মালয়েশিয়ায় বিপুল কর্মী যেতে না পারার কারণ খুঁজতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিকে আরও পাঁচ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়া যেতে না পারা তিন হাজার কর্মী অভিযোগ করেছেন।
আজ মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কর্মসংস্থান অনুবিভাগ) নূর মো. মাহাবুবুল হককে প্রধান করে সাত কর্মদিবসে মালয়েশিয়ার নির্ধারিত সময়ে কর্মী না যেতে পারার কারণ খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী, তদন্ত কমিটির শেষ কর্মদিবস ছিল আজ। তদন্ত কমিটির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আছে কিনা-জানতে চাওয়া হয় প্রতিমন্ত্রীর কাছে।
জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইমিগ্রেশানে মালয়েশিয়ার রিপোর্ট, ১০১টা রিক্রুটিং এজেন্ট, বায়রার থেকে রিপোর্ট নিচ্ছি। সে হিসেবে একটু সময় লাগছে। তদন্ত কমিটি একটু সময় চাইছে। আমরা তাদের আরও পাঁচ কর্মদিবস সময় দিয়েছি। ঈদের পরে আমরা বসব রিপোর্ট নিয়ে।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘মালয়েশিয়ার ব্যাপারে আমাদের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। প্রত্যেকটা পয়েন্টে, প্রত্যেকটা জায়গায় খোঁজ-খবর নেওয়ার মাধ্যমে যা বেরিয়ে আসবে সেটার ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নেব। আমরা প্রত্যেকটা সেক্টরে যেমন-ইমিগ্রেশান দিয়ে কতজন মালয়েশিয়া যেতে পারছে, সেই প্রতিবেদনও আনছি।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা চাই, একটা সঠিক স্বচ্ছ প্রতিবেদন বেরিয়ে আসুক। যার মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হবে এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের সমস্যায় না পড়তে না হয় সে ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।’
এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়া যেতে না পারা তিন হাজার কর্মী অভিযোগ করেছে জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আবেদন করার শেষ সময় ৮ জুন যদিও শেষ বলা হয়েছে এখনও আবেদন আসছে। আমরা এগুলো গ্রহণ করছি। তিন হাজার আবেদন এসেছে। এগুলোর মধ্যে সিঙ্গেল আবেদন নয়, গ্রুপ আবেদনও রয়েছে। যেহেতু পাঁচ কর্মদিবস বাড়ানো হয়েছে এর ভেতরে যা অভিযোগ আসবে তা আমলে নিয়ে আসা হবে।’
কর্মীদের যেতে না পারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তারা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। যাদের কারণে ভাবমূর্তি নষ্ট তাদের কোনো দিন ছাড় দেব না। তাদের আইনের আওতায় এনে আইনআনুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কর্মীদের টাকার ফেরতের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘টাকাটা ফেরত পাবার ব্যাপারে আমরা বসব। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করব যেন সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়।’
সিন্ডিকেট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা সিন্ডকেট সহ্য করব না। রিক্রুটিং এজেন্সি যারা অনুমোদিত সবাই কাজ করবে। আমরা চাই, সবাই কাজ করুক, সবার জন্য খোলা থাকুক। আমরা সিন্ডিকেটে বিশ্বাস করি না।’
মালয়েশিয়া গিয়ে কর্মীদের কাজ না পাওয়া এজিন্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা কাজ পাচ্ছে না আমরা রিক্রুটিং এজেন্সিকে ডেকে এবং যারা কাজ দেওয়ার জন্য ডিমান্ড নোট দিয়েছিল, যারা রিসিভার তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করব। যদি কাজ না হয় তাহলে আমরা রিক্রুটিং এজেন্টের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
প্রসঙ্গত, মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ভিসা পাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের দেশটিতে প্রবেশের শেষ দিন ছিল গত ৩১ মে। শেষ সময়ে বহু চেষ্টার পরও বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র পাওয়া প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশি দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ পাননি বলে জানিয়েছে সরকার।