জার্মানি গত কয়েক বছরে ফুটবলে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে বটে। টানা দুটি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে বাদ পড়ল, ইউরোতেও সর্বশেষ দুই টুর্নামেন্টে একবার শেষ ষোলোতে আর একবার কোয়ার্টার ফাইনালে বাদ পড়েছে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়েও জার্মানির অবস্থান এই মুহূর্তে ১১। কিন্তু তাই বলে জার্মানির এত খারাপ দিন তো আসেনি যে অন্য দেশের খেলোয়াড়কে নিজেদের বলে চালিয়ে দিতে হবে!
তা-ও সেই খেলোয়াড় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স-ইংল্যান্ড বা পর্তুগাল-স্পেনের মতো দলের হলে কথা ছিল! গতকাল উয়েফা নেশনস লিগের নভেম্বরের দুই ম্যাচের দল ঘোষণায় যে খেলোয়াড়কে নিজেদের বলে স্কোয়াডে নাম দিয়ে ফেলেছে জার্মানি, তিনি খেলেন পুঁচকে লাটভিয়ার হয়ে! ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে লাটভিয়ার অবস্থান ১৩৭!
না, পুরো ব্যাপারটাই যে নিছক করণিক ভুল, সেটা বুঝতে তো কারওই সমস্যা হয় না। তবে গতকাল জার্মানির স্কোয়াড ঘোষণার পর এ নিয়ে বেশ হাস্যরস হয়েছে আর কী!
স্কোয়াড ঘোষণার পর সমর্থকদের অবস্থাটা একবার কল্পনা করুন – জামাল মুসিয়ালা, ফ্লোরিয়ান ভার্টশ, ইওশুয়া কিমিখ, কাই হাভার্টশ, আন্টোনিও রুডিগারদের পাশে কোথাকার কোন দারিও সিতসের নাম উঠে এল স্কোয়াডে! বয়সভিত্তিক পর্যায়ে ভালো করে সিনিয়র দলে সুযোগ পাওয়া কোনো নাম হওয়ার সুযোগও তো প্রযুক্তির এ যুগে আর তেমন নেই, এখন বয়সভিত্তিক পর্যায়ের খেলাও টিভি চ্যানেলে দেখানো হয়, সেখানে ভালো করা খেলোয়াড়দের নিয়ে মাতামাতি করার জন্য টুইটার-ফেসবুক তো আছেই!
কে এই সিতস – সে খোঁজ দ্রুতই পড়ে গেল। ঘেঁটেঘুঁটে জানা গেল, ২০ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড সিতস ইতালিয়ান ক্লাব পারমা থেকে এই মৌসুমে ধারে খেলতে গেছেন নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় স্তরের লিগের দল হেলমন্দ স্পোর্তে। জাতীয়তায় চোখ পড়তেই বোঝা গেল, গড়বড় হয়ে গেছে কোথাও। সিতস যে লাটভিয়ান! গত মাসে লাটভিয়ার সিনিয়র দলে অভিষেক হয়েছে তাঁর, জার্মানির আশপাশেও তাঁর নাম এসেছে শুধু যখন তিনি ২০২২ সালে লাটভিয়া অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে জার্মানির অনূর্ধ্ব-২১ দলের বিপক্ষে খেলেছিলেন।
ভুল শোধরাতে দেরি হলো না জার্মান ফেডারেশনের। দ্রুতই নামটি সরিয়ে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে ই-মেইলে জার্মান ফেডারেশন লিখেছে, তাদের ‘ডেটাবেইজে একটা টেকনিক্যাল ভুল হয়েছে।’ লাটভিয়ার অফিসিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) একাউন্ট অবশ্য মজা করতে ছাড়েনি। তারা পোস্টে লিখেছে, 'হেই জার্মানি, তোমাদের আগ্রহ দেখে ভালো লেগেছে, তবে দারিও সিতসের ফ্লাইট এরই মধ্যে রিগার (লাটভিয়ার রাজধানী) উদ্দেশে লিপিবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে।' ওই পোস্টের নিচে এক জিআইএফ কমেন্টে হাসির ইমোজি দিয়েছেন সিতস নিজেও।
সিতসের নাম চমকের শেষ রাখেনি, তবে এর বাইরে জার্মানি দলে চমকের কিছুই নেই। আগামী সপ্তাহে নেশনস লিগে বসনিয়া-হার্জেগোভিনা আর হাঙ্গেরির বিপক্ষে ম্যাচ দুটির দলে ডাক পেয়েছেন সব চেনা খেলোয়াড়ই। শুধু মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন চোটে থাকায় তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে দলে ডাক পেয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির তৃতীয় পছন্দের গোলকিপার, জার্মানি জাতীয় দলে কখনো খেলার সুযোগ না পাওয়া স্তেফান ওর্তেগা – এটাকেই যা বলার মতো ঘটনা বলা যায়।