গ্রীষ্মের পাহাড়ে বাহারি ফুল। কৃষ্ণচূড়া, লাল সোনাইল, জারুল, সোনালু, কুরচিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ফুটেছে। বসন্তের শেষে প্রকৃতির শূন্যতা পূরণ করে লাল, হলুদ, বেগুনি রঙ ছড়ানো বুনো ফুল। বিবর্ণ পাহাড়ে বৃষ্টি সুবাসে সবুজ হয় প্রকৃতি। ন্যাড়া পাহাড়ে অল্প অল্প করে সবুজ উঁকি দেয়।
বিভিন্ন প্রজাতির চেনা ফুলের ভিড়ে গ্রীষ্মের পাহাড়ে সৌন্দর্যের পেখম মেলেছে অচেনা এক ফুল। পথের ধারে ফুটে থাকলেও অনিন্দ্য সুন্দর ফুলটি অবহেলিত। অনেকের অচেনা। আমাদের চেনা কৃষ্ণচূড়া, সোনালু বা জারুলের মতো কেতাব না থাকায় অনেকটা অনাদরে অবহেলায় ঝরে যায়। তবে প্রকৃতিতে স্বমহিমায় উজ্জ্বল কালো পঙ্গপাল। নিজের সৌন্দর্যে মুগ্ধ করেছে ফুলপ্রেমীদের। ফুলের কাছে যেতেই থমকে দাঁড়াবে নিসর্গপ্রেমীরা। বৃষ্টির পর এই ফুলে সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ফুলের গায়ে লেগে থাকা বৃষ্টির ফোঁটা ফুলটিকে আরও অনন্য করে তোলে।
ফুল হয়েও নাম কালো পঙ্গপাল। ফুলের নাম কেন পঙ্গপাল? মূলত ইংরেজি নামটি বাংলায় তর্জমা করায় ব্ল্যাক লোকাস্ট হয়ে গেছে কালো পঙ্গপাল।
ফুলটি আগে দেখলেও তেমন খেয়াল করা হয়নি। ফুলটি প্রথম নজরে আনেন খাগড়াছড়ির শৌখিন আলোকচিত্রী সাথোয়াই মারমা। তাঁর দেওয়া তথ্য মতে খাগড়াছড়ি আলুটিলা সড়কের বাঁকে বিশাল এক কালো পঙ্গপালের বৃক্ষের দেখা যায়। পুরো গাছের শাখাপ্রশাখা ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। শেষ বিকেলের হলুদ আলোয় সফেদ পঙ্গপাল সোনালি আভার রঙ ধারণ করেছে। ফুলের ভাজে ভাজে সবুজ পাতা।
খাগড়াছড়ির আলুটিলা ছাড়াও মাইসছড়ি, ব্যাঙমারাসহ বেশ কিছু জায়গায় কালো পঙ্গপাল ফুটে আছে। বৃষ্টির পর কালো পঙ্গপাল আরও বেশি স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে। ফুলের সৌরভ মাখা বাতাস আশপাশের ছড়িয়ে যায়। কালো পঙ্গপাল উচ্চতায় বেশ বড় হয়। আলুটিলা সড়কের পাশে যে গাছটি দেখেছি সেটি উচ্চতায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ফুট। গাছে রয়েছে অসংখ্য শাখা।
কালো পঙ্গপাল আমাদের দেশের প্রচুর হলেও এদের আদিনিবাস উত্তর আমেরিকায়। আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে কালো পঙ্গপালের বিস্তৃতি বেশি। কালো পঙ্গপালের গড় উচ্চতা ৪০ থেকে ১০০ ফুট। এদের প্রশস্ততা ৫ ফুট পর্যন্ত হয়। পাতাঝরা উদ্ভিদ। বছরের একটি নিদিষ্ট সময়ে গাছের পাতা ঝরে যায়। গাছের ছাল অনেকটা গামারি’র মতো। সাধারণত মে থেকে জুনে ফুল ফোটার কথা থাকলেও এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে পঙ্গপাল ফুটতে শুরু করেছে। ফুলের ব্যাপ্তিকাল এক থেকে দুই সপ্তাহ। ফুলের সুতীব্র সুগন্ধযুক্ত। ফুলের রং সাদা। থোকায় থোকায় না ঝুলে গাছের শাখা ছড়িয়ে ফুলগুলো থাকে। সাধারণত যেখানে প্রচুর সূর্যের আলো পরে এবং মাটি শুষ্ক থাকে তেমন জায়গায় এদের জন্য উপযোগী।
খাগড়াছড়ির শৌখিন আলোকচিত্রী ও হিল অর্কিড সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সাথোয়াই মারমা বলেন ,‘কালো পঙ্গপাল আমাদের নেটিভ ট্রি। গ্রীষ্মের এই সময়ে ফুল ফোটে। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন জায়গায় এটি ছড়িয়ে আছে। এর সুবাস অসাধারণ। ফুলটি দেখতেও সুন্দর। গাছ উচ্চতায় মাঝারি। তবে আলুটিলা সড়কে এবং মাইসছড়িতে বেশ বড় দুটি গাছ আছে। ব্যাঙমারায় খুব ঝোপালো একটি গাছ রয়েছে। ’
বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন সোসাইটি অব সিএইচটির সংগঠক সবুজ চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের জন্য প্রায়ই গাছ কাটা হয়। অনেক সময় ফুলের গাছও কেটে ফেলা হয়। এ কারণে পাহাড়ি এলাকা থেকে অনেক বৃক্ষ হারিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য এলাকায় প্রাকৃতিক বন পুনরুজ্জীবিত করতে পারলে আমাদের দেশীয় বৃক্ষ ফিরে আসবে।’