জ্যৈষ্ঠের দুপুর। খাঁ খাঁ রোদ্দুর। গরমের তীব্রতায় পিচঢালা সড়ক গলে যাচ্ছে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা হয়ে রাঙামাটির লংগদু যেতে মেরুং ইউনিয়ন। মেরুংয়ে সড়ক ধরে কিছুদূর অগ্রসর হলে চংড়াছড়ি। হঠাৎ সড়কের পাশে একটি গাছে দেখা মিলল অচেনা ফলে পরিপূর্ণ একটি ছোট গাছ। সামনে অগ্রসর হওয়ার পর আবারও একই ফলভরা গাছ। এরপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখা গেল মাঝারি আকারের গাছে পাতার চেয়ে ফলের সংখ্যা বেশি।
ফলটি খুবই সুদর্শন। অনেক ছোট আকারের কমলালেবুর মতো। গ্রীষ্মের তাপে দেখতে সুন্দর ফলের খোলস ফেটে যাচ্ছে। ফলের ভেতরে সাদা বীজ। ওপরের অংশ কমলা রঙের। পাকার পরে ফল কমলা রঙ ধারণ করে। কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে। স্থানীয়রা জানাল এই ফল পাখিদের পছন্দ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাছটির নাম বন নারাঙ্গা। বিরল উদ্ভিদ। অনেক এলাকায় এটিকে তেলকাঁকড়া বলা হয়। গাছটির ইংরেজি নাম ‘False lime’, বৈজ্ঞানিক নাম ‘Suregada multiflora’।
‘উদ্ভিদকথা’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে সুরেন্দ্র শেখর বিশ্বাস নামে এক নিসর্গপ্রেমী লিখেছেন, নারাঙ্গা মানে কমলালেবু। ল্যাটিন বানান Narange, ইংরেজিতে এটি অপভ্রংশ হয়ে Orange (an orange) পাকা ফলের রঙ কমলা বা কদমফুলের ভেতরের থ্যালামাসটার মতো, পাকলে ফলটা ফেটে যায়। তাই কোথাও কোথাও একে বলে ফাটা কদম।
বন গবেষণা ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামের সাবেক মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা মো. খায়েরুল আলম বলেন, ‘বন নারাঙ্গা পাহাড়ি বন, শালবন, গ্রামীণ বন প্রায় সব জায়গাতেই হয়। ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে খুব সম্ভব গাছটি পাওয়া যায় না। এই ফল পাখিদের বেশ প্রিয়।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সদ্য সাবেক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘হর্নবিল বা ধনেশ পাখির কাছে এটি বেশ প্রিয় ফল।’
বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন সোসাইটি অব সিএইচটির সংগঠক সবুজ চাকমা বলেন, ‘এখন আমাদের দেশীয় গাছ অনেক বিরল। বন নারাঙ্গা আগের মতো সচরাচর দেখা যায় না। মূলত জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের জন্য নির্বিচারে অনেক গাছ কাটা হয়, এতে বিরল গাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষায় স্বর্ণচাপা, গর্জন, উদালসহ আমাদের দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষের সম্প্রসারণ করতে হবে। একই সঙ্গে প্রকৃতিবান্ধব বৃক্ষের সুরক্ষা দিতে হবে।’