সেকশন

মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
Independent Television
 

শুধু হিন্দি ছবির ‘অশ্লীলতা’ নিয়েই ডিপজলের মাথাব্যথা কেন

আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম

সদ্যই হয়ে গেল দেশের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। এবার অবশ্য সমিতির চেয়ারের অধিকার নিয়ে আদালতে যেতে হয়নি। বরং নির্বাচনে জেতা এবং হেরে যাওয়া দুই পক্ষই বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দায়িত্ব গ্রহণ ও হস্তান্তর করেছে। আর তারপরই নতুন দায়িত্ব নেওয়া একজন সুপরিচিত শিল্পী হিন্দি ভাষার ছবি নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন। আর তাতেই উঠছে শিরোনামে তোলা প্রশ্নটি।

শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ঢাকাই ছবির দুজন সুপরিচিত অভিনেতা, যথাক্রমে মিশা সওদাগর ও মনোয়ার হোসেন ডিপজল। এই দুই অভিনেতা খল চরিত্রে অভিনয় করেই খ্যাতি কুড়িয়েছেন। পরে অবশ্য দুজনই নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং করছেন। দুজনেরই বিচিত্র চরিত্রে অভিনয়ের সক্ষমতা আছে এবং এক্ষেত্রে তাঁরা খানিকটা অব্যবহৃতও। চাইলেই নির্মাতারা এদিকটা ভেবে দেখতে পারেন। তাতে আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গন আরও সমৃদ্ধ যে হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

শিল্পী সমিতির এই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের পরপরই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত মনোয়ার হোসেন ডিপজল কিছু মন্তব্য করেছেন। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নতুন দায়িত্ব নেওয়ার আগেই তিনি জানান পুরোনো প্রত্যয়। বলেন, হিন্দি ছবির আমদানি বন্ধ করাটাই হবে তাঁর অন্যতম কাজ। অভিনেতার জবানে, ‘হিন্দি ছবি আমদানি কীভাবে হলো সেটাই আমি জানি না। এই কমিটি বলে তারা পক্ষে ছিল না, ওই সংগঠন বলে তারা পক্ষে ছিল না। আর লভ্যাংশ নেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা তো হিন্দি ছবি আমদানির পক্ষে না। হিন্দি ছবি যেন আমদানি না হয় সেই চেষ্টা করব। আমরা দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে চাঙ্গা করতে চাই। হিন্দি ছবিকে জায়গা ছেড়ে দিতে চাই না। কলকাতার বাংলা ছবি আসুক আমার আপত্তি নেই।’

ডিপজল আরও কিছু কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হিন্দি সংস্কৃতি আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির জন্য খারাপ। দেশীয় সংস্কৃতি ধ্বংস করে দেবে হিন্দি ছবির এমন আমদানি অব্যাহত থাকলে। মুখ থুবড়ে পড়বে দেশীয় চলচ্চিত্র। যারা বলছেন হিন্দি ছবি হল সচল রাখে, তারা সঠিক বলছেন না। নিয়ম করে দেশীয় সিনেমা মুক্তি দিলে হল এমনিতেই সচল থাকবে। আমি সেটাই করে দেখাব। এক বছরের মধ্যে আপনারা পরিবর্তন দেখতে পারবেন।’

খুবই ভালো বক্তব্য। শিল্পী সমিতির দায়িত্ব পেয়েই একজন অভিনয়শিল্পী যখন এ ধরনের বক্তব্য দেন, যাতে দেশি সিনেমা শিল্পকে চাঙা করার কথা থাকে, সেটি আসলেই আশা দেখায়। যদিও এমন কথা বা আশা আমরা আগেও শুনেছি বহুবার, তবু ভেঙে যাওয়া মনও সুদিনের প্রত্যাশা করে। মানুষের ধর্মই এমন। হাজার হতাশার বিষয় হলেও আশাবাদী হতে চায়।

সমস্যা হলো, ডিপজল শুধু একটি ভাষার সিনেমার দিকেই অভিযোগের তির ছুড়ছেন। সেটি হলো হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র। তিনি সংস্কৃতি হিসেবেও হিন্দির দিকে আঙুল তুলেছেন। একজন চলচ্চিত্রকর্মী হিসেবে তিনি সেই অধিকার অবশ্যই রাখেন। কথা হলো, হিন্দি ছবি কি সবগুলোই অশ্লীল? সবই কি এই দেশের সংস্কৃতির জন্য খারাপ?

বিষয় হলো, একটি ভাষাকেন্দ্রিক সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সব ছবি কখনোই খারাপ হতে পারে না। সবক্ষেত্রেই ভালো ও খারাপ থাকে। কেবলই ভালো বা কেবলই খারাপ কিছুই হয় না। কোথাও পার্সেন্টেজ বেশি থাকে, কোথাও কম। আমাদের বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই। ১৯৭০, ’৮০ বা নব্বইয়ের দশকের সিনেমাগুলোর সঙ্গে যখন তুলনামূলক বিচারে যাবেন, তখন এ দেশের সিনেমাজগতের অশ্লীলতার যুগকে কেবলই অন্ধকার অধ্যায় মনে হবে। এবং ওই সময়টাকেই কেবল বিবেচনায় নিলে দেখবেন অশালীন ছবি বাদে আপনি আর কিছুই খুঁজে পাবেন না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ডিপজলের উত্থানের সময়টাও ছিল কাছাকাছি। তাঁর বিরুদ্ধেও ছিল অশ্লীল ছবিতে অভিনয়ের অভিযোগ। সেসবের মিম এখনো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ঘুরে বেড়ায় হরদম। সেসবের মধ্যে যেমন পাটক্ষেত বিষয়ক সংলাপনির্ভর ছবি ছিল, তেমনি যৌবনের প্রতীক হিসেবে লাল টমেটোকে পরিচিতি এনে দেওয়া ছবিও ছিল। ছিল কাঁচা মাংসবিষয়ক ‘জ্ঞান’সমৃদ্ধ ছবিও। সেসব ছবি কিন্তু অশ্লীল হিসেবেই খ্যাত। এসব সিনেমার নাম বলতে গেলে বলা যায় ‘কঠিন শাস্তি’, ‘ভয়ংকর বিষু’,  ‘ঠেকাও মাস্তান’, ‘বস্তির রানী সুরিয়া’ বা ‘বোমা হামলা’ ইত্যাদি ইত্যাদি।

এসবের তুলনায় হিন্দি ছবিকে মাপতে হলে আসলে সেখানকার বি গ্রেডের সিনেমাগুলোকে পাল্লায় নিতে হবে। হ্যাঁ, বলিউডের কিছু ছবি তো প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বানানোই হয়। তবে সেগুলো একইসাথে ঘোষণা করাও থাকে। এখন পর্যন্ত বলিউডের এ ধরনের কোনো ছবিই বাংলাদেশে মুক্তি পায়নি। আর এর বাইরে যেসব ছবি মুক্তি পেয়েছে, সেগুলো মূলত বাণিজ্যিক ছবি। সেসবও এ দেশের সেন্সর নীতি মেনেই মুক্তি পায়। সুতরাং কী দেখাবেন, কী দেখাবেন না—তা আসলে সরকারি কর্তৃপক্ষের হাতেই থাকে।

এ দেশে হিন্দি ছবি মুক্তির বিষয়টি অনেকটাই হল মালিককেন্দ্রিক। মূলত হল মালিকেরাই এসব ছবি আমদানি করে চালাতে চান নিজেদের ব্যবসা বজায় রাখার স্বার্থে। এর পেছনে দেশীয় চলচ্চিত্রের নাজেহাল অবস্থা এবং কম ছবি নির্মাণই মূল কারণ। কারণ হল মালিকদের সিনেমাই দেখাতে হয়, তারা বাদাম বিক্রি করতে পারেন না। ফলে সিনেমা না পেলে তাদের টিকে থাকা কঠিন। এবং এ কারণেই তাঁরা বিদেশি সিনেমা দেখাতে চান। সেটি ইংরেজিও হতে পারে, হিন্দিও হতে পারে। যেহেতু বলিউডের নায়ক–নায়িকাদের ক্ষেত্রে দেশীয় দর্শকের এক ধরনের আগ্রহ আগে থেকেই আছে, তাই হিন্দি ছবির প্রতি হল মালিক বা আমদানিকারকদের আগ্রহ সৃষ্টি হতেই পারে। মূলত গত বছরের জানুয়ারিতে ভারতীয় ‘পাঠান’ ও তারপর ‘জওয়ান’ ছবি মুক্তির পর থেকেই এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ওই সময় ডিপজল দাবি করেছিলেন, ‘হিন্দি সিনেমায় অশালীন দৃশ্য ও গান থাকে। বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে হিন্দি সিনেমা যায় না। এসব সিনেমায় এমন অনেক দৃশ্য ও গান থাকে যেগুলো অশ্লীলতার পর্যায়ে পড়ে।’ ডিপজলের এমন বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চলে তুমুল আলোচনা। কেউ কেউ এমন কথা তোলেন যে, ডিপজল নিজেই তো অনেক ‘অশ্লীল’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন!

ডিপজলের হিন্দি ছবি বিষয়ক বিরোধিতা আসলে কেবল ভাষাকেন্দ্রিক নয়। একটু খেয়াল করলেই এটি বোঝা যায়। এটি অনেকটা এজেন্ডাভিত্তিক। একটি নির্দিষ্ট শ্রেণিকে তুষ্ট করার জন্যই আসলে এমন এজেন্ডা এ দেশে প্রায়শই হাজির হয়ে থাকে। ডিপজল বলছেন যে, ওপার বাংলার সিনেমা এলে তাঁর আপত্তি নেই। ইংরেজি সিনেমা নিয়ে তিনি কিছুই বলেননি। যেসব দৃশ্যের কথা উল্লেখ করে তিনি আপত্তির প্রসঙ্গটি তুলেছেন, সেগুলো কিন্তু ওপার বাংলার বা ইংরেজি সিনেমাতেও থাকতে পারে। অথচ কেবলই হিন্দি সিনেমা বা সংস্কৃতিকে লক্ষ্য করে এগোচ্ছেন ডিপজল। এতে এক ধরনের পক্ষপাতের লক্ষণ চাইলে দেখাই যায়।

এসব বিদেশি ছবিকে জোর করে রোখার চাইতে, বা অন্য সংস্কৃতিকে নিকৃষ্ট প্রমাণের বদলে আসলে আত্মোন্নয়নে মনযোগ দেওয়াই ভালো। অন্যকে জোর করে আটকে মনোপলি মার্কেট তৈরি করে এই মুক্তবাজার অর্থনীতির বিশ্বায়িত সমাজে কোনো সুফল মিলবে না। আপনি প্রেক্ষাগৃহে না দেখালেও তা টিভি বা মোবাইলে তো আটকাতে পারবেন না। সুতরাং সেসবের বদলে নিজেদের উন্নতিতে নজর দেওয়া ভালো হবে। আমরা অবশ্যই ভালো দেশি সিনেমা চাই। ভালো কনটেন্ট দেখতে চাই। অন্য কোনো ইন্ডাস্ট্রির সিনেমার নকল দেখতে চাই না। দেখতে চাই না সেই আদি–অকৃত্রিম চলের ধনীর দুলালী ও গরিবের পোলার প্রেম ও বিরোধবিষয়ক চর্বিত চর্বণও। বরং এর বদলে ভালো ও মৌলিক কাহিনির চিত্রনাট্য বানিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হতে হবে। তবেই দেশি দর্শককে নিজস্ব কনটেন্টে বেঁধে রাখার চেষ্টা করা যাবে। পাটক্ষেত বিষয়ক জ্ঞানে তা কখনোই অর্জিত হবে না।

আসলে জোর করে এই পৃথিবীতে তেমন কিছুই হয় না, কেবল শক্তিক্ষয় বাদে। আমাদের দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে এখনো সেটিরই অভাব। এর আগেও ডিশের সংযোগের বিরুদ্ধে আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে কথা বলতে শুনেছি। আকাশসংস্কৃতির এই যুগে কারও যাত্রাই আপনি জোর করে বন্ধ করতে পারবেন না। দিনশেষে এটি প্রতিযোগিতা। আর তাতে নিজেদের সামর্থ্য কম থাকলেও লড়াই চালিয়েই যেতে হবে। ঠিক যেভাবে প্রবল বলিউডকে এখন ফিকে করে দিতে পেরেছে তামিল বা মালায়লম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, ঠিক সেভাবেই আমাদেরও মান দিয়েই প্রতিযোগিতায় সংগ্রাম করতে হবে। অন্য কোনোভাবে তাতে জেতা যাবে না। আমাদের সিনেমা পাড়ার মানুষজন সেটি যত দ্রুত উপলব্ধি করতে পারবেন, ততই মঙ্গল। নইলে কেবল সমিতির কমিটিই পরিবর্তন হবে, বৈপ্লবিক ঘোষণা ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হবে না।

লেখক: উপবার্তা সম্পাদক, ডিজিটাল বিভাগ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন

‘সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণা’–এই বাক্যটি দিয়ে অনেক সিনেমা‑নাটকই তৈরি হয়। আমাদের দেশে যেমন হয়, বিদেশেও হয় হরহামেশা। ওটিটি’র এই দুনিয়ায় এ ধরনের বিনোদনমূলক ভিডিও কনটেন্ট আরও বেশি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি...
‘টেলিভিশন’ চলচ্চিত্রে ফারুকী দেখিয়েছেন কুসংস্কার আর গোঁড়ামিপূর্ণ এক গ্রামীণ সমাজের চিত্র। একটু-আধটু প্রেম-বিরহের ছোঁয়াও ছিল সেখানে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রে ‘এক বেকার যুবকের’ চোখে তিনি ফুটিয়ে...
ভারতে এখন চলছে পুষ্পা–ঝড়। শুধু ভারতেই কেন, ঝড় এক অর্থে চলছে সারা বিশ্বেই।  এরই মধ্যে ‘পুষ্পা টু’ হাজার কোটি রুপির বেশি আয় করে ফেলেছে।  কিন্তু কেন এত জনপ্রিয় হলো পুষ্পার গল্প? শুধুই কি কনটেন্টের...
ঘটনাটা ২০২১ সালের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথম পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনির (পিএনজি) বিপক্ষে মাঠে নামার কথা টাইগারদের। আইসিসি আগের দিনই সংবাদ সম্মেলনের সময় সূচি জানিয়ে দেয়। সে...
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে কারওয়ান বাজার মেইন রোড পারাপারের সময় পিকআপ ভ্যানের চাপায় মো. মোক্তার মিয়া (৬০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত ১২টা নাগাদ মুমূর্ষু অবস্থায় মোক্তার মিয়াকে...
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ড পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজাজুড়ে হামলা আরও জোরদারের পর এমন অঙ্গীকারের ঘোষণা এল। বার্তা সংস্থা এএফপির...
বাংলাদেশকে চাপে রাখতেই সীমান্তে ভারতের পুশইন কিংবা পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে মেনে নিতে না পারার কারণেই দেশটি এসব করছে। এমন...
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গতকাল মধ্যরাত থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এখন পর্যন্ত এই হামলায় ৫০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম...
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.