সেকশন

শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২
Independent Television
 

‘মাকে আমার মনে পড়ে’

আপডেট : ১১ মে ২০২৫, ০৬:৫৯ পিএম

‘বিশ্ব মা দিবস’‑এ সকল মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার মা নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করছি। আমার মায়ের গল্প হয়তো অনেক মায়ের গল্পের মতো একরকম হতে পারে, ভিন্নও হতে পারে। সবার মায়ের মুখের হাসি চাঁদের মুখে ঝরে।

আমার মায়ের নাম মামুনা খাতুন। জন্ম ১৯২১ সালের ৪ আগস্ট। তাঁর বাবা সৈয়দ আমির উল্লাহ, মা আমিনা খাতুন। মামুনা খাতুনের নয় বছর বয়সে মাতৃবিয়োগ হয়। মামুনা খাতুন ছাড়াও একটি ছোট ভাই সৈয়দ হাফিজউল্লাহসহ দুই ভাইবোন মাতৃহারা হন। মাতৃহারা ভাই‑বাবার দায়িত্ব তাঁকে নিতে হয় সেই নয় বছর বয়সে। তখন তিনি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। পাঠে ইস্তফা দিয়ে সংসারের দায়িত্বে যুক্ত হন মামুনা খাতুন। তাঁর বাবা দ্বিতীয়বার দ্বারপরিগ্রহ করলেও তাঁর জীবনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। সময়ের পরিক্রমায় জীবন অতিবাহিত হতে থাকে। ষোড়শী কন্যার বিয়ের সময় আসে। সরকারি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোসলেমের সঙ্গে ষোড়শী কন্যার বিয়ে দেন সৈয়দ আমির উল্লাহ।

মো. মোসলেমের নিবাস পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে। অন্যদিকে মামুনা খাতুনের শৈশব থেকে বসবাস উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর জেলার মহকুমা শহর ঠাকুরগাঁওয়ে। বিয়ের পর তিনি চলে যান শ্বশুরবাড়ি। তবে স্বামী সরকারি চাকরি করায় তাঁর সুযোগ হয় স্বামীর চাকরিস্থলের বিভিন্ন থানা শহরে বসবাস করার। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান জেলায় তাঁদের সংসারজীবন অতিবাহিত হয়। এর মধ্যে তাঁরা এক ছেলে, চার মেয়ের জনক‑জননী হয়েছেন।

ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কথা ভেবে মামুনা খাতুন থিতু হন বর্ধমানের মহকুমা শহর গুসকরায়। কয়েক বছর পর মো. মোসলেম কলকাতায় পদস্থ হন। ছেলেমেয়েদের আরও ভালো পরিবেশে পড়াশোনার ব্যবস্থা করার জন্য তাঁরা কলকাতায় চলে আসেন। এখানে আসার পর ১৯৫৬ সালের মে মাসে তাঁদের আরেক ছেলের জন্ম হয়। এর পর ঠিক এক বছরের মাথায় মামুনা খাতুনের জীবনের ওপর নেমে আসে মহাবিপর্যয়।

গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৫৭ সালের ৬ মে প্রিয়তমা স্ত্রীর কাঁধে ছয় সন্তানের ভার ন্যাস্ত করে মো. মোসলেম অনন্তলোকে যাত্রা করেন। তখন মামুনা খাতুনের বয়স ৩০ বছর। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। ছয়টি সন্তানকে প্রতিপালনের সংগ্রাম। বড় ছেলের বয়স তখন ১৪ বছর। এর পর চার কন্যা। আর কনিষ্ঠ পুত্রের বয়স ১১ মাস। মামুনা খাতুনের এই সংগ্রামই তাঁর জীবনের অভিযাত্রা। আমার বড় মেয়ে তার নানিকে বলত ‘পাওয়ার হাউস’। সেই পাওয়ার হাউসের শক্তিতে আমাদের ছয় ভাইবোনের জীবন গড়ে তুলেছেন।

মামুনা খাতুন। ছবি: লেখকের পারিবারিক অ্যালবাম থেকেআমাদের মা তাঁর জীবন দিয়ে শিখিয়েছেন লক্ষ্য স্থির থাকলে কঠিন কাজ সহজ হয়তো হয় না, কিন্তু সম্পন্ন করা যায়। খুব স্বাভাবিক কারণেই খুব সাধারণ জীবন যাপন করতেন আমাদের মা। আমার মা বলতেন, যার যতটুকু ক্ষমতা ও সুযোগ তার মধ্যেই তৃপ্ত থাকতে হয়। না হলে লোভ জন্ম নেয়, যেখান থেকে আসে অসততা, অনৈতিকতা ও দুর্নীতি। নানা ধরনের দুঃখ‑কষ্টের মধ্যে দিনযাপন সত্ত্বেও কোনো সাহায্যপ্রার্থীকে কখনো হতাশ করেননি।

আমরা দেখেছি পাড়ার গৃহিনী, বউ, মেয়েরা অনায়াসে আমার মায়ের সঙ্গে তাঁদের দুঃখ‑কষ্ট নিয়ে আলোচনা করতেন, পরামর্শ নিতেন এবং উপকৃত হতেন। সন্ধ্যাগুলো মায়ের কাটত পড়শিদের নিয়ে। এ ছাড়া মায়ের যেসব পুরাতন গৃহকর্মীরা ছিলেন, তাদের অর্থের রক্ষকও ছিলেন মা। মা বলতেন ‘আমানতের জিনিস যোতন’ করা লাগে। অর্থাৎ, অন্যের গচ্ছিত জিনিস সংরক্ষণে বেশি যত্নবান হতে হয়।

আমাদের বাসায় দেখেছি বাসায় কেউ এলে তাঁকে কিছু না কিছু না খাইয়ে যেতে দিতেন না। এমনকি মায়ের পুরোনো গৃহকর্মী ‘রাজুর মা’ তাঁর কাজ শেষে প্রতিদিন ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে দেখা করতে আসতেন। তাঁর জন্য প্রতিদিন বরাদ্দ ছিল এক কাপ চা ও একটু মুড়ি বা বিস্কিট। মা যখন হাসপাতালে, সে সময় মাকে যারা দেখতে আসতেন, তাঁদের কিছু খাওয়াচ্ছি না বলে মা আমাদের ওপর খুব রেগে যেতেন।

আমার মায়ের হাতে আমরা ভাইবোনেরা কখনো মার খাইনি। মায়ের তাকানোতেই আমরা বুঝে নিতাম, মা অসন্তুষ্ট হচ্ছেন। যদি‑বা না বুঝতাম, উনি তখন আমাদের ‘তুমি’ সম্বোধন করতেন। তাঁকে সেই ‘তুমি’ থেকে ‘তুই’ সম্বোধনে ফিরিয়ে আনতে আমাদের ব্যবহার ঠিক করতে হতো। এ রকম অনেক কাহিনি–লিখে শেষ করা যাবে না।

আগেই বলেছি, মা প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার সুযোগ পান নাই। কিন্তু আমাদের বাসায় সব সময় সমকালীন সাহিত্য পত্রিকা আসত। দুপুরবেলায় মা সেগুলো আগ্রহের সঙ্গে পড়তেন। এ ছাড়া লাইব্রেরি থেকে নিয়মিত বই আনতেন। যত্ন করে পড়ে ফিরিয়ে দিয়ে আবার বই আনতেন। মায়ের বই পড়ার ও জানার আগ্রহ আমাদেরও আকৃষ্ট করত। প্রতিদিনের পত্রিকাও নিয়মিত পড়তেন আমাদের মা।

যেহেতু আমরা ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি, মাকে ঘিরেই ছিল আমাদের জীবন। মা আমাদের শিখিয়েছেন সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে। ছোটবেলায় আমাদের আরও অনেক ভাইবোনের সঙ্গে আমরা এক বাসায় থাকতাম। আমাদের কারণে অন্যদের যেন কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, সে বিষয়ে মা সব সময় পরামর্শ দিতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের কাজ আমাদের করতে হতো। ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনা ও বড়দের কথা পালন করতে হতো।

এভাবে আমাদের মা আমাদের মধ্যে মমত্ববোধ, দায়িত্ববোধ, সামাজিক দায়দায়িত্বের পাশাপাশি সকলের প্রতি সমমর্যাদাবোধ তৈরির চেষ্টা করেছেন। অহংবোধ ও অন্যায়ভাবে কোনো কিছু অর্জনকে মা ঘৃণা করতেন।

সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো– মেয়েদের শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন। তিনি মাত্র ৩০ বছর বয়সে যে সংকটে পড়েন, সেখান থেকে তাঁর অভিজ্ঞতা– মেয়েদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার বিকল্প নাই। তার জন্য প্রয়োজন পড়াশোনা। জীবনের সমগ্র শক্তি দিয়ে তিনি আমাদের ছয় ভাইবোনকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। আমাদের উন্মুক্ত পৃথিবীতে অন্বেষণের জন্য প্রস্তুত করেছেন, নিজের জীবনের সুখ‑স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে।

আমাদের মা আমাদের ছেড়ে গেছেন ২০০১ সালের ৯ আগস্ট। কিন্তু আমার মনে হয়, মা আজও আমাদের জড়িয়ে আছেন, ছড়িয়ে আছেন আমাদের প্রতিদিনের জীবনে যাপনে।

লেখক: মানবাধিকারকর্মী ও লেখক

পৃথিবীর জনসংখ্যার মোট ওজনের সমান প্লাস্টিক প্রতিবছর উৎপাদিত হয় (সূত্র: আর্থডে)। যদি বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক ব্যবহারের ধারা অব্যাহত থাকে, তবে ২০৫০ সালের ভেতর ১,১০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হবে।...
বিবিএস শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব নারীদের মধ্যে ২৬.২ শতাংশ এখন কৃষি ও এর উপখাতে (যেমন হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু, মৎস্য ও উদ্যানতাত্ত্বিক চাষাবাদ) কর্মরত, যেখানে পুরুষের অংশগ্রহণ...
আমার মা’র পক্ষে রাজনীতিতে আগ্রহী হওয়ার কথা ছিল না। তিনি হনও-নি, কিন্তু বিদ্যমান রাজনীতির ঝাপ্টা তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে বৈকি, বৃক্ষ যেমন সহ্য করে ঝড়কে। রাষ্ট্রের উত্থানপতন দেখেছেন, টের পেয়েছেন,...
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যায় বর্তমানে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। সেই ২০২২ সাল থেকেই বেশি। একটি দেশের অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক বিতর্কিত করে, দমন করার চেষ্টা করে, কেবলই পুরুষের যৌনবস্তু...
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার আবারও হুমকি দিয়েছেন যে, ব্রিকস গ্রুপের দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানির ওপর তিনি ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, যদি এই দেশগুলো প্রকৃত...
এর আগে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও তিন টি-টোয়েন্টি ম্যাচের একটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিল আফগানিস্তান। ওই সময় খেলোয়াড়দের ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের...
শুরু হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ‘জাতীয় সমাবেশ’। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আজ শনিবার সকাল শুরু হয়েছে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা। পরিবেশন হচ্ছে হামদ ও নাত। মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে দুপুর ২টায়। 
অ্যাক্রোফোবিয়া হলো উচ্চতা বা উঁচু জায়গার প্রতি তীব্র এবং অযৌক্তিক ভয়। এটি শুধু পাহাড়, উঁচু ভবন বা ছাদে ওঠার সময় নয়, এমনকি কখনও কখনও সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময়ও ঘটতে পারে। এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি...
লোডিং...
পঠিতনির্বাচিত

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.