সেকশন

শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
Independent Television
 

অশান্ত উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের শেষ কোথায়?

আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ০৬:৩৬ পিএম

একটা বড় মাপের অশান্তি ধীরে ধীরে ছায়া বিস্তার করে চলেছে সেই সুদূর বেলুচিস্তান থেকে মিয়ানমারের আরাকান পর্যন্ত। আমরা জানি, এগুলো সবই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। এই উপমহাদেশে বিচ্ছিন্নতার ইতিহাস নতুন নয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হয়। দুই শ বছরের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয় এই উপমহাদেশ। উপমহাদেশের জনগণ বহু রক্ত দিয়ে যুগের পর যুগ সংগ্রাম করে এই স্বাধীনতা পেয়েছিল। এই স্বাধীনতার পেছনে এই উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবার সমান আত্মদান ছিল।

ভারতজুড়ে অসংখ্য মুসলমান তাদের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল এই আশায় যে, তারা তাদের জাতিসত্তা নিয়ে শান্তিতে মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারবে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্নভঙ্গ হতে সময় নেয়নি। অচিরেই মুসলমান জনগোষ্ঠী বুঝতে পারল ব্রাহ্মণ্যবাদী নেতৃত্বের অধীনে তাদের স্বাধীন সত্তা আর ধর্ম নিয়ে টিকে থাকা অসম্ভব। শুরু হলো আরেক সংগ্রাম। ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্টি হলো দুই রাষ্ট্র–ভারত ও পাকিস্তান। কিন্তু তার মাঝে সংঘটিত হয় ইতিহাসের ন্যাক্কারজনক দাঙ্গা। প্রাণ হারায় বিপুলসংখ্যক মানুষ।

সে এক মর্মান্তিক ইতিহাস। মনুষ্যত্ব পরাজিত হলো সীমাহীন হিংসা‑বিদ্বেষ আর ধর্মীয় উগ্রবাদের কাছে। মুসলমানরা তাদের স্বপ্নের স্বাধীন আবাসভূমি পাকিস্তান পেল ঠিকই, তবে ভারতে রয়ে গেল বিপুলসংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠী। এমনকি কাশ্মীর ও হায়দ্রাবাদের মতো মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশও ভারতের দখলে চলে যায়। এমনকি বাংলাদেশের আশপাশের রাজ্যগুলো; যেমন–আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গে অনেক মুসলমান আছে। কিন্তু রাজ্যগুলো ভারতের অংশ হওয়ার পরও মুসলমানদের বহিরাগত বলা হচ্ছে। এদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশেও প্রচুর সনাতন ধর্মাবলম্বী আছে। যদিও দুই দেশের বিরাটসংখ্যক মানুষ নিজেদের মধ্যে সম্পত্তি বিনিময়ের মাধ্যমে হিন্দুরা ভারতে আর মুসলমানরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারতে বিপুলসংখ্যক মুসলমান থেকে যায়। যায় বললে ভুল হবে, এগুলো মূলত তাদেরই। সেখানে বংশ পরম্পরায় তারা বাস করে আসছে। কিন্তু যেহেতু দেশ দুটা বিভক্ত হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে, তাই ভারতে থেকে যাওয়া এই মুসলমানরা খাতায় কলমে নাগরিক হলেও তাদের বহিরাগত হিসেবে দেখা হয়।

জম্মু কাশ্মীরে মুসলিমদের ওপর অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ছবি: সংগৃহীত
তুচ্ছ ধর্মীয় ইস্যুতে যেমন গোমাংস ভক্ষণের দায়ে মুসলমানদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। অথচ স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের অবদান বাদই দিলাম, বর্তমানেও ভারতে তাদের অবদান হিন্দুদের চেয়ে কোনো অংশে কম না। বিশেষ করে জম্মু কাশ্মীরে তাদের ওপর অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কংগ্রেস সরকারের আমলেও এই বৈষম্য কম ছিল না। কিন্তু বর্তমানে তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে, আর হিন্দুত্ববাদীরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া।

কাশ্মীরের সাম্প্রতিক ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের এক বিধায়ক বা এমএলএ শুভেন্দু অধিকারী কাশ্মীরের সাম্প্রতিক ঘটনায় তার ক্ষোভ জানাতে গিয়ে বলেছেন, গাজায় যেভাবে মুসলিমদের হত্যা করা হচ্ছে, ভারতেও মুসলিমদের সেভাবে হত্যা করা হবে। এ কথা তিনি প্রকাশ্যে ভারতীয় মিডিয়ার সামনে বলেছেন, কোনো রাখঢাক করেননি। তিনি নিজেদের অধিকার জাহির করতে গিয়ে মানবাধিকার হরণের সীমা যে লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন, তার প্রতি বিন্দুমাত্র হুঁশ তাঁর নেই। হিংসা আর ধর্মান্ধতা মানুষকে কত নিচে নিতে পারে, তার প্রমাণ বিজেপির নেতারা দিয়ে যাচ্ছেন।

বিশ্ব বিবেক উপেক্ষা করে ইসরায়েল যেভাবে গণহত্যা করছে, ভারত সেভাবে প্রায় ২০ কোটি (২০২৩ সালের হিসাবে) মুসলমানকে হত্যা করবে, মুসলমান মুক্ত ভারত তৈরি করবে। কিন্তু ইসরায়েল কি পেরেছে গাজার অল্পসংখ্যক ফিলিস্তিনি অধিবাসীকে মেরে ফেলে গাজা দখল করে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে? হিটলার কি পেরেছিল সব ইহুদিকে গ্যাস চেম্বারে দিয়ে মেরে ফেলতে? তাহলে কী দাঁড়ায়? কাশ্মীরে ইতিমধ্যে মুসলমান দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে। ওদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সেই রকম কোনো প্রমাণও যোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য কারণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানও বসে নেই। তারাও সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। দুই পক্ষের মধ্যে হুমকি‑পাল্টা হুমকি অব্যাহত। যদিও এ রকম যুদ্ধের ফলাফল সম্বন্ধে দুই পক্ষেরই ধারণা আছে। তাই এ ধরনের পদক্ষেপে তারা যাবে না বলেই মনে হয়। যুদ্ধ করার মতো আর্থিক সামর্থ্য ভারত বা পাকিস্তানের কারওই নেই। কিন্তু এই ধরনের একটা আবহ সৃষ্টি করে ভোটের রাজনৈতিক ফায়দা আর সেই সাথে মুসলিমদের দমন‑পীড়নের জন্য গোঁড়া হিন্দু সমর্থকদের সমর্থন লাভই মূল লক্ষ্য বলে মনে হয়।

খোদ ভারতের ভেতর থেকেও নানা ধরনের সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। ঠিক একই অবস্থা আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারে। সেখানে বর্মীরা অন্যান্য জাতি গোষ্ঠী মানুষের ওপর অকথ্য নিপীড়ন চালাচ্ছে। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের ভিটেমাটি ছাড়া করছে। তাদের অপরাধ? তারা মুসলিম। এ ছাড়া ইউরোপের বসনিয়া হার্জেগোভিনা, ফিলিপাইনে এই একই দৃশ্য দেখেছে বিশ্ববাসী। এমনকি একই ধর্মাবলম্বী মানুষকেও বঞ্চনার শিকার হতে হয়, হচ্ছে প্রতিনিয়ত দেশে দেশে। 

কাশ্মীরে ইতিমধ্যে মুসলমান দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে। তাদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
কিন্তু কথা হচ্ছে, এই উগ্র সাম্প্রদায়িকতা আর ধর্মান্ধতার ফলাফল কার দিকে যায়। তারচেয়েও বড় কথা এগুলোর ফলাফল কখন ভালো হয় না। মিয়ানমার সম্পদের দিক থেকে একটা খুবই সমৃদ্ধ দেশ হওয়া সত্ত্বেও আজকে তা খণ্ড‑বিখণ্ড হতে চলেছে। আরাকান ইতিমধ্যে স্বাধীনতার পথে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। অন্যান্য অঞ্চলগুলোও একই পথে হাঁটছে। অথচ এই দেশটা একটা সুখী‑সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার সব উপাদান বিদ্যমান ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে যাই হোক, তার নাগরিকদের জন্য সম-অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম থাকতে পারে। কিন্তু আইন আদালতের দ্বারা তা শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত। ইউরোপেও তাই। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী মালয়েশিয়া তিনটি জাতি গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত। মালয়, তামিল আর চীনা। কিন্তু দিন শেষে তাদের একটাই পরিচয় তারা সবাই মালয়েশিয়ান।

লক্ষ্য করলে দেখবেন, যেসব দেশ এই সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্ত, তারাই উন্নতি করেছে। এবারে ভারতের কথায় আসি। ভারতের এই উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ঘৃণা‑বিদ্বেষ‑হিংসা আর উগ্র ধর্মান্ধতা দেশটার অখণ্ডতার প্রতি প্রচণ্ড হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। কাশ্মীর, পাঞ্জাব, ঝাড়খণ্ড, মনিপুর–সবাই অশান্ত হয়ে উঠেছে তাদের স্বাধীনতার জন্য। এর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে হিন্দুত্ববাদীদের সাম্প্রদায়িক নীতি। আর নিজ দেশের নাগরিকদের মধ্যে প্রবল ঘৃণা‑বিদ্বেষ আর হিংসা ছড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের কৌশল–আগুন নিয়ে খেলা করার মতো। সেই আগুনেই শেষমেশ পুড়ে ছাই হতে হবে।

আন্তর্জাতিক চক্র, আর অস্ত্র ব্যবসায়ীরা এই সুযোগের অপেক্ষায়ই থাকে। আমাদের এক শিক্ষক বলতেন, নিজের ভালো পাগলেও বোঝে। কিন্তু উগ্র বর্ণবাদী ধর্মান্ধরা তাও বোঝে না। বাংলাদেশেও বিগত সরকার আর তার পোষ্য কবি, সাহিত্যিক আর বুদ্ধিজীবীর দল অসাম্প্রদায়িকতার নামে এক প্রকার সাম্প্রদায়িকতার রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিল গত ১৫ বছর ধরে। পরিণতি কী হয়েছে, তা নিশ্চয়ই আর বলার দরকার নেই। তাই বাংলাদেশের আগামী নেতৃত্বকে এই ব্যাপারে সাবধান হতে হবে। আর হিংসা‑বিদ্বেষের ওপরে উঠে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তবে উপমহাদেশের রাজনীতি, বিশেষ করে ভারত তার নীতি পরিবর্তন না করলে এই উপমহাদেশের মানচিত্রে নিশ্চিত পরিবর্তন আসবে। এই উপমহাদেশের নিরীহ‑অসহায় মানুষগুলো এই ধর্মীয় উগ্রবাদ হিংসা আর বিদ্বেষের হাত থেকে মুক্তি পাবে, কোথায় এর শেষ বলা মুশকিল।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান (ব্যবসায় শিক্ষা), বাংলাদেশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাস্কাট, ওমান

[এই মতামত লেখকের নিজস্ব। এর সঙ্গে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।]

ইরানের ওপর ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার পর আন্তর্জাতিক যেসব রাজনীতিক এর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তাদের অন্যতম কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। নিজে দুরাযোগ্য ক্যানসারে অসুস্থ থাকার পরেও ইসরায়েল ও আমেরিকার...
সব ইরানি নিজ দেশের শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য একটি ইসরায়েলি হামলার অপেক্ষায় আছে বলে ধরে নেওয়াটা ইরানি রাজনীতির চালিকাশক্তি সম্পর্কে গভীর বোঝাপড়ার অভাবকেই প্রমাণ করে। যদিও অনেক ইরানি...
অবশেষে যুদ্ধবিরতি। আমি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কথা বলছি। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায় শেষ পর্যন্ত দুই দেশ এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ভারতের রাজনীতির একটা বিশেষ অস্ত্র হলো পাকিস্তান-বিরোধী অবস্থান।...
অনেক বিশ্বনেতা পাকিস্তান ও ভারতকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এড়াতে পরামর্শ দিচ্ছেন। যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। কিন্তু পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু করেনি। ভারত পানি আগ্রাসন দিয়ে শুরু করে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার...
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদের বিচার চাই, আবার সংস্কারও চাই। বিচার-সংস্কার ছাড়া নির্বাচন বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। বিচার-সংস্কার ছাড়া যারা নির্বাচন...
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেডের দুটি কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। প্রাথমিকভাবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। 
২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাতকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত । আজ শুক্রবার বিকেলে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার আদালত এই আদেশ...
লোডিং...
পঠিতনির্বাচিত

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.