ফিল্ডিংয়ে সেরা দলের তালিকা করলে ওপরের দিকেই থাকে নিউজিল্যান্ডের নাম। কিন্তু চলতি বছর যেন ফিল্ডিংটাই ভুলে গেছে কিউইরা। এ বছর এখন পর্যন্ত টেস্টে ১০৯ ক্যাচ মুঠোবন্দী করার বিপরীতে ৩৫টি ক্যাচই হাত ফসকে বেড়িয়েছে নিউজিল্যান্ডের। অর্থাৎ মোট ওঠা ক্যাচের ৭৫.৭ শতাংশ ধরতে পেরেছেন কিউই ফিল্ডাররা। টেস্টে বাজে ফিল্ডিংয়ের পারফরম্যান্সে এ বছর নিউজিল্যান্ডের নিচে আছে শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৭৩.০৭%)।
বছর জুড়ে বাজে ফিল্ডিং করা নিউজিল্যান্ড আজ ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের দ্বিতীয় দিনেই ছেড়েছে ছয়টি ক্যাচ! এর মাশুলও দিতে হয়েছে তাঁদের। এর মধ্যে এক হ্যারি ব্রুকই ক্যাচ দিয়ে জীবন পেয়েছেন চারবার। এ সদ্ব্যবহারও করেছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান। অনেকটা ওয়ানডে সুলভ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি (১৬৩ বলে ১৩২ রান) করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন। আর প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের ৩৪৮ রানের বিপরীতে ৫ উইকেটে ৩১৯ রানে দিন শেষ করেছে ইংল্যান্ড। ২৯ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিন শুরু করবে সফরকারীরা।
নিউজিল্যান্ডের ক্যাচ মিসের প্রদর্শনীর দিনে রেকর্ড বইয়ে উঠেছে জো রুটের নাম। ক্যারিয়ারের ১৫০তম টেস্ট খেলতে নামা ইংলিশ ব্যাটসম্যান মাইলফলকের ম্যাচে প্রথম ইনিংসে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নিয়েছেন। ৪ বল খেলে নাথান স্মিথের বলে আউট হয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেছেন।
লাল বলের ক্রিকেটে এটি রুটের ১৩তম ডাক হলেও বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে এটি ইংলিশ ব্যাটসম্যানের ৮ম শূন্য। এর মধ্য দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চালুর পর টেস্টে সবচেয়ে বেশি শূন্য রানে আউট হওয়া ব্যাটসম্যান হয়ে গেলেন রুট। ছাড়িয়ে গেলেন বিরাট কোহলি ও স্টিভেন স্মিথকে।
ক্যারিয়ারের ১৫০তম টেস্টে আউট হওয়া ব্যাটসম্যান রুট একা নন। এর আগে ২০০২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দেড় শ তম টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম বলে আউট হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি স্টিভ ওয়াহ। এর আট বছর পর অ্যাডিলেডে এ কীর্তিতে নাম ওঠে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের। ১৫০তম টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বলেই আউট হয়েছিলেন তিনি। অবশ্য এদিক থেকে কিছুটা ভাগ্যবান রুট। তিনি আউট হয়েছেন চতুর্থ বলে!
৮ উইকেটে ৩১৯ রানে দিন শুরু করা নিউজিল্যান্ড শেষ দুই ব্যাটসম্যান নিয়ে আজ স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পেরেছে ২৯ রান। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ইংলিশরা। ইনিংসের চতুর্থ বলে বিদায় নেন ওপেনার জ্যাক ক্রলি (০)। দলকে ৪৩ রানে রেখে নাথান স্মিথের বলে টম ব্ল্যান্ডেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন জ্যাকব বল (১০)। একই ওভারে রুটকেও বোল্ড করেন নাথান। আরেক ওপেনার বেন ডাকেট একবার জীবন পেলেও ফিফটি থেকে ৪ রান দূরে থাকতে কনওয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন।
৭১ রানে ৪ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড তখন প্রথম ইনিংসে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কায়। এমন অবস্থায় সফরকারীদের হাল ধরেন হ্যারি ব্রুক। তাঁকে দারুণ সঙ্গ দেন ওলি পোপ। দুজনের পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১৫১ রান যোগ হয় স্কোরবোর্ডে। দলীয় ২২২ রানে গ্লেন ফিলিপসের দুর্দান্ত এক ক্যাচে থামে পোপের ৯৮ বলে ৭৭ রানের ইনিংস। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে শূন্যে ভাসা অবস্থায় এক হাতে যেভাবে ক্যাচটি তালু বন্দী করেছেন ফিলিপস, অনেকদিন চোখে লেগে থাকবে নিশ্চিত!
পোপ ফিরে গেলেও সেঞ্চুরি আদায় করেন ব্রুক। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে বেন স্টোকসের সঙ্গে ৯৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দিন শেষ করেন। দিন শেষে ১৩২ রানে অপরাজিত থাকা ব্রুক অবশ্য চারবার (১৮, ৪১, ৭০ ও ১০৬ রানে) জীবন পেয়েছেন। এছাড়া ৩৭ রানে অপরাজিত থাকা স্টোকস জীবন পেয়েছেন ৩০ রানে থাকার সময়।