষাপট, সৃজনশীল সংগ্রাম ও বিভিন্ন বিতর্কের কারণে দর্শক টানতে পারেনি সিনেমাটি। ফলে বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন র্যাচেল জেগলার, গ্যাল গ্যাডট, অ্যান্ড্রু বার্নাপের মতো তারকারা। পরিচালনা করেছেন মার্ক ওয়েব।
মিশন: ইম্পসিবল—দ্য ফাইনাল রেকনিং
বক্স অফিস: ৫৪০.৮ মিলিয়ন ডলার
বাজেট: ৪০০ মিলিয়ন ডলার
লাভ করতে হলে, আপনাকে ব্যয়ের চেয়ে বেশি আয় করতে হবে। এই ক্ষেত্রে টম ক্রুজের ‘দ্য ফাইনাল রেকনিং’ অসাধারণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সিনেমাটি তৈরি করতে ৪০০ মিলিয়ন ডলার এবং বাজারজাত করতে ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ হয়েছে। তবে ক্রিস্টোফার ম্যাককুয়ারি পরিচালিত এই ছবি প্রত্যাশিত সাড়া ফেলেনি।
এলিও
বক্স অফিস: প্রথম সপ্তাহে ওপেনিং ৩৪.৯ মিলিয়ন ডলার
বাজেট: ১৫০ মিলিয়ন ডলার
সিনেমাটি গত ২০ জুন বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেয়েছে। প্রথম সপ্তাহে অভ্যন্তরীণভাবে ২০ মিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বব্যাপী ৩৪ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা কিনা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান পিক্সারের ৩০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে উদ্বোধনী সপ্তাহ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন ইয়োনাস কিবরাব, জো সালদানা, ব্র্যাড গ্যারেট প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন ম্যাডেলিন শরাফিয়ান, ডোমি শি ও আদ্রিয়ান মোলিনা।
হারি আপ টুমরো
বক্স অফিস: ৭.৬ মিলিয়ন ডলার
বাজেট: ১৫ মিলিয়ন ডলার
‘হারি আপ টুমরো’র পরিচালক ট্রে এডওয়ার্ড শুল্টস, যিনি গায়ক ‘দ্য উইকেন্ড’ হিসেবেও পরিচিত। সিনেমাটি তাঁর একই নামের স্টুডিও অ্যালবামের একটি থ্রিলার। মানসিক অবসাদের দ্বারপ্রান্তে থাকা একজন সংগীতশিল্পীকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে গল্প।
ব্ল্যাক ব্যাগ
বক্স অফিস: ৪২.৯ মিলিয়ন ডলার
বাজেট: ৫০ মিলিয়ন ডলার
সমালোচকরা স্টিভেন সোডারবার্গের এই স্পাই থ্রিলার পছন্দ করেছেন। বিশ্বব্যাপী এটি ৪২.৯ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। অভিনয় করেছেন কেট ব্ল্যানচেট, মাইকেল ফ্যাসবেন্ডার, মারিসা আবেলা, টম বার্ক প্রমুখ।
সূত্র: ভ্যারাইটি