আমেরিকার রাস্তায় দেখা গেল ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান টেসলা’র চালকবিহীন ট্যাক্সি পরিষেবা ‘রোবোট্যাক্সি’। টেক্সাসের অস্টিন শহরের সাউথ কংগ্রেস এলাকায় গত রোববার (২২ জুন) সীমিত পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে ‘রোবোট্যাক্সি’ সেবা দিয়েছে টেসলা।
এই পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল) ‘রোবোট্যাক্সি’ পরিষেবায় ব্যবহার করা হয়েছে টেসলার ১০টি ‘মডেল ওয়াই’ স্ব-চালিত (সেলফ-ড্রাইভিং) যান। অর্থাৎ, কোনো চালক ছাড়াই চলেছে এই গাড়িগুলো। তবে পরীক্ষামূলক এই সেবায় চালকের আসন ফাঁকা থাকলেও যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চালকের পাশের আসনেই ছিলেন টেসলার তরফ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন সেফটি মনিটর বা নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক।
প্রাথমিকভাবে টেসলার তরফ থেকে আমন্ত্রণ জানানো নির্দিষ্ট কয়েকজন যাত্রীকেই এই সেবা প্রদান করা হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে প্রাপ্ত এই সেবা উপভোগ করতে যাত্রীদেরকে ৪ দশমিক ২০ ডলার করে ভাড়া দিতে হয়েছে বলেও জানা গেছে।
বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের বহুল-আকাঙ্ক্ষিত প্রকল্প এই ‘রোবোট্যাক্সি’ পরিষেবা। তাঁর বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে এই প্রকল্পের সাফল্য-ব্যর্থতার ওপর। স্বাভাবিকভাবেই রোবোট্যাক্সি’র ট্রায়াল শুরু হওয়ায় উচ্ছ্বসিত ইলন মাস্ক।
নিজের মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে মাস্ক রোবোট্যাক্সি’র পরীক্ষামূলক সেবা চালুর মুহূর্তটিকে ‘এক দশকের কঠোর পরিশ্রমের ফল’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘টেসলার নিজস্ব এআই চিপ ও সফটওয়্যার টিম একেবারে শূন্য থেকে গড়ে তোলা হয়েছিল।’
রোববার রোবোট্যাক্সি’র পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল) সেবা চালুর পর এতে অংশ নেওয়া সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা নিজেদের অভিজ্ঞতার ভিডিও শেয়ার করতে শুরু করেন এক্সের মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
শেয়ার করা ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, যাত্রীরা অ্যাপের মাধ্যমে নিজেরাই রোবোট্যাক্সি সেবা নিতে রিকোয়েস্ট (অনুরোধ) পাঠিয়েছেন। সে অনুযায়ী যাত্রীদের কাছে পৌঁছে গেছে টেসলার মডেল ওয়াই তথা রোবোট্যাক্সি। এরপর যাত্রীরা ট্যাক্সিতে চড়ার পর, নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই রওয়ানা হয় গাড়ি। পুরো বিষয়টি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হলেও এটা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি চালকের পাশের আসনে বসা সেফটি মনিটরের হাতে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ কতটা ছিল।
সার্বিকভাবে পরীক্ষামূলক এই ‘রোবোট্যাক্সি’ সেবা চালু করা হয় সীমিত পরিসরে। অস্টিনের সাউথ কংগ্রেস এলাকার নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল টেসলার এই পরিষেবা। নিরাপত্তার স্বার্থে রোবোট্যাক্সি’র পুরো কার্যক্রমই সাবধানতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে কতটা সফল ছিল ‘রোবোট্যাক্সি’ ট্রায়াল?
প্রাথমিকভাবে বলতে গেলে, সফলতার সাথেই শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক ‘রোবোট্যাক্সি’ পরিষেবা। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা যাত্রীদের ভিডিও’তে দেখা গেছে, সাইরেন বাজিয়ে পেছন থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্সকে জায়গা করে দিতে রাস্তা ছেড়ে দিয়েছে রোবোট্যাক্সি। শুধু তাই নয়, রাস্তায় চলে আসা পথচারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সঠিক সময়ে ব্রেকও কষেছে এআই প্রযুক্তির ক্যামেরা-নির্ভর রোবোট্যাক্সি।
কবে নাগাদ আরও বড় পরিসরে দেখা যাবে ‘রোবোট্যাক্সি’?
‘রোবোট্যাক্সি’ পরিষেবার শুরুটা ভালো হলেও মাস্কের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অচিরেই অস্টিনের পাশাপাশি অন্যান্য শহরে এর পরীক্ষামূলক সেবা চালু হওয়ার সম্ভাবনা কমই। অন্তত এমনটাই ধারণা ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞদের।
আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে স্ব-চালিত যান বা সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ির পরিষেবা পরিচালনায় নীতিমালা সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে কোথাও কোথাও সেলফ-ড্রাইভিং গাড়িকে মান্যতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন আইনও। এই যেমন আগামী সেপ্টেম্বরে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যেই চালু হতে যাচ্ছে এমন এক আইন যেখানে সেলফ-ড্রাইভিং বা স্ব-চালিত গাড়ির পরিষেবা পরিচালনা করতে হলে টেক্সাসের ডিপার্টমেন্ট অব মোটর ভেহিকল থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
মাস্কের টেসলাও যুক্ত হলো চালকবিহীন ট্যাক্সি সার্ভিসে
অটোনোমাস বা স্বয়ংচালিত গাড়ির পরিষেবায় সক্রিয় আছে গুগলের ওয়েমো, অ্যামাজনের জুক্স, চীনের বাইডু’র অ্যাপোলো, এবং পনি এআই ও উইরাইডের মতো সেলফ-ড্রাইভিং প্রযুক্তির গাড়ি। এবারে এ তালিকায় যুক্ত হলো ইলন মাস্কের টেসলা’র রোবোট্যাক্সিও। এখন দেখার বিষয়, স্ব-চালিত গাড়ির বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় কতটা সাফল্য পায় মাস্কের টেসলা।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, এক্স