ছোট্ট একটি মেয়ে। একজনের হাত ধরে যাচ্ছে খেলার আসরে। যেতে যেতে তার একটি মাত্র প্রশ্ন।
জিজ্ঞাসা: আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করি। ইবলিশ শয়তান কি বাংলাদেশে থাকে?
উত্তর: হা…হা… তাছাড়া আর থাকবে কোথায়!
এমন প্রশ্নোত্তর পর্ব পাওয়া গিয়েছিল ট্রেলারেই। ফলে আগ্রহ ছিল বেশ। হওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়? এবং সেই আগ্রহ যে প্রত্যাশা সৃষ্টি করেছিল, সত্যিকার অর্থে তা পূরণও হয়েছে অনেকটা।
বলা হচ্ছে ‘২ষ’‑এর তৃতীয় গল্প ‘অন্তরা’ নিয়ে। গত সপ্তাহে এই পর্বটি মুক্তি পায়। পরিচালক নুহাশ হুমায়ূন। মূলত নুহাশ পরিচালিত আলোচিত সিরিজ ‘পেট কাটা ষ’‑এর দ্বিতীয় সিজন হলো ‘২ষ’। গল্পগুলো লিখেছেন নুহাশ হুমায়ুন ও গুলতেকিন খান। দ্বিতীয় সিজনে চার সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে চারটি নতুন গল্প। এগুলো হলো–‘ওয়াক্ত’, ‘ভাগ্য ভালো’, ‘অন্তরা’ ও ‘বেসুরা’। এরই মধ্যে প্রথম দুটি পর্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবার শেষ দুই পর্ব নিয়েই কথা হবে। আর তারই একটি হলো ‘অন্তরা’।
‘২ষ’ এনেছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ‘২ষ’ একটি সাইকোলজিক্যাল হরর জনরার সিরিজ। মানুষের মনের ভয়কেই পর্দায় তুলে আনা হয়েছে। আগের সিজনের ‘পেট কাটা ষ’ ছিল ছোটবেলায় শোনা ভূতের গল্প বা ছড়িয়ে থাকা ভূতের গল্প নিয়ে। কিন্তু ‘২ষ’‑তে সমাজের কোন জিনিসটাকে মানুষ বেশি ভয় পায়, সেটা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা হয়েছে।
এবার ‘অন্তরা’য় ফেরা যাক। এই পর্বে অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, নওশাবা প্রমুখ। মূলত আফজাল হোসেন ও নওশাবার চরিত্র দুটিই প্রধান। পরিচালক জানিয়েছেন, অতিপ্রাকৃতিক বিবাহিত জীবন নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘অন্তরা’র গল্প। এক্ষেত্রে ‘পেট কাটা ষ’‑এর প্রসঙ্গও আসে। কারণ সেখানে থাকা ‘মিষ্টি কিছু’ নামের পর্বেও এই দুই অভিনয়শিল্পীকে দেখা গিয়েছিল। সেই গল্পের একটা ধারাবাহিকতা আছে এবারের ‘অন্তরা’তেও।
এক দম্পতিকে ঘিরেই এগিয়েছে গল্প। পৃথিবীর আদি অশুভ শক্তিকে ঘিরে আবর্তিত হয় কাহিনি। রহস্যের ঘনঘটা পর্বের শুরু থেকেই ছিল এবং যত সময় গড়িয়েছে তত ঘন হয়েছে। সেক্ষেত্রে রহস্যের কেন্দ্রে ছিলেন আফজাল হোসেন। তিনি এই চরিত্রটি এত সুচারূরূপে তুলে ধরেছেন যে, অনুযোগ করার সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায়নি। নওশাবা যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন। ফলে তাঁদের মুখ নিঃসৃত বিভিন্ন সংলাপ আরও অর্থবহ হয়ে ওঠে। এই লেখার শুরুতে উল্লেখ করা উদাহরণের মতোই সেসব সংলাপকে নানাভাবে গ্রহণ করা যায়। আর এই জায়গাতেই দারুণ উপভোগ্য হয়ে ওঠে ‘অন্তরা’।
‘২ষ’‑এর তৃতীয় পর্বের গল্পটি একেবারে নতুন কিছু নয়। কিন্তু এর উপস্থাপনে মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন নুহাশ হুমায়ূন। এর সাথে ছিল দুই শিল্পীর দুর্দান্ত অভিনয়। ফলে রহস্য‑রোমাঞ্চ মনে দানা বাঁধে বেশ। সবচেয়ে বড় কথা, এই গল্পে অনেক উপকরণ এনে জট বাঁধানো হয়নি। এতে করে থিম পুরোনো হলেও, তা দর্শকদের সামনে সরল হিসেবে, নতুন রূপে আবির্ভূত হতে পেরেছে। আর এটিই ‘অন্তরা’কে ভালো লাগার কারণ।
তবে ঠিক সেই জায়গাতেই ব্যর্থ হয়েছে চতুর্থ ও সর্বশেষ পর্ব ‘বেসুরা’। সত্যি কথা বলতে, ‘ভাগ্য ভালো’ ও ‘অন্তরা’ দেখার পর ‘বেসুরা’ নিয়ে প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে ট্রেইলার দেখার পর তা আরও উঁচুতে ওঠে। কিন্তু দেখতে গিয়ে হোঁচট খেতেই হলো। ‘২ষ’‑এর প্রত্যেকটি গল্পেই বিনোদনের পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
কেন জানি মনে হলো, ‘বেসুরা’তে অনেক জমে থাকা কথা একবারে বলে দেওয়ার চেষ্টা ছিল! এতে করে অসংখ্য ভাবনার সন্নিবেশও করতে হয়েছে। আর তাতে করেই বেঁধে গেছে গিট্টু। সেটি খোলা সম্ভব হয়নি পর্বের শেষের দিকে বিশেষ চমক এনেও।
‘বেসুরা’তে চরিত্রগুলোর ভাষার ব্যবহার ছিল বিভ্রান্তিকর। একেক চরিত্র একেক ধরনের ভাষায় কথা বলেছে। কিন্তু যদি একটি রহস্যময় গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়েই গল্প বুনতে হয়, তবে এক ধরনের নৈকট্য থাকা প্রয়োজন। সেটি না থাকলে বেখাপ্পা বোধ হয়। আবার চরিত্রদের দিয়ে যেসব ‘অর্থবহ’ সংলাপ দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যেও কিছুটা যৌক্তিক সাদৃশ্য থাকা প্রয়োজন। গ্রামীণ আবহে কিছুটা প্রাচীন পরিচ্ছদে একজন কসাই ছুরিতে ধার দিতে দিতে হুট করে যদি বিজ্ঞাপনী সংস্থার ক্রিয়েটিভ হেডকে নিয়ে একটি সংলাপ ছুড়ে দেয়, তবে সেটিকে প্রবাহিত গল্পের বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কিত করা আসলে কঠিন হয়ে পড়ে। আবার ছন্দে ছন্দে কথা বললেই যে তা সব সময় ‘মিউজিক্যাল ফিল’ দেবে, তাও কিন্তু নয়।
তবে হ্যাঁ, ‘বেসুরা’তে সিনেম্যাটোগ্রাফি ভালো ছিল, প্রকৃতির সৌন্দর্য্য দিব্যি উঠে এসেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ব্যবহারও ভালো লেগেছে। আর অভিনয়ে নতুন সংযোজন হিসেবে চোখে লেগেছে সংগীতশিল্পী ইসলাম উদ্দিন পালাকারকে। সুমাইয়া শিমুর দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ ছিল সীমিত। ‘বেসুরা’তে সুরারোপের স্বার্থেই সেটি করা জরুরি ছিল আসলে।
মোদ্দা কথা, চার পর্ব শেষে বলতেই হয় যে, ‘২ষ’ আদতে মুগ্ধ করেছে ২টি পর্ব দিয়েই। সেগুলো হলো, ‘ভাগ্য ভালো’ ও ‘অন্তরা’। তবে ভিন্ন ঢঙে গল্প বলার চেষ্টা ছিল চার পর্বেই। সেদিক থেকে এই সাইকোলজিক্যাল হরর সিরিজ বাহবা পেতেই পারে।
রেটিং:
অন্তরা: ৪.২৫/৫.০০
বেসুরা: ৩.২০/৫.০০