কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে বিশ্বজুড়েই। নিত্যনতুন এআই টুলের আবির্ভাব এখন বলতে গেলে দৈনন্দিন বিষয় হয়ে উঠেছে। টেক্সট ও ইমেজে জেনারেট করার পাশাপাশি ইদানিং ভিডিও তৈরিতেও দারুণ পারদর্শী হয়ে উঠেছে এআই টুলগুলো। এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টও সময়ের সাথে সাথে মূলধারার কনটেন্ট হিসেবে মান্যতা পাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার থেকে অস্কার পুরস্কারের জন্যেও এআই জেনারেটেড সিনেমা উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) দ্য অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস এ সম্পর্কিত নতুন এক নিয়মে বলেছে, এআই ও অন্যান্য ডিজিটাল টুলের ব্যবহার অস্কারে মনোনয়ন পেতে সহায়কও হবে না, আবার প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করবে না।
অর্থাৎ, অস্কার আয়োজকরা এবার নিয়ম করেই জানিয়ে দিয়েছে যে, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি সিনেমাও অস্কারের সর্বোচ্চ পুরস্কার জয় করতে পারবে। এ বছর অস্কার পুরস্কার বিজয়ী বেশ কয়েকটি সিনেমা তৈরিতেও নেওয়া হয়ছে জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তির সহায়তা।
উল্লেখ্য, জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তিতে সাধারণ টেক্সট কমান্ড (প্রম্পট) দিয়ে তৈরি করে নেওয়া যায় টেক্সট, ছবি, অডিও ও ভিডিও কনটেন্ট।
প্রশ্ন হচ্ছে, এআই জেনারেটেড কনটেন্ট যদি অস্কার পায়, তাহলে মানুষের সৃজনশীলতার মূল্যায়ন কীভাবে, কতটা হবে? এ ক্ষেত্রে আয়োজকরা বলেছেন, এআই দিয়ে তৈরি সিনেমা অস্কারের জন্য বিবেচিত হলেও বিজয়ী নির্ধারণের ক্ষেত্রে মানুষের সম্পৃক্ততার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
অ্যাকাডেমি জানিয়েছে, জেনারেটিভ এআই টুল দিয়ে নির্মিত সিনেমাকে অস্কারের জন্য উপযুক্ত ঘোষণা করতে তাঁদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাউন্সিল সুপারিশ করেছে। এ জন্য অস্কারের যোগ্যতার মানদণ্ডে পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন তাঁরা।
এ ছাড়াও অস্কারে আরও কিছু পরিবর্তন নিয়ে এসেছে অ্যাকাডেমি। সোমবার (২১ এপ্রিল) ঘোষিত পরিবর্তিত নতুন নিয়ম অনুযায়ী, অ্যাকাডেমির সদস্যদেরকে এখন থেকে বিজয়ী নির্ধারণী চূড়ান্ত পর্বে ভোট দেওয়ার জন্য প্রতিটি বিভাগে মনোনীত সকল সিনেমা দেখতে হবে।
উল্লেখ্য, গত মাসে (মার্চে) আয়োজিত চলতি বছরের অস্কার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অ্যাড্রিয়েন ব্রডি ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেন। এরপরই সিনেমাতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এই সিনেমাটিতে চরিত্রের প্রয়োজনে অ্যাড্রিয়েন ব্রডিকে হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় কথা বলতে হয়। হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় তাঁর উচ্চারণ নিখুঁত করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে এআই প্রযুক্তি।
অস্কারে এআই’র কারসাজি অবশ্য এখানেই শেষ নয়। অস্কার বিজয়ী ‘এমিলিয়া পেরেজ’ সিনেমাটিতেও একই প্রকার ভয়েজ ক্লোনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যাতে করে গানের কণ্ঠস্বরকে আরও নিখুঁত করে তোলা যায়।
অস্কার পুরস্কারে এআই’কে মান্যতা দিয়ে অ্যাকাডেমির নতুন নিয়ম ঘোষণার প্রেক্ষাপটে একদিকে যেমন সিনেমাতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে, অন্যদিকে মূলধারার সৃজনশীল কনটেন্টের সাথে একই কাতারে উচ্চারিত হবে এআই জেনারেটেড কনটেন্টের কথাও। তবে এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট সৃজনশীলতার মানদণ্ডে ঠিক কোথায় থাকবে, এ প্রসঙ্গে চলা দীর্ঘদিনের বিতর্ক অচিরেই থামবে বলে মনে হচ্ছে না।
সূত্র: বিবিসি