বাংলাদেশ কি দুই শ পেরোতে পারবে?
গত কিছুদিনে টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অবস্থা এমনই হয়ে গিয়েছিল যে, এই প্রশ্নটাই সবার আগে উঠে এসেছে বারবার। এই টেস্টের আগে সর্বশেষ ১৬ ইনিংসে ৯ বারই একটা দল ২০০-র নিচে অলআউট হয়ে গেলে প্রশ্নটা ওঠা অস্বাভাবিক নয়।
২০০ রান তুলতেই যেখানে কষ্ট হয়ে যায়, সে দলের কাছে ৩০০-র প্রত্যাশা আর কী থাকবে? সর্বশেষ যে ১৬ ইনিংসের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো, সেখানে ৩০০-র ওপরে স্কোর ছিল কেবল একবার – গত অক্টোবরে মিরপুরে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে।
৩০০-ই যেখানে বিরল, ইনিংসে ৪০০ রান তো স্বপ্নের মতো! চট্টগ্রামে আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে সে স্বপ্ন বাংলাদেশ ছুঁতে পেরেছে – গত আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে ৫৬৫ রানের ইনিংসের পর এই প্রথমবার।
সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরিতে গতকাল শুরুটা ভালো পেলেও শেষ সেশনে বাংলাদেশ পথ হারিয়ে ফেলেছিল। ২১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আধা ঘণ্টার মধ্যে ৩/২৫৯ থেকে বাংলাদেশ হয়ে পড়ে ৭/২৭৯। শেষ পর্যন্ত দিন শেষ করে ৭ উইকেটে ২৯১ রান নিয়ে। তখন শঙ্কা ছিল, বাংলাদেশ না আজ দিনের শুরুতেই কোনোরকমে ৩০০ পেরোতে না পেরোতে গুটিয়ে যায়!
সে শঙ্কা পেরিয়ে বাংলাদেশ যে শেষ পর্যন্ত অলআউট হওয়ার আগে ৪৪৪ রানে নিয়ে গেছে, লিডটাকে নিয়ে গেছে ২১৭ রানে, সেটা মেহেদি হাসান মিরাজের সৌজন্যে। গতকাল দিন শেষে অপরাজিত ছিল ১৬ রান নিয়ে, আজ দুবার বেঁচে গেলেও ইনিংসটাকে সেঞ্চুরিতেই রূপ দিয়ে ফেলেছেন মিরাজ! চার বছর পর টেস্টে তাঁর প্রথম সেঞ্চুরি - ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৩ রানের ইনিংসটা ছিল টেস্টে তাঁর প্রথম সেঞ্চুরি!
মিরাজের পাশাপাশি অবশ্য তানজিম হাসান সাকিবের কথাও বলতে হবে। অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা সাকিব দশে নেমে ৪১ রানের দারুণ একটা ইনিংস খেলেছেন, নবম উইকেটে মিরাজের সঙ্গে তাঁর ৯৬ রানের জুটিটাই বাংলাদেশকে ৩৫০-র পর ৪০০-ও পার করিয়ে দিয়েছে!
সকাল থেকেই গুমোট হয়ে ছিল চট্টগ্রামের আকাশ। বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব থাকলেও নির্ধারিত সময়েই শুরু হয়েছিল দিনের খেলা। কিন্তু ৩ ওভার পুরো শেষ হওয়ার আগেই বৃষ্টি নামে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়াম অঞ্চলে।
২৯১ রানে ৭ উইকেটে দিন শুরু করা বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডটা ততক্ষণে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৩। প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের ২৭৭ রানের বিপরীতে বাংলাদেশের লিড তখন ৭৬।
সে যাত্রায় অবশ্য খুব বেশি সময় নষ্ট করতে পারেনি বৃষ্টি। ১৭ মিনিট পরেই আবার শুরু হয় প্রথম সেশনের খেলা। তাতে মধ্যাহ্নভোজ পিছিয়ে দেওয়া হয় ১৫ মিনিট। সেশন শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আবারও বৃষ্টি নামে সাগরিকায়। ততক্ষণে টেস্টের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ।
সেঞ্চুরির লক্ষ্যে ছুটতে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ ও তানজিম হাসান সাকিবের অবিচ্ছিন্ন ৬৩ রানের জুটিতে ভর করে ৮ উইকেটে ৪০৪ রানে মধ্যাহ্নবিরতিতে যায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের লিডও বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৭ রানে।
তবে দ্বিতীয় দফাতেও বৃষ্টি খুব বেশি দাপট দেখাতে পারেনি। এ পর্বে ১৫ মিনিট দেরিতে শুরু হয় দ্বিতীয় সেশনের খেলা। সাকিব শেষ পর্যন্ত মাধেভেরেকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে গেছেন। তবে মিরাজ এখনো টিকে আছেন।
সকালে উইকেটের পেছনে একবার ক্যাচ দিয়েছিলেন মিরাজ, তবে তাফাদজাওয়া সিগা সেটা ধরতে পারেননি। এরপর ৮১ রানের সময়ে মিরাজের বিরুদ্ধে এলবিডাব্লিউর আবেদনে আম্পায়ার আঙুল তুলে দিয়েছিলে, তবে রিভিউ নেন মিরাজ, যেখানে দেখা যায় বল ব্যাটে লেগেছে। শেষ পর্যন্ত ১৪৩তম বলে সিঙ্গেল নিয়ে মিরাজ পৌঁছে গেছেন সেঞ্চুরিতে (১১ চার ১ ছক্কায়)। শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের স্পিনার ভিনসেন্ট মাসেকেসার টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ইনিংসেই পঞ্চম শিকার হয়ে মিরাজ স্টাম্পড হতেই শেষ হলো বাংলাদেশের ইনিংস।
এর আগে দিনের প্রথম সেশনে জিম্বাবুয়ের বোলাররা অবশ্য খুব একটা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। ওই সেশনে বাংলাদেশ শুধু একটা উইকেট হারিয়েছে। আগের দিন ৩ উইকেট নেওয়া ভিনসেন্ট মাসেসকার বলের আউট হয়েছেন তাইজুল (২০)। ফেরার আগে মিরাজের সঙ্গে জুটি গড়ে স্কোরবোর্ডে ৬৩ রান যোগ করেন তাইজুল। বাংলাদেশের রান তখনো ৩৪২।
সেখান থেকে সাকিবের সঙ্গে মিরাজের দারুণ জুটিতে বাংলাদেশ পেয়ে গেল আকাঙ্খিত ৪০০-র দেখা। টেস্ট ইতিহাসে ১৫২ ম্যাচে ২৯৬ ইনিংসে যা এ নিয়ে বাংলাদেশ করতে পারল মাত্র ২৯ বার।