বিশ্বকাপে ইতিহাসে নিজেদের তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের কাছে হারটা হয়তো অতটা অপ্রত্যাশিত নয়, গত মার্চে ঘরের মাঠেই তো ইংলিশদের কাছে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। তবে এত বড় ব্যবধানে হার হয়তো প্রত্যাশা করেননি কেউ। কেন এভাবে হারল বাংলাদেশ। চলুন দেখে নেওয়া যাক কারণগুলো-
উইকেট বুঝতে না পারা
ধর্মশালার উইকেট প্রথম ম্যাচেই বোকা বানিয়েছিল সবাইকে। সেদিন সেটা বুঝতে পেরে দ্রুত পরিকল্পনা বদলে ফেলেছিলেন সাকিব। আজ ধর্মশালার উইকেট দেখে মনে হয়েছিল পেসারদের অসুবিধা হবে এবং রান তোলা কঠিন হবে। ওদিকে বাংলাদেশ ভেবেছিল ঠান্ডা আবহাওয়ায় পেসাররা উইকেটের সাহায্য পাবেন। একই কথা ভেবে ফিল্ডিং নিতে চেয়েছিল ইংল্যান্ডও। কিন্তু টসে হেরে যাওয়ায় ব্যাটিংয়ে নেমে উল্টো লাভ হয়েছে তাদের।
ডেভিড মালানের অন্যরূপ
মিরপুরের কঠিন উইকেটেই মার্চে ম্যাচ জিতিয়ে ফিরেছেন মালান। অন্য ব্যাটসম্যানরা যখন টিকে থাকতেই ব্যর্থ হচ্ছিল, তখন রক্ষণাত্মক মালান পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি। আর আজ ধর্মশালায় দেখা গেল অন্য মালানকে। জনি বেয়ারস্টো যেখানে একটু রক্ষণাত্মক খেলেছেন, সেখানে মালান শুরু থেকেই আগ্রাসী। বাংলাদেশের পেসারদের থিতুই হতে দেননি। বহুদিন পর শুরুর দিককার মালানকে দেখা গেল ওয়ানডেতে। মালানের কারণেই বাংলাদেশের স্পিনাররা ম্যাচে প্রভাব ফেলার সুযোগ পাননি।
বাংলাদেশের অতিরক্ষণাত্মক চিন্তা
মাহমুদউল্লাহকে বসিয়ে আরেকজন বোলার নেওয়ার চিন্তাটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। শেখ মেহেদী হাসান ৪ উইকেটও পেয়েছেন। তবু ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ ও ধর্মশালার উইকেট বিবেচনায় তাঁর বদলে আজ নাসুম আহমেদই বেশি কার্যকর হতেন। ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে মালান ও কারেন ছাড়া আর কোনো বাঁহাতি ছিলেন না। কিন্তু আটে নাসুমের চেয়ে মেহেদীর ব্যাটিংটাই দলের কাছে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
সিলেবাসের বাইরের টপলি
প্রথম ম্যাচে তিন পেসার খেলানো ইংল্যান্ড যে প্রথম ম্যাচে ধর্মশালায় স্পিনারদের রাজত্ব করতে দেখার পরও মঈন আলীকে বসিয়ে রিস টপলিকে নামাতে পারে, এটা সম্ভবত ভাবতে পারেনি বাংলাদেশ। এই দীর্ঘদেহী বাঁহাতি পেসারের হালকা মুভমেন্ট ও বাড়তি বাউন্সে বাংলাদেশের টপ ও মিডল অর্ডারের সবাই অস্বস্তিতে ছিলেন। প্রথম তিন উইকেট তো পেয়েছেনই, মুশফিককেও আউট করেছেন টপলি।
ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা
তিনে নাজমুল শান্ত, চারে সাকিব, পাঁচে তাওহীদ হৃদয়, ছয়ে মুশফিক। বিশ্বকাপের আগে গত ছয় মাস এভাবেই খেলেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে এমনিতেই লাইনআপে পরিবর্তন এসেছে। তামিম ইকবাল চোটের কারণে না থাকায় তানজিদ তামিম ওপেনিংয়ে। এরপর বাংলাদেশের লাইনআপ গোছানোই থাকার কথা। কিন্তু প্রথম ম্যাচে সে লাইনআপ বদলানো হলো পরিস্থিতির দাবি মানতে। মিরাজ নামায় শান্ত পেছালেন, আর হৃদয় ছয়েও নামার সুযোগ পেলেন না।
আজ পরিস্থিতির কোনো দাবি ছিল না, তবু মিরাজকে নামানো হলো পাঁচে, আর হৃদয়কে নামানো হলো সাতে। অথচ ম্যাচ পরিস্থিতিতে তাঁরা নিজেদের স্বাভাবিক অবস্থানে নামলেও কোনো ক্ষতি হতো না বাংলাদেশের, বরং ছন্দে না থাকা ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস ফেরানোটা সহজ হতো। তা না হয়ে উল্টো চাপ বাড়ল, আর তাতেই হারের ব্যবধান হলো ১৩৭ রান।