এবারের আইপিএলে ব্যাট হাতে রোহিত শর্মার শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। নিজেদের প্রথম ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ডাক মারেন মুম্বাইয়ের ডানহাতি ওপেনার। সে ধাক্কার পর আরও ৫ ম্যাচ খেলেছেন, কিন্তু ব্যাট হাতে আর ছন্দ খুঁজে পাননি রোহিত।
অবশ্য প্রতিম্যাচে রানের গ্রাফটা বেড়েছে, প্রথম ম্যাচের ডাকের পর একে একে রোহিতের নামের পাশে যোগ হয়েছে ৮, ১৩, ১৭, ১৮ ও ২৬ রানের ইনিংস। সবমিলিয়ে ৬ ম্যাচে ১৩.৬৬ গড়ে ৮৬ রান ভারতীয় অধিনায়কের নামের পাশে বড্ড বেমানান! রোহিতের বাজে ফর্মের প্রভাব পড়েছে দলের পারফরম্যান্সেও। ৭ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের সাতে মুম্বাই।
রোহিতের ছন্দ খুঁজে না পাওয়া নিয়ে সমালোচনা কম হচ্ছে না। রোহিতের নেতৃত্বে মুম্বাই ১১ বছরে পাঁচবার শিরোপা জিতলেও সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় একাদশে রোহিতের জায়গা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
গত কয়েক বছরে রোহিতের পারফরম্যান্সের কতটা অবনতি হয়েছে, আর সেটার পেছনের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে ইংলিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। পাঠকদের উদ্দেশ্যে সেটা তুলে ধরা হলো:
আইপিএলে রোহিতের পারফরম্যান্সের অবনতির চিত্র:
বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, আইপিএলে রোহিতের গড় রান ২৯.৩০। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে ওপেনিংয়ে তাঁর গড় নেমে এসেছে ২২.৮৯! ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি এ লিগে এ সময় ওপেনার হিসেবে অন্তত ২০ ম্যাচ খেলেছেন, এমন ২১ ব্যাটসম্যানের মধ্যে এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন গড়।
আগেই বলা হয়েছে, চলতি মৌসুমে রোহিতের গড় ১৩.৬৬। এর সঙ্গে যদি গত মৌসুমের সর্বশেষ তিন ম্যাচের পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হয়, তাহলে এ গড় ১২.৮৯ এ নেমে আসে।
মজার বিষয়, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খরা গেলেও দেশের জার্সিতে তুলনামূলক উজ্জ্বল রোহিত। ২০২২ সাল থেকে হিসেব করলে, এ সময় আইপিএলে গড় ২২.৮৯ হলেও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২৯.৩৪ গড়ে রান করেছেন ডানহাতি এ ওপেনার।
পুরো আইপিএল ক্যারিয়ার বিবেচনা করলে, রোহিত ওপেনিংয়ের চেয়ে অন্য পজিশনে তুলনামূলক ভালো করেছেন। ইনিংসের শুরুতে নেমে যেখানে তাঁর গড় ২৭.৭৪, সেখানে চার ও পাঁচ নম্বর পজিশনে তাঁর গড় যথাক্রমে ৩২.৭ ও ৩৩.১১।
আইপিএলে রোহিতের সাম্প্রতিক দুরাবস্থা:
রোহিতের এমন বেহাল পারফরম্যান্সের পেছনে সম্ভাব্য কিছু কারণ খুঁজে বের করেছে বিসিবি। ইংলিশ সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুসারে, পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারে পেসারদের বিরুদ্ধে রোহিতের গড় ছিল ৩৬.৪৭, ২০২২ সাল থেকে কমতে শুরু করে সেটা এখন ২৪.৩৯ এ নেমে এসেছে।
অবস্থা এতটাই নাজুক যে, ব্যাটিংয়ে নেমে যেন পাওয়ার প্লে-ই পেরোতে পারছেন না রোহিত। ২০২৩ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৩৬ ইনিংস ব্যাটিং করে পাওয়ার প্লে পেরোতে পেরেছেন মোটে ১২ বার। আর এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রতিবারই আউট হয়েছেন প্রথম পাওয়ার প্লে-শেষ হওয়ার আগেই।
আগে রোহিত ৫১% রান তুলতেন লেগ সাইডে। অন্যদিকের সঙ্গে মোটামুটি সামঞ্জস্য ছিল রান তোলার ক্ষেত্রে। বর্তমানে রান তোলার ক্ষেত্রে লেগ সাইড নির্ভর (৫৯%) হয়ে পড়ছেন ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান।
ব্যাটিংয়ের সময় আউট সুইং ডেলিভারিতে এখন আর সুবিধা করতে পারছেন না রোহিত। ২০২২ সালের আগে ইনসুইংয়ের বিপক্ষে রোহিতের গড় ছিল ২৭, সেখানে আউটসুইংয়ের রান তুলতেন প্রায় ৫০ এর কাছাকাছি গড়ে। কিন্তু এই সময়ের পর দেখা গেছে, ইনসুংয়ের ২৭ থেকে গড় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪, আর আউট সুইংয়ের বিপরীতে গড় নেমে এসেছে ১৯-এ।
আগে ডানহাতি আউটসুইংগারদের বিপক্ষে আগে গড় ছিল ৬৩, সেটা কমে এখন ২০ এরও নিচে (১৬) নেমেছে।
শুধু ডানহাতি না, বাঁহাতি পেসারদের বিপক্ষেও আজকাল ভালো করতে পারছেন না মুম্বাইয়ের সাবেক অধিনায়ক। ২০১৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বাঁহাতি পেসারদের বিপক্ষে রোহিতের গড় ছিল ২৮.৮৫। ওই ৮ বছরে মোট খেলা বলের ২৩ শতাংশ ছিল বাঁহাতি পেসারদের বিরুদ্ধে। তাতে উইকেট দিয়েছেন ৭বার। অন্যদিকে ২০২২ সাল থেকে পরের সময়টাতে মোটে ১৩% বলে বাঁহাতি পেসারদের মুখোমুখি হয়েই ৮বার আউট হয়েছেন তিনি। এ সময়টাতে রান তুলেছেন মোটে ২২.৩৭ গড়ে।
পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, পেসার ডানহাতি হোক বা বাঁহাতি- রোহিত ধুঁকছেনই।
স্পিনারদের বিপক্ষেও রোহিতের পারফরম্যান্সের গ্রাফ নিচের দিকে নামছে। স্পিনারদের বিপক্ষে আগে ৩৪.৬৮ গড়ে রান তুলতেন রোহিত। ২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে, সেটা নেমে এসেছে ১৫.৩৩ এ। লেগ স্পিনারদের বিপক্ষে সমস্যাটা আরও প্রকট হয়েছে- ২০২২ থেকে মোটে ৭.৮৮ গড় রোহিতের।
সুইপ শটে যে রান তুলবেন, সেখানেও সুবিধা করতে পারছেন না রোহিত। ২০১৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৭% ডেলিভারিতে সুইপ খেলতেন। আর সেটা খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন ৮বার। অন্যদিকে ২০২২ সাল থেকে ২১% শটেই সুইপ খেলেছেন মুম্বাই ব্যাটসম্যান, এ সময় মাত্র ১৫.৫ গড়ে রান তুলে আউট হয়েছেন ৬ বার।
শুধু আইপিএল নয়, সুইপে রোহিত কোনো সংস্করণেই সুবিধা করতে পারছেন না। সবমিলিয়ে সর্বশেষ ৩০বার সুইপ করতে গিয়ে ৬ বারই আউট হয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক। আর এ সময় তার ব্যাটিং গড় ছিল মোটে ৭!
পেসার কিংবা স্পিনার, এমনকি শট নির্বাচন- রোহিতের পারফরম্যান্সের যে বেহাল দশা, তাতে রোহিতের একটা লাইন মানানসই হতে পারে, ‘সর্ব অঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দেব কোথা!’