সেকশন

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২
Independent Television
 

গ্যাসলাইটিং: নীরব কিন্তু ভয়ংকর মানসিক নির্যাতন

আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ১১:২৭ এএম

গ্যাসলাইটিং এক ধরনের মানসিক নির্যাতনের পদ্ধতি, যেখানে একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য একজনকে তার নিজের উপলব্ধি, স্মৃতি বা বাস্তবতা নিয়ে সন্দিহান করে তোলে। এটি ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়, মানসিক দুর্বলতা তৈরি করে এবং ভুক্তভোগীকে মানসিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার একটি কৌশল হয়ে দাঁড়ায়।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গ্যাসলাইটিং সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে ঘটে এবং এটি যেকোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে হতে পারে যেমন: বৈবাহিক সম্পর্ক, কর্মক্ষেত্র, পরিবার, এমনকি বন্ধুত্বেও।

মনোবিশ্লেষক রবিন স্টার্ন তার গবেষণার বলেন, গ্যাসলাইটিং একটি “প্যাটার্ন অফ মেন্টাল ম্যানিপুলেশন” যা ধীরে ধীরে ভুক্তভোগীর আত্মবিশ্বাস এবং বাস্তবতা বোঝার ক্ষমতা হরণ করে।

সাইকোলজিস্ট ও ট্রমা থেরাপি বিশেষজ্ঞ স্টেফানি এম. এ. সুইট তার গবেষণায় বলেন, এই কৌশলটি নার্সিসিস্টিক পারসোনালিটি ডিজঅর্ডারযুক্ত ব্যক্তিদের মাঝে অনেক বেশি দেখা যায়, যারা অন্যকে মানসিকভাবে দুর্বল করে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে চায়।

গ্যাসলাইটিংয়ের লক্ষণসমূহ

১. অস্বীকার: আমি তো এমন কিছু বলিনি।

২. ঘটনার ধরন বদলে দেওয়া: তুমি ভুল বুঝেছো।

৩. তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য: তুমি সবসময় অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাও।

৪. নিজেকে দোষী ভাবতে বাধ্য করা: তোমার কারণে আমার এমন আচরণ।

৫. বিচ্ছিন্ন করে ফেলা: বন্ধু বা পরিবারের থেকে দূরে সরিয়ে ফেলা।

মানসিক স্বাস্থ্য ও গ্যাসলাইটিংয়ের প্রভাব

  • আত্মসম্মানহানী।
  • উদ্বেগ ও বিষণ্নতা।
  • বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা।
  • আত্মবিশ্বাসের সম্পূর্ণ ধ্বংস।

করণীয় ও প্রতিরোধ

  • নিজের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করা।
  • বিশ্বস্ত বন্ধুবান্ধব বা থেরাপিস্টের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা।
  • নিজের ওপর বিশ্বাস গড়ে তোলা ও আত্মমর্যাদা রক্ষা।
  • সীমা নির্ধারণ ও প্রয়োজনে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা।

গ্যাসলাইটিং একটি নীরব কিন্তু ভয়ংকর মানসিক নির্যাতন, যা প্রতিরোধ করা যায় সচেতনতা, মানসিক দৃঢ়তা এবং উপযুক্ত সহায়তা গ্রহণের মাধ্যমে। আমরা যদি নিজের অভিজ্ঞতার প্রতি সচেতন হই, তবে এই কৌশল থেকে নিজেকে এবং অন্যদের রক্ষা করা সম্ভব।

গ্যাসলাইটিংয়ের গভীর নিপীড়ন

সায়মা একজন উচ্চ শিক্ষিত, সাংগঠনিকভাবে দক্ষতাসম্পন্ন নারী। একটি এনজিওতে কর্মরত। আত্মবিশ্বাসী, বন্ধুপ্রিয় ও আবেগপ্রবণ। তাহসান, তার স্বামী, একজন বুদ্ধিদীপ্ত, কিন্তু অত্যন্ত কৌশলী ও নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তাদের বিয়ের প্রথম বছরটি ছিল নিখুঁত—ভালোবাসা, উপহার, প্রশংসা, আর একে অপরকে সময় দেওয়া।

প্রেম থেকে নিয়ন্ত্রণের যাত্রা

তাহসান প্রথমদিকে বলতেন, তুমি অন্য মেয়েদের মতো না, তুমি আলাদা। কিন্তু দ্বিতীয় বছরে এসে এই ‘আলাদা’ হয়ে ওঠে নিয়ন্ত্রণের একটি ফাঁদ। একদিন সায়মা তার এক পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে ক্যাফেতে দেখা করে। বাড়ি ফিরলে দেখেন তাহসান চুপচাপ। সায়মা চুপচাপ থাকার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘তোমার মতো মেয়ে এত সহজে কারো সঙ্গে বসতে পারে? আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম। তুমি আমাকে ঠকালে।’ সেই এক ঘণ্টার বন্ধুত্বপূর্ণ আড্ডা পরিণত হলো সায়মার ‘চরিত্র সন্দেহ’-এর অভিজ্ঞতা।

তাহসান নিয়মিত সায়মাকে প্রশ্ন করত, ‘আজ এত হাসিখুশি কেন? নিশ্চয় কারো থেকে স্পেশাল কিছু পেলে।’ এ কথায় কিছুদিন পর থেকে সায়মা অফিসে হাসলেও অপরাধবোধে ভুগতেন। তাহসান প্রায়ই বলতেন, ‘তোমার মনে কী হয় আমি সব বুঝি। তুমি কি জানো, তুমি কীভাবে আমাকে মানসিকভাবে ধ্বংস করছো?’

এই ধরনের কথা এত বেশি বলা হতো যে, সায়মা নিজেকেই সন্দেহ করতে শুরু করে। মনে মনে ভাবে, ‘তাহলে কি আমি-ই অপদার্থ? আমি-ই কি বিষাক্ত?’

তাহসান সায়মার অনুভূতি অস্বীকার করে বলতো, ‘তুমি অতিরিক্ত আবেগি’, আবার তার আবেগকে বাঁধা দিয়ে বলতো,‘এখন কান্নাকাটি করে নাটক কোরো না’ এবং তাহসান তার চারপাশের মানুষদের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে সায়মাকে আলাদা করে রাখে। সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্ব ছিল আত্মবিশ্বাস ভেঙে আত্মপরিচয় হারানো।

তাহসানের কথায় সায়মা মনে মনে ভাবে, ‘আমি তো আগে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, এখন তো এক কথায়ও দাঁড়াতে পারি না।’ সে আরও মনে করে, তাহসান না থাকলে সে হয়ত “চরম ব্যর্থ” হয়ে যেত।

মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব

দীর্ঘমেয়াদে এই গ্যাসলাইটিং-এর কারণে সায়মার মধ্যে যে সমস্যা দেখা দেখা দেয় সেগুলো হলো–

১. প্যানিক অ্যাটাক।

২. স্মৃতিভ্রষ্টতা।

৩. স্লিপ ডিসঅর্ডার।

৪. আত্মহীনতা।

৫. বেশি আবেগপ্রবণ হওয়া।

একদিন রাতে আত্মহত্যার চিন্তা সায়মার মাথা ভর করেছিল। সেই রাতে নিজের ডায়েরিতে লিখে রাখেন, ‘আমি বাঁচতে চাই, কিন্তু জানি না আমি কে, আর কীসের জন্য বাঁচব।’

চিকিৎসা

পরবর্তীতে এক সহকর্মীর সহায়তায় সায়মা একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও থেরাপিস্টের কাছে যান। দীর্ঘ ৮ মাসের থেরাপি, সাপোর্ট গ্রুপ এবং নিজের অভিজ্ঞতার সায়মা আস্তে আস্তে বুঝতে পারেন ‘তাহসানের তৈরি বাস্তবতা ছিল মিথ্যা। আমি যে ছিলাম, এখনো সেই মানুষটাই। আমাকে হারাতে দেওয়া ঠিক হবে না।’

গ্যাসলাইটিং শুধু সম্পর্ক ভাঙে না, ব্যক্তিত্বের কাঠামোকেও ভেঙে ফেলে। এর প্রভাব পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি), উদ্বেগ এবং দীর্ঘস্থায়ী আত্মবিশ্বাসহীনতা পর্যন্ত গড়াতে পারে।

এটি খুব পলিশ, স্মার্ট, এবং ‘ভদ্র’ আচরণের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। ‘গ্যাসলাইটিং মানে শুধু জোরে চিৎকার নয় — এটি এক ধরনের নীরব খুন, যা মানুষকে নিজেকে ভুলে যেতে বাধ্য করে। এই মানসিক নির্যাতন দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায় – প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে।

লেখক: সাইকোলজিস্ট, শান্তিবাড়ী

বর্ষাকালে বিভিন্ন রোগের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ সময় খাদ্যতালিকায় সুষম খাবার রাখা জরুরি। মৌসুমি ফল, ভেষজ পানীয় এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার শরীরের পানিশূন্যতা, হজমের সমস্যা, ওজন কমাতে...
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের ওজনও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে। এই দুইয়ের যুগলবন্দি যদি সময়মতো নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে তা রূপ নিতে পারে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, জয়েন্টের...
হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে সাধারণ রোগীদের তুলনায় জটিলতা বেশি হয়। তাই তাদের জন্য চাই বাড়তি সতর্কতা, সঠিক চিকিৎসা, আর সময়মতো সিদ্ধান্ত। ডেঙ্গুতে শরীরের রক্তের প্লেটলেট সংখ্যা...
বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম কারণ হার্ট অ্যাটাক, যা কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই ঘটে থাকে। কিছু কিছু খাবার আছে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেক সময় হার্টের সমস্যা থেকে দূরে থাকা...
দেশে বেকারত্বের হার এখনো আশানুরূপ কমেনি, মন্তব্য করে এ সমস্যার সমাধানই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা। যুব উদ্যোক্তাদের কর্মশালায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- বিডার...
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.